Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

মীর জুমলা রোডে পা পড়েনি প্রশাসনের

Icon

লিমন দেওয়ান

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:২১ পিএম

মীর জুমলা রোডে পা পড়েনি প্রশাসনের

 

# নগরীতে চাঁদাবাজির মহোৎসবের স্থান মীর জুমলা রোড
# নিয়মিত বিভিন্ন কায়দায় উঠছে কয়েক লাখ টাকার চাঁদা
# এসপি হারুন থাকাকালে উচ্ছেদ হলেও এখন হচ্ছে না কেন

 

 

নগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা হকার ইস্যু ও যানজট নিরসনে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের গোলটেবিল বৈঠকে ঐক্যমত প্রকাশ করেছেন মেয়র আইভী, সাংসদ সেলিম ওসমান এবং সাংসদ শামীম ওসমান। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকের পরদিন তথা গতকাল নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়ক ছিল পুরো ফাঁকা।

 

অবৈধ স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে দেখা মিলেনি ফুটপাতে থাকা হকারদের। তা ছাড়া সেই বৈঠকে আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিলো তা হলো মীর জুমল সড়কের দখল উচ্ছেদ করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার জন্য কিন্তু বৈঠকের পর দিন ও এই মীর জুমলা সড়কে সেই মৃত রূপেই দেখা যায়। বৈঠকের প্রভাব পরেনি সেই মীর জুমলা সড়কে ঠিক সেই আগের মতোই শত শত দোকান রাস্তার দুইপাশে বসে আছে। যার নেতৃত্বে সেই রোডটি দখল হয়েছে দিগুবাবুর বাজারের ইজাদার ফাইজুল ইসলাম রুবেল।

 

এই রুবেল গতকাল প্রেসক্লাবের গোল টেবিল বৈঠকে ব্যবসায়ী হিসেবে উপস্থিত থেকে এবং এই রোড দখলমুক্ত করার কথা শুনে আসলে ও রোডে চৌকি বন্ধ করার বিষয়ে কোন দোকানদারদের অবগত করেনি। দিব্বি চলছে মীর জুমলা রোডে অস্থায়ী এছাড়া ও চাঁদাবাজার ও দেদারসে চাঁদা তুলেই যাচ্ছে। এখনো এই মীর জুমলা রোডকে দখলমুক্ত করতে পা পরেনি প্রশাসনীয় কর্মকর্তাদের। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান কাঁচামালের বাজার দিগুবাবুর বাজারে প্রবেশ করতে হয় মীর জুমলা সড়ক দিয়ে।

 

প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে ছোট ছোট চৌকিতে কাঁচা সবজি, মাছ, মুরগি, আলু-পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও ফলসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে বিক্রেতারা। এ সড়ক নিয়ে বহু ঘটনার জন্ম হলেও কোনো সুরাহা হয়নি বছরের পর বছর। প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘদিন এই সড়ক দখল করে কাঁচা তরিতরকারি ও ফলমূলের দোকান বসিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা।  

 

সরেজমিনে গিয়ে সূত্রমতে জানা যায়, দিগুবাবুর বাজারের ইজারাদার প্রয়াত শ্রমিক নেতা আলহাজ্ব আমিনুল ইসলামের ছেলে মহানগর যুবলীগের কার্যকারী সদস্য ফাইজুল ইসলাম রুবেল। তিনি মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজা উজ্জ্বলের সাথে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের মিছিল মিটিংয়ে তাকে দেখা যায়। জানা গেছে, এই যুবলীগ নেতা দিগুবাবুর বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে সরকারী সড়ক মীর জুমলা রোডে চৌকি বসিয়ে এক চৌকি দুই বেলা সকাল ও বিকাল ভাড়া দিয়ে থাকেন।

 

দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে শুরু করে মীর জুমলা রোড হয়ে সিরাজউদ্দৌলা রোড পর্যন্ত রাস্তার উপরে ফল, গুড় ও পানের দোকান রয়েছে ৩৮টি যার চৌকি প্রতি বিল দিতে হয় নিয়মিত ৭০০ টাকা করে। আলু-পেঁয়াজ, শাক-সবজি, আদা-রসুনের দোকান রয়েছে ৫০টি, যার চৌকি প্রতি নিয়মিত গনতে হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করে। তা ছাড়া এই রোডে মাছের দোকান রয়েছে ১০টি যার নিয়মিত চাঁদা দোকান প্রতি ২ হাজার টাকা করে। সাথেই ২টি গরু ও খাসির মাংসের দোকান যাদের নিয়মিত চৌকি প্রতি গুণতে হচ্ছে ১৫০০ টাকা করে। তা ছাড়া মুরগীর দোকান রয়েছে এই মীর জুমলা রোডে ১৪টি, যার জন্য গুনতে হচ্ছে নিয়মিত ২০০০ টাকা করে।

 

এদিকে শাক-সবজির দোকানগুলোকে সকালে এক সিপ্ট দিয়ে বসানো হয় আর বিকেলে আরেক সিপ্ট দিয়ে এইভাবে ডাবল টাকা উঠে নিয়মিত এক চৌকি থেকে। এই মীর জুমলা রোডের এক সাইডে রুবেলের দখলকৃত দোকান রয়েছে- মোট: ১৪৫টি। ১ লাখ ১০ হাজার টাকা অধিক নিয়মিত চাঁদাবাজি হয় এই মীর জুমলা রোড দখল করে। তা ছাড়া সিরাজদৌল্লা রোড মীর জুমলা রোডের প্রবেশ মুখে রয়েছে ৩টি চায়ের দোকান যাদের থেকে নিয়মিত ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা তুলছে এমনকি অস্থায়ী ভ্যানগাড়ি দিয়ে দোকান বসিয়ে ৬টির মতো। অপর দিকে মীর জুমলা রোডর দিক উল্টো পাশে এই রুবেলের আশকায় দোকানদার রা তাদের মালামাল বাহিরে রেখে দিয়েছেন।

 

তা ছাড়া সেই দোকানের মালিকরা ও নিয়মিত সেখানে রাস্তায় দোকান বসিয়ে যাচ্ছে। তারা ও নিয়মিত হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। এমনকি দোকান রাস্তায় বসায় রুবেলের লোকেরা মীর জুমলার এক সাইডে চাঁদাবাজির পাশাপাশি বিপরীত সাইড থেকে ও রাস্তায় দোকান বসানো লোকদের থেকে নিয়মিত খাজনা তুলছে ২০০ টাকা করে। তা ছাড়া এই রোডে মালামাল নামানোর জন্য কোন বড় ট্রাক ঢুকলে দিতে হয় ৮০০ টাকা আর ছোট ট্রাক ঢুকলে দিতে হয় ৫০০ টাকা। অপরদিকে আলুর গাড়ি নসিমন ঢুকলে দিতে হয় ৩০০ টাকা। তা ছাড়া রিক্সা, মিশুক ঢুকলে ও ৫০ টাকা রাখেন তারা। এই রোডে মালামাল নামাতে বহু যানবাহন নিয়মিত প্রায় ১ হাজারের অধিক সেখানে এমন টাকা তুললে তো নিয়মিত লাখো টাকার চাঁদাবাজি হয়।

 

আরো জানা গেছে, এখানে রুবেলের লোক হিসেবে পরিচিত রিয়াজুল, হিযলা আবুলসহ আরো অনেকেই টাকা তুলে থাকেন এই মীর জুমলা রোডের অস্থায়ী দোকানগুলো থেকে। এই রোডকে দখল করে তারা চাঁদাবাজি করতে করতে এই রোডকে মৃত বানিয়ে ফেলছে। সর্বশেষ মীর জুমলা সড়ক দখলমুক্ত হয়েছিল এসপি হারুন অর রশিদের সময়। এবার দীর্ঘদিন বহুল প্রতীক্ষিত গোল টেবিল বৈঠকের পরে এখন ও দখল এই সড়ক। সামনের দিনগুলোতে কার প্রভাবে জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনকে উপক্ষো করেই কতদিন দখল থাকে এই মীর জুমলা রোড সেটাই এখন দেখার বিষয়।

 

এ বিষয়ে দিগুবাজারের ইজারাদার ফাইজুল ইসলাম রুবেল যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘মীর জুমলা রোডে দোকান না বসানোর বিষয়ে এখনও আমাদের কাছে কোন নোটিশ আসেনি। নোটিশ আসলে এই রোডে দোকান বসানো বন্ধ হয়ে যাবে। আর বর্তমানে তো রোডের এক সাইড দিয়ে যানবাহন চলাচলে জায়গা আসে সেখান দিয়ে যানবাহনগুলো চলাচল হচ্ছে।’ এস.এ/জেসি

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন