রূপগঞ্জে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে বিপাকে উৎপাদন ভিত্তিক তাঁত শ্রমিক
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ পিএম
ভয়াবহ লোডশেডিং আর অব্যাহত কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন রূপগঞ্জের তাঁত শ্রমিকরা। স্বল্প বেতন, হাতের নাগালের বাইরে থাকায় বাজারের পন্যমূল্যে খাপ খাওয়াতে পারছেন না তারা। প্রাচ্যের ড্যান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের শিল্পনগরী রূপগঞ্জ উপজেলায় বৃহত্তর শিল্প কারখানা ছাড়াও রয়েছে শতাধিক তাঁতশিল্পের প্রতিষ্ঠান।
এসব পাওয়ারলুম কারখানায় কাজ করছেন প্রায় ৪০ হাজার তাঁত সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও ব্যবসায়ী। তবে সম্প্রতি ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে চুক্তিভিত্তিক মুজুরীতে কাজ করা শ্রমিকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কর্ম ঘন্টার প্রায় অর্ধেক সময় অলস থাকতে হয় শ্রমিকদের। রূপগঞ্জের প্রায় প্রতিটি এলাকায় এমন লোডশেডিংয়ে অতীষ্ট বাসিন্দা ছাড়াও জীবিকা অর্জনে হিমসিম খাচ্ছেন তাঁত শ্রমিকরা।
উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভায় তাঁত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত কখনো রাতে সন্ধ্যা থেকে সকালে ১২ ঘন্টা পাওয়ালোমে কাজ করেন তারা। এসব পাওয়ালোম কারখানায় শাড়ী, লুঙ্গি, গামছা, বিছানার চাদর, পর্দার কাপড়, শীতের শাল, চাদর তৈরী করা হয়। এসব কাপড় মেশিন থেকে কেবল নামালেই পাওয়া যায় মুজুরী।
যতক্ষণ মেশিনে থাকবে তাতে কোন পারিশ্রমিক হাতে পাননা তারা। কিন্তু লোডশেডিং এর ভয়াবহতায় ওই ১২ ঘন্টার মাঝে গড়ে প্রায় ৬ ঘন্টাই থাকে বিদ্যুৎহীন। ফলে কাপড় তৈরী করতে দ্বিগুন সময় ব্যয় হয়। এতে পারিশ্রমিক অর্ধেকে নেমে আসে। এদিকে বাজারের সব ধরনের পন্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁতী পরিবারগুলো হিমসিম খাচ্ছেন জীবন জীবিকায়।
কাঞ্চনের বিএম টেক্সটাইল মিলের মালিক শামীমু আহমেদ বলেন, সুতাসহ সব ধরনের কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, পরিবহন ব্যয়, শ্রমিক মুজুরী দিতে গিয়ে অনেকটাই বিপাকে কাঞ্চন পৌরসভার পাওয়ারলোম কারখানাগুলো। আবার লোডশেডিং না থাকলে উৎপাদন বাড়াতে পারলে এ সংকট কাটানো যেতো।
আমরাও কর্মঘণ্টা হিসেবে টাকা দিলে এ পেশায় টিকে থাকা কঠিন হবে। তাই উৎপাদন ভিত্তিতে মুজুরী দিতে বাধ্য হই। কিন্তু তারা শুধুমাত্র বিদ্যুৎতের লোডশেডিংয়ের কারনে কাঙ্ক্ষিত আয় রোজগার করতে পারছেন না। আমরাও ব্যবসায় প্রকৃত মুনাফা পাচ্ছিনা।
এদিকে তাঁত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মনে করেন, তাঁতশিল্পের প্রসারে শিল্প এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করনের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী নুর মোহাম্মদ বলেন, বিদ্যুৎ এ লোডশেডিং সমস্যা সারাদেশেই।তাই নারায়ণগঞ্জ পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির একার পক্ষে লোডশেডিং বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে শীঘ্রই সংকট দূর হবে। শিল্প এলাকায় সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা আছে। তবে জাতীয় লাইনগুলো থেকে আমরা সাপ্লাই না পেলে কিছু করার থাকে না।
এদিকে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জীবিকার পথ ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে আসছে। তাই শিল্প কারখানাসহ সব ধরনের আয় রোজগারের পথকে সমৃদ্ধ করতে সরকারকে কাজ করার দাবি করেছেন তাঁত সংশ্লিষ্টরা। এন. হুসেইন রনী /জেসি