আবাসিক এলাকায় ক্ষমতার জোরে চুনা ব্যবসা, পালিয়েছে চুনা শিল্পপতিরা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২১ এএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে দায়ের করা একাধিক হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জের চুনা শিল্পপতিদের। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। ক্ষমতা দেখিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আবাসিক এলাকায় চুনা কারখানা বসিয়ে মানুষের জীবন বিষাক্ত করে তুলেছিল তারা। এছাড়া এসকল ব্যবসায়ী অবৈধ জমি দখল, অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরির সাথে জড়িত ছিল।
তাছাড়া পাথরের স্তুপ করে গোটা এলাকায় অরাজকতা তৈরি, নিরাপত্তা বেষ্টনি ছাড়া পাথর বোঝাই ট্রাক অবাধে পরিবহণ করে গোটা এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরির নেপথ্যে ছিল তারা। এছাড়া চুনা ফ্যাক্টরিগুলোতে পাথর পুড়িয়ে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটালেও দেখার কেউ ছিল না। এখনো নানাভাবে চলছে একই কাজ। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালীদের মোটা সুবিধা দেয়ার কারণে এটি অত্যাধিক লাভজনক ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল।
আঙুল ফুলে কলাগাছও বনে গেছেন তারা। কেউ কেউ জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। আবার কেউ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে তারা সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নেয় এসব চুনা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ মালিক।
বিভিন্ন এ মামলায় এজাহার নামীয় আসামি হয়েছেন চুনা শিল্পপতি চাঁন মিয়া, আব্দুল হাই, আনোয়ার ইসলাম, ওমর ফারুক, খোরশেদ আলম, শহিদ হাসান বিটু ও শরীফসহ ১০ জনকে। শুধু চুনা কারখানার মালিকই নয় অনেকের ছেলে ও কারখানার ম্যানেজারকেও করা হয়েছে আসামি।
এরমধ্যে কারখানা মালিকদের মধ্যে খোরশেদ আলম নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি। অন্যদের মধ্যে কয়েকজন আওয়ামী লীগ সমর্থিত হলেও তাদের দলীয় কোন পদ নেই। তবে কাউন্সিলর ফারুক শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন এবং ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজনজানান, চুনা শিল্প থেকে মারাত্মক দূষণ ঘটিয়ে তারা আর্থিকভাবে ফুলে ফেপে উঠেছেন। মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাবেননি। জীবনযাত্রার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতি করেছেন ক্ষমতার প্রভাবে। তাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় এসব মালিকরা নিজেদের স্বার্থে শেখ হাসিনাকে সমর্থন যুগিয়েছেন। জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার ১৪ টি কারখানার মধ্যে ১০ টি কারখানা মালিককে করা হয়েছে হত্যা মামলার আসামি।
তবে কারখানা মালিক সূত্রে জানা গেছে, চুনা শিল্পে নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে সে দলের নেতারাই চাঁদাবাজি করেছে। চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় গত চারদলীয় জোট সরকার আমলে শরীফ লাইমসের মালিক সুন্দর আলীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। রনি লাইমসের মালিক চাঁন মিয়াকেও হত্যার উদ্দেশ্যে দুটি গুলি করেছিল। কিন্তু তিনি বেঁচে যান।
একই কারণে ২০০৮ সালে গুলি করে হত্যা করা হয় ভাই ভাই লাইমসের মালিক আবু তালেবকে। কারখানা মালিকরা বার বার সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ায় সবাই একজোট হয়ে চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। প্রায় ২ বছর বন্ধ থাকার পর কয়েকজন মালিকের যোগসাজশে ফের চাঁদাবাজি চালু হয়। গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতারা চাঁদা নিতেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, অন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেসব হত্যা মামলা হয়েছে তা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হবে। যারা অপরাধি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে নিরপরাধ কাউকে হয়রানী করা হবে না। এন. হুসেইন রনী /জেসি