শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ১২ ১৪৩১

অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পেছনে ‘ইন্ধন’ দেখছে সেনাবাহিনী

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২৪  


দেশজুড়ে বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার পেছনে উদ্দেশ্যমূলক ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ ইন্ধনদাতারা দেশকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন একথা বলেন। ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

 

 

এতে বলা হয়, সেনাবাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপের ফলে অনেক ঘটনা আগেই থামানো সম্ভব হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিশৃঙ্খলার জন্য তিন ধরনের মানুষের সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরেন কর্নেল ইন্তেখাব। তিনি বলেন, প্রথমত, চিহ্নিত অপরাধীরা যারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত। দ্বিতীয়ত, ইন্ধনদাতা, যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিস্থিতি জটিল করে তোলার চেষ্টা করছে। আর তৃতীয়ত, সাধারণ জনগণ, যেমন ছাত্র বা শ্রমিকরা, যারা অজান্তেই এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে।

 


সামাজিক মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান কর্নেল ইন্তেখাব। তিনি বলেন, ‘অনেকে না বুঝে উসকানিমূলক পোস্ট শেয়ার করছেন, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করছে। ইন্ধনদাতারা পরিকল্পিতভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি, সামাজিক মাধ্যমে কোনো তথ্য শেয়ার করার আগে যাচাই করে দেখার।’

 


গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনীর অভিযান পরিচালনার ফলাফলও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এই সময়ে ২৪টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৩৬৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১,৩২৮ জন সন্দেহভাজন অপরাধীকে।

 


পাহাড়ি অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএফ) বিরুদ্ধে বিশেষ যৌথ অভিযানে ১৭৯ জন সক্রিয় সদস্য এবং সহায়তাকারী গ্রেপ্তার হয়েছে। অভিযান থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, সামরিক সরঞ্জাম এবং আইইডি উদ্ধার করা হয়েছে।

 


সেনাবাহিনী জানায়, কেএনএফের হামলা এবং আইইডি বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ৭ জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন।

 


গত দুই সপ্তাহে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সেনাবাহিনী। তারা শিল্পাঞ্চলের ৪০টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং ১৮টি সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৬ টি, সরকারি অফিসে একটি, রাজনৈতিক কোন্দলে ৬টি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪০টি ঘটনাকে সামাল দিয়েছে।

 


ছাত্র ও শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রসঙ্গে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, ‘ছাত্ররাই অতীতে দেশের বড় পরিবর্তন এনেছে। তবে যখন তারা পরিস্থিতি না বুঝে কারও ইন্ধনে কাজ করে, তখন আমাদের বাড়তি সতর্ক হয়ে কাজ করতে হয়। আমরা চাই তারা তাদের দায়িত্ব সচেতনভাবে বুঝুক।’

 


সংবাদ সম্মেলনে যাত্রাবাড়ীতে রিকশাচালকদের সংঘাত এবং চট্টগ্রামে এক আইনজীবী হত্যাকাণ্ডে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, প্রতিটি ঘটনা আলাদাভাবে বিচার করতে হয়। তবে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত চলছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

 


সংবাদ সম্মেলনের শেষে কর্নেল ইন্তেখাব জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ইন্ধনদাতারা সবসময় ছিল, থাকবে। আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের প্ররোচনায় পা না দেওয়া। এই সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানানো হয়।’       এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর