শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ১৩ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ অফিস এখন টোকাইদের বিশ্রামাগার

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২৪  

বিগত ১৫ বছর যাবত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রতিনিয়ত নেতাকর্মীদের চলাচলে মুখরিত ছিল। এমনকি শেখ হাসিনা পদত্যাগের দিনও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পার্টি অফিসের কার্যালয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে প্রতিরোধ করতে অবস্থান নেন। এই অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব প্রদান করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই। কিন্তু ৫ আগষ্ট দুপরের পর যখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানাজানি হয়। তখন সারাদেশের তুলনায় নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও পালিয়ে যায়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগের এমপি থেকে শুরু করে তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের দেখা নেই। এর মধ্যে ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকী চলে গেলে নারায়ণগঞ্জে সাবেক সিটি মেয়র আইভী ছাড়া অন্য কাউকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় নাই। তাছাড়া ক্ষমতা থাকা কালীন সময়ে সাবেক এমপি শামীম ওসমানসহ তার গুন্ডা পান্ডারা বড় বড় কথা বলে বেড়াতেন। কিন্তু বিপদের সময় তারাই আগে পালিয়েছে।

 

এদিকে মাস দুয়েক আগেও যেখানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় নেতাকর্মীদের পদচারনায় উজ্জীবিত ছিল আজ সেই অফিসের দরজা টিন দিয়ে আটকানো রয়েছে। কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর মুরালের ঢালাই করা অংশে এখন শহরের টোকাইদের বিশ্রাম ও আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া ৫ আগষ্টের পর থেকে নেতাকর্মীদেরও কোন পদচারনা নেই। শহরের ছিন্তাকারী ও টোকাইরা রাতের বেলা জেলা মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে শুয়ে থাকে। এখানে থেকে গভীর রাত হলেও তারা ছিনতাই কাজে ছড়িয়ে পড়ে। আবার দিনের বেলা এসে এক দল টোকাই এখানে শুয়ে থাকে। তারা এখন নিজেদের আড্ডাখানা বানিয়ে ফেলেছে এক সময়ের দাপটে থাকা আওয়ামী লীগের অফিসকে।

 

এছাড়া অফিসের দরজা থেকে শুরু কিছু লুট হয়ে যাওয়ায় দরজার সামনে কোনরকম টিন দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। যাতে করে ভিতরে কেউ প্রবেশ করতে না পারে। অথচ আওয়ামী লীগের অফিসকে রক্ষা করার জন্য তাদের দলীয় কোন নেতাকর্মী এগিয়ে আসে নাই। এতে করে আওয়ামী লীগের করুন দৈন্য দশা পাওয়া যায়।  

 

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে সহিসংতার রূপ নিলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেল গেইট এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় নাশকতাকারীরা। এছাড়া গত ৫ আগষ্টের দিন এক মুহুর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় অফিস তছনছ করে ফেলে। অফিসের ভিতরে আগুন জালিয়ে সবকিছু পুরে ফেলার পাশা পাশি এসি, ফ্যান সহ বিভিন্ন আসবাবপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায় দুর্বত্তকারীরা।  

 

অপরদিকে পার্টি অফিসের সন্নিকটেই অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করর্পোরশন নির্মিত মিনি পার্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ম্যুরালটি ভেঙে মাটিতে ফেলে আগুন দেয় নাশকতাকারীরা। অথচ, এই দুটি স্থাপনাই আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এলাকা দেওভোগে অবস্থিত। এমনকি দেওভাগ এলাকাই জেলা এবং মহানগরের শীর্ষ নেতাদের বাসস্থান। এছাড়াও বছরজুড়েই নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের পার্টি অফিসের আশে পাশেই নেতাকর্মীদের আনাগোনা থাকে। তারপরও কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে সহিসংতার রূপ নিলে পার্টি অফিসে তাণ্ডব বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙ্গে আগুন দিলে কোন প্রকার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি জেলা এবং মহানগরের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু এই পার্টি অফিস থেকেই এক সময় হুক্কার বা বড় গলায় আওয়ামীলীগের নেতারা দাবি করতেন আওয়ামীলীগের ঘাঁটি নারায়ণগঞ্জের মাটি। আওয়ামীলীগের দৈন্যদশা লুকিয়ে ছিল সেটাই স্পষ্ট হয়েছে এই তাণ্ডবের মধ্যে দিয়ে। এছাড়া তাণ্ডবে জাতির পিতার ম্যুরাল ভেঙ্গে আগুন দিলেও গা শিউড়েনি আওয়ামীলীগ নেতাদের। এমনকি কোন প্রতিবাদী কর্মকান্ড দায়িত্বশীল নেতাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। উল্টো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন হত্যা মামলায় আসামী হয়ে র্জজরিত রয়েছেন।

 

সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা ভয়ঙ্করভাবে ফুটে উঠেছে  বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সহিসংতার সময়। এই সহিসংতার সময় নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের উপর যে তাণ্ডবগুলো পরিচালিত হয়েছে যেমন: নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেল গেইট এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙ্গে আগুন হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বা মহানগর আওয়ামীলীগ নেতাদের ঘরের দুয়ারেই সংগঠিত হয়েছে। কেননা জেলা এবং মহানগরের অধিকাংশ নেতাদের বাসস্থান এবং কর্মস্থল এর আশেপাশেই। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা তাদের নেতৃত্বে বা তাদের নির্দেশনায় এই সহিসংতার প্রতিরোধ দূরথাক প্রতিবাদও করতে পারেনি। 

 

অথচ, এই সহিসংতা দেশজুড়ে থেমে গেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙা দেখতে উকি ঝুঁকি দিতে দেখা যায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। কিন্তুজেলা এবং মহানগরের নেতাদের আওয়ামীলীগের ক্ষমতাকালীন সময়েই তাদের পার্টি অফিস ভাঙচুর এবং জাতির পিতার বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙ্গে আগুন এর প্রতিবাদেও তাদের বিবেক জাগ্রত হচ্ছে না এমনটাই তীর ছুড়ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতি তৃণমূলের। অথচ কোন প্রকার কমিটি হলে পাল্টা কমিটি প্রতিবাদ বিদ্রোহমূলক আচরণ পার্টি অফিসে তালা এর কোনটিই করতে ভুলেন নাই নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা ওয়ার্ড কমিটি করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যেই বিভাজন সৃষ্ট করেন আবার সেই বিভাজন থেকে ঐক্যে এসে কমিটি গঠন করে বিতর্কে পড়েন। এই সকল কোন্দলের কারনে দল আজ ধ্বংসের পথে। দলের বিপদের মুহুর্তে কোন নেতাকর্মীর দেখা মিলে না। সেই সাথে এক সময়ে দাপুটে থাকা দলের কার্যালয় এখন টোকাই ছিন্তাইকারীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

 

জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো: শহীদ বাদলের সাথে ফোনে একাধিকবার সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।  

 

জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সাথে ফোনে একাধিকবার সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এই বিভাগের আরো খবর