শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারের খোটা দিতেন সেলিম ওসমান

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ১ অক্টোবর ২০২৪  

 

 

# তাদের নিয়ে কাজ করবো, কিন্তু আঘাত করলে পাল্টা আঘাত করবো
# এমপির প্রভাবে মোহাম্মদ আলীও তাদের পাশে দাঁড়াতে পারেননি

 

গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১৭ সতের বছরের শাসনামলে নারায়ণগঞ্জের সকল সেক্টরই ছিল তাদের দখলে। এমনকি ১৯৭১ সালে দেশ মুক্তির জন্য যারা সরাসরি অংশ নিয়ে যুদ্ধ করেছে সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও বিভক্তি তৈরি করে রেখেছিল বলে অভিযোগ আসে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে। তাই এবার সেই সরকারের পতনের পর এবার সেসব অবহেলিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা আবারও একত্রিত হয়ে সংগঠিত হয়ে কাজ করতে চান।

 

 আর সেখানেই ওঠে আসে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান কিভাবে তার প্রতিপক্ষ দলের মুক্তিযোদ্ধাদের কিভাবে অপমান অপদস্ত করতেন তার চিত্র। যেখানে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অন্য রাজনৈতিক দলের সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দিয়ে আবার সেই খাবারের খোঁটা দিতেন বলে অভিযোগ করেন তারা। 

 

এমনকি এক সময় বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া শিল্পপতি বীর মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার মোহাম্মদ আলীও সেই সাংসদের কারণে বিএনপিপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে পারেননি। গতকাল শনিবার বেল ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদে অনুষ্ঠিত বিএনপিপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের এক মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্যে এমন ধরণের বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে।

 
এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরে আলম বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহারকে (অসৌজন্যমূলক আচরণকে) ভুলে যাব না, স্মরণ রাখবো। তবে তারা যে ধরণের খারাপ কাজ করেছে আমরা তা করবো না, আমরা ভালো কাজ করবো। 

 

আমি সাবেক এমপিদের বিভিন্ন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতাম। আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। সাবেক এমপি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার নিয়ে একটি কথা বলেছিলেন, আমি সেটার প্রতিবাদ করেছিলাম। আমি বলেছিলাম যে, আমরা আপনার খাবারের জন্য মুক্তিযোদ্ধা হইনি। আপনি খাবার দিলেন কেন এবং দিয়ে কেন খোঁটা দেন। আমরা আপনার খাবার খাবো না। এই বিষয় নিয়ে অনেক দ্বন্দ¦ হয়েছে, ওনি আমাকে অনেক শাসিয়েছেন। কিন্তু আমি ভয় পাইনি।

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন মোল্লা বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর আমরা মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দিতে পারিনি। কোন সমস্যা হলে আমাদেরকে বিএনপি বলে আখ্যা দেওয়া হতো। আমাদেরকে অবমূল্যায়ন করতো। তবে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে আজকে আমরা এমন একটি পজিশনে আছি বলে যদি কেউ মনে করেন যে, ‘আমরা অনেক কিছু হয়ে গেছি’ তাহলে ভুল করবেন। অতীতে ওরা যা করে গেছে আমরা সেরকম থাকতে চাই না। আমরা মুক্তিযোদ্ধা, সম্মানী ব্যক্তি, আমরা সম্মানিত হয়েই থাকতে চাই। কিছু লোকের কারণে শিল্পপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলীও আমাদের জন্য তেমন কিছু করতে পারেনি।

 

বিএনপিপন্থী বিভিন্ন বীর মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত সরকারের সময় তাদের সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের বেশ কিছু অন্যায় কাজের পরামর্শ দিয়েছিল। আমার তাতে রাজি না হওয়ার কারণে আমাদের সাইড (আলাদা) করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমরা সেরকমটা চাই না। আমরা চাই সকলে মিলেমিশে কাজ করতে। 

 

তারা আরও বলেন, আমরা আমরা অতীতকে চাইলেই ভুলতে পারবো না, ভুলতে চাইও না। আমরা তাদের ব্যবহারকে মনে রেখেই তাদের সাথে উল্টোটা অর্থাৎ ভালো আচরণ করবো। তবে কেউ যদি আবারও আমাদের সাথে শত্রুতা করে আঘাত করতে চায় তাহলে আমরা ছেড়ে দিব না। মুক্তিযোদ্ধারা আরও বলেন, আমরা এখন দলীয় অবজারভেশনে আছি। আমরা কে কি ধরণের কাজ করি তা সবকিছুই নজরদারী হচ্ছে। তাই, আমাদের এমন কোন কাজ করা চলবে না যা করলে আমাদের বদনাম হবে। আগামীতে বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে রাখার সম্ভাবনা আছে বলেও জানান তারা।
 

এই বিভাগের আরো খবর