শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ১২ ১৪৩১

বাংলাদেশে দূতাবাস খুলতে চায় আজারবাইজান

মোরছালীন বাবলা, আজারবাইজান (বাকু) থেকে :

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২৪  

# ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আগ্রহী আজারবাইজান। ঢাকায় একটি দূতাবাস খোলার সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে দেশটি। এসব লক্ষ্য সামনে রেখে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেশটির সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ একথা জানান।

 

তিনি বলেন, তার সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উভয় দেশের জন্য বাড়তি সম্ভাবনা দেখতে পাওয়ায় ঢাকায় একটি আবাসিক দূতাবাস খোলার সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে। আলিয়েভ আরও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করতে আজারবাইজান সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল আগামী বছরের প্রথম দিকে বাংলাদেশ সফর করবে। প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিপ্লবের প্রশংসা করে বলেন, তিনি কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি জানান, অধ্যাপক ইউনূসের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে আজারবাইজানে একটি যুব স্বনির্ভর কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। 

 

তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে অন্তর্র্বতী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন যে, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে বলেন, 'আপনার কাজটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তবে আমি জানি আপনি এই চ্যালেঞ্জ সফলভাবে অতিক্রম করতে পারবেন।' প্রধান উপদেষ্টা দুই দেশের মধ্যে আরো দৃঢ় সম্পর্কের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেলে উভয় দেশ সমৃদ্ধ হবে। অধ্যাপক ইউনূস আরো বলেন, তেলসমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে আরো বেশি বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকা উচিত। 

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের জাহাজ-নির্মাণ শিল্পে শত শত বাংলাদেশি কাজের সুযোগ পেয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ বলেন, আজারবাইজান ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। তিনি বাংলাদেশের সাথে তাদের ডিজিটালাইজেশনের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং তুরস্ক ও আজারবাইজানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আমানুল হক উপস্থিত ছিলেন।

 

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে বৈঠক

এছাড়া আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে তিনি বলেন,  অন্তর্বর্তী সরকার দেশের তৈরি খাতে আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার প্রয়াসে শ্রম খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করবে। ড. ইউনূস বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করার সময় থেরেসা মে’কে বলেন, শ্রম ইস্যুটি আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের অন্যতম এবং আমরা সব শ্রম সমস্যার সমাধান করতে চাই। থেরেসা মে বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রম ইস্যুতে কাজ করার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মানবপাচার ও অভিবাসন ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেন আইনি মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অভিবাসন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি ঝুঁকি ও অনিয়মিত অভিবাসন কমিয়ে দেবে এবং মানবপাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে।  থেরেসা মে’কে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় বাংলাদেশি তরুণদের আঁকা গ্রাফিতি ও ম্যুরাল বিষয়ক বই আর্ট অব ট্রায়াম্ফের একটি অনুলিপি উপহার দেন অধ্যাপক ইউনূস। 


দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

আজারবাইজানে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাত ৮টা ৫ মিনিটে বিমানের চার্টার্ড (বিজি ১১০২) ফ্লাইটে বাকু থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। এর আগে বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে বাকু ছাড়েন প্রধান উপদেষ্টা।

 


পরে ১৩ নভেম্বর বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে ভাষণ দেন তিনি। এ ছাড়া, গতকাল বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে এলডিসি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন তিনি।  সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আড্ডো, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার প্রেসিডেন্ট ডেনিস বেচিরোভিচ সাক্ষাৎ করেছেন।  

 

এ ছাড়া, বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মটলি, আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইদি রামা, লিখটেনস্টাইনের প্রধানমন্ত্রী ড্যানিয়েল রিশ, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে ও ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট শিনা আনসারির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন ড. ইউনূস।

এই বিভাগের আরো খবর