গিয়াসউদ্দিনকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে ক্ষমা চাইলেন সেই নারী
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩১ এএম
রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে জেলা বিএনপির সভাপতির বিরুদ্ধে এবার পর্দার আড়াল থেকে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ উঠেছে মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে। তিনি এক নারীকে ভুল তথ্য দিয়ে গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে ভিডিও করিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
যদিও হেনা সরদার নামে ওই নারী না জেনে, না বুঝে ভিডিও করা তার ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন। এবং এ ঘটনার জন্য তিনি সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন।
গতকাল বিকেলের দিকে হেনা সরদার নামে মানবাধিকার কর্মী দাবি করা ওই নারী গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজে এসে জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং নেপথ্যের ঘটনাবলি নিয়েও বিশদ আলোকপাত করেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩নং ওয়ার্ডস্থ বিএনপি নেতা মামুন মাহমুদের বাড়ির পাশেই বসবাস করেন।
হেনা সরদার জানান, ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতা পরিচয়ে হাবিবের নেতৃত্বে ৩ নং ওয়ার্ডের একটি গ্যারেজ দখল করা হয়। ওই গ্যারেজটির মালিক তার বোন। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার তিনি মামুন মাহমুদের কাছেও বিচার নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মামুন মাহমুদ বারবারই জানিয়েছেন হাবিব তার লোক নন, গিয়াসউদ্দিনের লোক। আবার হাবিবদের সঙ্গে থাকা লোকজনও দাবি করেছেন তারা গিয়াসউদ্দিনের লোক।
তিনি আরও জানান, দখল করে নেওয়া গ্যারেজে মিলাদ পড়ানোকালিন বেশ কয়েকজনই ছিলেন যারা স্থানীয়ভাবে মামুন মাহমুদের কর্মী। বিষয়টি দেখে তিনি মামুন মাহমুদকে জানালে বিষয়টিকে তিনি এড়িয়ে গিয়ে জানান, তারা ওই রাস্তা দিয়ে আসছিলেন। সেখানে তারা অবস্থান করেননি।
হেনা সরদার দাবি করেন, যতবারই তিনি গ্যারেজটি উদ্ধারের জন্য মামুন মামহমুদের স্মরণাপন্ন হয়েছেন ততবারই তিনি দখলবাজদেরকে গিয়াসউদ্দিনের লোক দাবি করে এড়িয়ে গেছেন। যে কারণে এই নারী নিজেও তাদেরকে গিয়াসউদ্দিনের লোক দাবি করে ভিডিও করেন এবং সেখানে লুটপাটের সঙ্গে গিয়াসউদ্দিনের সম্পৃক্ততার কথাও তুলে ধরেন। যা তিনি ভুল করেছেন বলে গতকাল স্বীকার করেন এবং গিয়াসউদ্দিনের কাছে ছোট বোন হিসেবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এদিকে স্থানীয় বিএনপির নেতারা দাবি করেন, ৫ আগস্টের পর থেকে ৩নং ওয়ার্ডে ব্যাপক দখল লুটপাট শুরু হয়। এসব ঘটনার সঙ্গে মামুন মাহমুদের লোকজন সম্পৃক্ত। তারা শাহজালাল বাদলের কর্মীদের নিয়ে লুটপাট, দখল ও চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছেন।
অপরদিকে গতকাল ৩নং ওয়ার্ডস্থ মুক্তিনগর কবরস্থান এলাকাতে গিয়ে হাবিব সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি মামুন মাহমুদের একজন সক্রিয় কর্মী। তার সঙ্গে আরও যারা গ্যারেজটি দখল করে নিয়েছেন তারাও মামুন মাহমুদের অনুসারি। ভুক্তভোগি গ্যারেজ মালিক দখলবাজদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলেও তা গ্রহণ করা হয়নি বলে দাবি করেন হেনা সরদার।
হেনা সরদার নিজেকে জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী দাবি করে জানান, ১৮ জুলাইয়ের পর অনেক কষ্ট করে তিনি মামুন মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার কাছে আন্দোলনরতদের জন্য বেশ কয়েকবার সহযোগিতাও চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি (মামুন মাহমুদ) কোনোরকম সাপোর্ট করেননি। যতবার গিয়েছেন ততবারই হেনা সরদারকে সহযোগিতা না করে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে হেনা সরদার ভিডিও বার্তায় দাবি করেছিলেন, আন্দোলনে আহত দুজন চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এ জন্য তিনি গিয়াসউদ্দিনের উপর আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ভিডিও বার্তাতে তিনি গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। তবে এদিন গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে তিনি দেখা করতে আসলে গিয়াসউদ্দিন সেই রোগীদের অবস্থান জানতে চাইলে হোনা সঠিক তথ্য দিতে পারেননি।
পরে গিয়াসউদ্দিন ওই নারীকে আশ্বস্ত করেন, আন্দোলনে আহত কোনো ব্যক্তির চিকিৎসা থেমে থাকবে না। রোগীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারলে তাদের চিকিৎসার জন্য যা করা দরকার তিনি তা করবেন। প্রয়োজনে গিয়াসউদ্দিন স্বশরীরেও আহতদের দেখতে যাবেন বলে ওই নারীকে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে যারা গ্যারেজ দখল করেছেন তারা যে হোক, যার লোক হোক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য যতরকম সহযোগিতা দরকার তিনি সেটি করবেন বলেও জানিয়েছেন।
হাবিবকে চিনেন না জানিয়ে গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘তাকে আমি চিনি না। সে কার লোক তাও জানি না। মামুন মাহমুদ আমাদের বিএনপির একজন নেতা। হাবিব তার লোক কিনা সেটিও আমি নিশ্চিত নই। তবে যার লোকই হোক, অপরাধির একটাই পরিচয় সে অপরাধি।’ দখলবাজ, চাঁদাবাজদের সিদ্ধিরগঞ্জে কোনো স্থান হবে না বলে তিনি জানান।
গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, চাঁদাবাজ, দখলবাজ যারা হোক, যত বড় নেতা হোক, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। আইনের আশ্রয় নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি আমার সাহায্য চায় আমি তাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করবো। তবে কেউ যেন চাঁদাবাজদের ভয়ে চুপ না থাকে সে আহ্বানও জানান তিনি। এন. হুসেইন রনী /জেসি