বৃহস্পতিবার   ০৭ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ২৩ ১৪৩১

অবশেষে দুই পরিবার মুক্ত না.গঞ্জ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২৪  

# তাদরে ক্ষমতার উৎসই ছিল মূলত আওয়ামী শাসন

# এসব দখলদার ও বলয়ের হাত থেকে পরিত্রাণ চায় নারায়ণগঞ্জবাসী
# বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারীর দায়িত্ব ছিল তাদের চেল্যাদের হাতে

 
দীর্ঘ একটা সময় যাবত নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি (বিশেষ করে শহর কেন্দ্রীক রাজনীতি) দুটি পরিবারকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়ে আসছিল। যাকে উত্তর ও দক্ষিণের রাজনীতি নামে চিনে নারায়ণগঞ্জবাসী। উত্তরের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিতো ওসমান পরিবার এবং দক্ষিণের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিতো চুনকা পরিবার। আর এই দুই বলয়ের রাজনীতি ছিল আওয়ামী লীগকে ঘিরে। যদিও এর মধ্যে ওসমান পরিবারের সদস্যগণ জাতীয় পার্টিরও নেতৃত্বে ছিল। তবে ক্ষমতার উৎস মূলত আওয়ামী শাসন। নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দরের ঠিকাদারীও ছিল এই দুই পরিবারের সমর্থক ও চেল্যাদের দখলে। বিশেষ করে গত ১৫ বছর যাবত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় এই দুই পরিবারের বাইরে কাউকে কোন ঠিকাদারী করতে দেখা যায়নি বলে অভিমত নারায়ণগঞ্জবাসীর। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পর নারায়ণগঞ্জ এখন সেই বলয় মুক্ত। বর্তমান ও আগামী সরকারের কাছে এসব দখলদার ও বলয়ের হাত থেকে পরিত্রাণ চায় নারায়ণগঞ্জবাসী।

 

নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ ছিল দুই পরিবারের সকল স্তরে পরিবারিক বলয়ের লোক নিয়োগ নিয়ে। এলজিইডি, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারীর দায়িত্ব এই দুই পরিবারের চেল্যাদের হাতেই বরাদ্দ হতো বলে নারায়ণগঞ্জবাসী দাবি করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মিডিয়ায়ও লেখালেখি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে কাকে কোন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বা মেম্বার করা হবে তাও নির্ধারণ হতো এসব পরিবারের মতামতের উপর ভিত্তি করে। এক ওসমান পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়েই শহর বন্দরে হয়েছে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, জমি দখল, বিভিন্ন পদে পদায়ন, এমনকি বিভিন্ন সালিশ বৈঠকেও দেখা যেতো তাদের ভক্তদের রাজত্ব। এসব পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে তাদের চেল্যারা নিয়মিত চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও তারা ছিল নির্বিকার।

 

শুধুমাত্র এসব পরিবারের সাথে সখ্যতার থাকার কারণে আজ অনেকেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছেন। আজ থেকে ১২/১৫ বছর আগেও যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো বলে জানা যায় শুধু এসব পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় আজ তারা আলিশান বাড়ির মালিক, কোটি কোটি টাকার বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে গেছেন। আর একাধিকবার এ ধরণের অভিযোগ আসলেও এসব পরিবারের কর্নধার থেকে উত্তর এসেছে যে, নিয়ম নীতি মেনেই নাকি সব কিছু করা হয়। অথচ কাকতালীয়ভাবে এই নিয়ম নীতিতে শুধুমাত্র তাদের দেওয়া কাজের ঠিাকাদারী তাদের সমর্থকদের কপালেই জুটতো।


 
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, বিভিন্ন স্ট্যান্ড, ঘাটসহ বিভিন্ন ইজারা ্ চেল্যাদের দখলে যায়। এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতাদের উপরও প্রভাব বিস্তার করে তারা। আর তাইতো ওসমান পরিবার পালিয়ে যাওয়ার পরও (অনেকের মতে পুরো ওসমান পরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে ধারণা) তাদের ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দখলীয় সম্পদ সেসব বিরোধী দলীয় ভক্তরা পাহারা দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিষয়টি সত্য হলে অর্থাৎ এসব স্বেচ্ছাচার, স্বৈরাচার ও সন্ত্রাসী পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার পরও তাদের প্রেতাত্মারা যদি তাদের হয়ে প্রক্সি দেয় তাহলে তা শুধু দুঃখজনকই না, খুবই ভয়ানক হবে বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জের সচেতনমহল। 
 

এই বিভাগের আরো খবর