নারায়ণগঞ্জ জেলাকে আওয়ামী লীগের জন্ম স্থান বলা হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতারা বিভিন্ন সভায় এই কথা বলেও বেরান। কিন্তু আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত ক্ষমতায় থাকলেও নারায়ণগঞ্জে এই দল শক্তিশালী হতে পারেন নাই। কেননা এই জেলায় ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদ বলতে উত্তর দক্ষিনের দুই মেরুর দুউ জনপ্রতিনিধিকে ধরা হয়। উত্তর মেরুর নেতাকর্মীরা সাংসদ শামীম ওসমানকে নেতা হিসেবে মানেন। বিপরীতে শামীম ওসমান অনুসারী হিসেবে যারা নেই তারা দক্ষিন মেরুর মেয়র আইভী বলয়ে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকেন। বিভিন্ন সময় নানা ইসুত্যতে তারা একে অপরে আলোচনা সমালোচনা জড়িয়ে থাকেন। এমনকি তারা বিভিন্ন ভাবে বাগবিতন্ডতায় জড়ান। যা নাসিক নির্বাচনের সময় তাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। তবে রাজনীতিতে তারা ভাই বোন হিসেবেও পরিচিত। মেয়র আইভীকে এমপি শামীম ওসমান ছোট বোন বলে সম্বোধন করেন।একই ভাবে সাংসদ শামীম ওসমানকে মেয়র আইভী বড় ভাই বলে ডাকেন। এদিকে সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারাদেশে দুস্কৃতকারীরা সন্ত্রাসী তান্ডব, হামলা, ভাংচুর, লুটপাট চালায়। নারায়ণগঞ্জেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এখানে অন্যান্য জেলার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। এই জেলায় প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তার মাঝে জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের কাযালয় ভাঙচুর, নারায়ণগঞ্জ সিটি করোপরেশন ভবনে আগুন ভাংচুর,পিবিআই কার্যালয়,সাংসদ শামীম ওসমানের মালিকনাধীন শীতল পরিবহন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। আর এই সকল প্রতিষ্ঠান ২৭ জুলাই পরিদর্শনে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। কিন্তু এই মন্ত্রীর সামনেই তারা বাগবিতন্ডতায় জরান।
জানা যায়, সাংসদ শামীম ওসমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপেরেশনের প্যানেল মেয়র বাবু অনেক কষ্ট করেছে। দুস্কৃতকারী ৫ জনকে আটক করেছে। আগুন নিভিয়েছে। কিন্তু মেয়র আইভী বলেন বাবু কিছুই করে নাই। আমার পিয়ন হামলাকারী ৫জনকে আটক করে তার হাতে তুলে দিয়েছে। এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্যানেল মেয়র বাবু বলেন, সাংসদ শামীম ওসমান মাঠে না নামলে নারায়ণগঞ্জ ছাই হয়ে যেত। তবে সচেতন মহল বলছে নারায়ণগঞ্জে ছাই হওয়ার আর কিছু বাকি নেই। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে গিরে এখন ভাই বোনের মিলের সংসারে ফের আগুন লাগতে যাচ্ছে। তার ইস্যু নাসিক ভবনের আগুন নিভানোর ক্রেডিট নিয়ে। এই ঘটনার পর বিকেল সাড়ে ৩ টায় নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এখানে দলীয় বর্ধিত সভা হলেও সেই সভায় সকলেই মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র আইভীর সাথে জামাত শিবিরের সম্পর্ক রয়েছে। তিনি জামাত বিএনপির সাথে আঁতাত করে চলেন এমন মন্তব্য করেন তারই প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর বাবু। একই সাথে এই সভা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডে কাছে তারা বাস বরে মানুষ নিয়ে নালিশ দিবে বলে জানান। সেই সাথে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান। আর এই নিয়ে এখন পুরো শহরময় আলোচনা সমালোচনা তৈরী হয়েছে। ২৭ জুলাই রাইফেল ক্লাবে অনুষ্ঠিত হওয়া বর্ধিত সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাংসদ শামীম ওসমানের সামনে মেয়র আইভীকে নিয়ে এই ভাবে নানা ধরনের মন্তব্য করা হয়। তারা এই নেতাকর্মীদের চুপ না রেখে বরং কর্মীদের আশ^াস দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি খোকন সাহা বলেন, নেতাকর্মীদের এই বক্তব্য ভিডিও আকারে ক্যাসেট করে তা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। ওই সভায় একজন ভিডিও ক্যামেরা ম্যান ছিলেন যিনি সকল আলোচনা ভিডিু রেকর্ড করেন।
অপরদিকে সভায় মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নং প্যানেল মেয়র ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু। যাকে সকলে ডিস বাবু কিংবা মাউরা বাবু বলেও চিনে থাকেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হান্নান আহমেদ দুলালও মেয়র আইভীর কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হান্নান আহমেদ দুলাল মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রে নালিশ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, আজকে সারাদেশে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা কিন্তু কেউ নিরাপদ না। দলের ভিতরে থেকে কারা ষরযন্ত্র করছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। ২০০৩ সন থেকে আজকে ২০২৪ পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর মেয়র আইভী আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে একটি চেয়ার দখল করে রেখেছেন। রাস্তায় আগুন দিয়েছে কে বাম দলের নেতা অঞ্জন সরকার, পপি রানী সরকার। তারা মেয়র আইভীর লোক। আমি দলের মহানগরের শীর্ষ নেতাদের প্রতি অনুরোধ করবো আপনারা কেন্দ্রে তারা বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য হাই কমান্ডে জানাবেন। মেয়র আভীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা ২৭টি ওয়ার্ড থেকে বাস ভরে লোক নিয়ে ঢাকা যাবো। দল থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আব্দুল করিম বাবু মেয়র আইভীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সত্য কথা বলতে আমার কোন ভয় নেই। মেয়র আইভী আওয়ামী লীগের মেয়র হলেও তার সাথে জামাত বিএনপির আঁতাত রয়েছে। জামাত শিবিরের সাথে তার সর্ম্পক রয়েছে। দলীয় কর্মীদের তিনি সুযোগ সুবিধা না দিয়ে সিটি করপোরেশনের ১২ জন ঠিকাদারকে সুবিধা দেন। আমরা চাই দলীয় হাই কমান্ডে তার এই সকল কর্মকান্ড তুল ধরে তার বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাদের এমন দাবীর সাথে মেয়র আইভীর চাচা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের মৌনসম্মতি রয়েছে। এছাড়া এবিষয়ে সাংসদ শামীম ওসমানও একই অবস্থানে রয়েছেন। কেননা তাদের সামনে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানানোন হয়। তার নেতা কর্মীদের চুপ না রেখে উল্টো তাদের আশ^স্ত করা হয় এই বক্তব্য ভিডিও আকারে দলীয় হাই কমান্ডে দেয়া হবে। আর এতে পরিস্কার ভাবে বুঝা যায় ২৭ জুলাইয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জামাত বিএনপির প্রতিরোধের সভার চেয়ে মেয়র আইভী হটাও সভা হয়েছে। আলোচনার মুল বক্তব্য তেমনই ছিল। তবে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে শামীম অনুসারীদের নালিশের বিষয়ে নিরব রয়েছে দক্ষিণ বলয়ের নেতাকর্মীরা।
রাজনৈতিক বোদ্ধমহল বলছে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সকার মহল থেকে শুরু ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে রয়েছে। এমনকি পুরোদেশের মানুষের মাঝে এই আতঙ্ক আরও বেশি রয়েছে। কিন্তু যেখানে আওয়ামী লীগের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় সেখানে তারা উত্তর দক্ষিন বলয়ে নিজেদের মাঝে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরী করছে। যা নিয়ে দলের মাঝে সমালোচনা হচ্ছে। তারা কিন আদৌতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে।