শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

রাজি না হলেই চলত নীট কনসার্নের টর্চার

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

 

 

৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বেরিয়ে আসছে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান নীট কনসার্ন গ্রুপের বিভিন্ন অপকর্মের তথ্য। এরই মধ্যে বিভিন্নভাবে এই ভূমিখেকো, ভূমিদস্যু, মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসী কর্নধারগণ ওসমান পরিবারের সাথে তাদের দহরম মহরম সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে সাধা সাজার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 

 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং নারায়ণগঞ্জের স্বঘোষিত সন্ত্রাসী ও ক্যাডার পরিবার ওসমান পরিবারের চোরে মতো পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের চেল্যা হিসেবে পরিচিত এক সময় ওসমান পরিবারকে দিয়ে দাপট দেখানো ও হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ আত্মসাৎ করা প্রতিষ্ঠান আজ বোল পাল্টিয়ে নিজেদের দুধে ধোয় তুলসী পাতা হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অথচ এখনও পাঠানটুলিতে গেলে দেখা যাবে তাদের দখলে আছে রেলওয়ের সম্পত্তির উপর গড়ে ওঠা ভাষা সৈনিক নাগিণা জোহা সড়কের একটি অংশ তাদের দখলে। 

 

আজও সরকারের বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রিত নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলে অবস্থিত লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলস আছে তাদের দখলে। যা ওসমান পরিবারের সরাসরি সহযোগিতায় সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী ও জোর জবরদস্তির মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে নীট কনসার্ন গ্রুপ। ওসমান পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের ক্যাডার নারায়ণগঞ্জের ত্রাস হিসেবে পরিচিত ভাইজান ও তার গ্রুপকে ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখিয়ে দখল করেছেন বলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় এবং ওসমান পরিবারের সরাসরি হাত থাকায় তাদের ঠেকানো সম্ভব হয়নি

 

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে ওসমান পরিবারের ক্যাডার এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের (প্রয়াত) পুত্র আজমেরী ওসমানকে সাথে নিয়ে নীট কনসার্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর, তার ভাই মনোয়ার হোসেন মনা প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়ে লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলে প্রবেশ করে সেখানে তাদের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে রাজি না হওয়া শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। 

 

সে সময় সেখানে তারা একটি কোয়ার্টারে থাকা একটি শ্রমিক পরিবারের দুই বছরের এক শিশু সন্তানকে বাইরে ফেলে দেয়। তার স্ত্রীকে এক কাপরেড় বাইরে বের হয়ে যেতে বাধ্য করে এবং বাসা ভাঙচুর করে। এরপর ঘরের বাইরে তালা দিয়ে দেয়। সে সময় এভাবে তারা মিলের ৪২জন শেয়ার হোল্ডারের ঘর ভাঙচুর করে। ঐ ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয় বলে জানা গেছে। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় তিন শেয়ার হোল্ডারের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দেয়া হয়। সেই ঘটনায় টানা ২৮ দিন সেসব শেয়ার হোল্ডাররা তাদের ঘরে যেতে পারেনি। ২৮ দিন পর ফিরলেও ছিল না গ্যাস ও পানি সরবরাহ। তাদের দীর্ঘ চেষ্টার ফলে বিদ্যুৎ সংযোগ করা গেলেও এর কিছুদিন পর তা আবারও কেটে দেওয়া হয়।

 

নীট কনসার্ন গ্রুপ ওসমান পরিবারের সেই সময়ের এমপি নাসিম ওসমান, তার মৃত্যুর পরে তার ভাই এমপি সেলিম ওসমান, এমপি শামীম ওসমান ও তাদের ভাতিজা আজমেরী ওসমানকে ব্যবহার করে এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ তারা স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে দখল করে নেন। শেয়ার হোল্ডারদের ভুল বুঝিয়ে এবং রাজি না হলে ভয় ভীতি দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে স্বাক্ষর নেন তারা। এ সময় যারা স্বাক্ষর দিতে বাধা দেয় এবং নিজেরা স্বাক্ষর দিতে রাজি না হয় তাদের উপরই চলতো ওসমানীয় নির্যাতন।

 

এই বিভাগের আরো খবর