সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৮ ১৪৩১

আকবরনগরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের শেষ কোথায়?

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২৪  

 

 

# ফের সংঘর্ষে একজন টেঁটাবিদ্ধ, গ্রেপ্তার ৪
# গত একমাসে একই জায়গায় ৩ বার হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

 

এপ্রিল মাসের শেষদিকে  অর্থাৎ ঠিক এক মাস পূর্বে আলোচিত রহিম হাজী ফতুল্লার সস্তাপুর থেকে তার নিজ বাসভবনে যাওয়ার পথে তার হাত পা ভেঙ্গে দেয় সামেদ আলীর লোকজন। তখন এ নিয়ে উভয় গ্রুপের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। তবে এ নিয়ে সেই অর্থে উপযুক্ত ব্যাবস্থা নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে। ঐ ঘটনার ঠিক ২৮ দিন পর  পর আবারো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায় উভয় পক্ষ। এ ঘটনায় ১ জন গুলিবিদ্ধ ও ৫ জন টেটাবিদ্ধসহ প্রায় ২০ জন আহত হন।

 

 এই ঘটনার ৪ দিন পর অর্থাৎ গতকাল ৩১ মে দুপুর থেকে আবারো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ালো সামেদ আলী ও রহিম হাজী উভয় গ্রুপ। এ ঘটনায়  আহত হয়েছেন প্রায় ডজন খানেক। এ সংঘর্ষের ঘটনায় অলিদ (৪০) নামের এক যুবককে টেটাবিদ্ধ  গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় প্রেরন করা হয়। এ সময় ভাঙ্গচুরের স্বিকার হয় বহু বাড়িঘর। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় রেজাউল, জিল্লুর রহমান, আসলাম ও শহিদুল্লাহ নামের ৪ জনকে আটক করা হয়।

 

তথ্যমতে, প্রভাব বিস্তারের লক্ষে বক্তাবলীর বহু অপরাধের মূল হোতা সামেদ আলী বাহিনী ও রহিম হাজী বাহিনী প্রায়ই সংঘর্ষে জড়ায়। তাদের উভয় গ্রুপের সদস্যের নামে ফতুল্লা থানাসহ আরোও দুই থানায় রয়েছে বহু মামলা।


ইট ভাটায় চাঁদাবাজী ও নিজ গ্রুপের আধিপত্য ধরে রাখতে তারা নিজেদের মধ্যো এর পূর্বেও বহুবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলো। এই দুইগ্রুপের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারন মানুষ। এই দুই গ্রুপ এর কারনে সবসময় আতঙ্কে থাকে গোটা এলাকাবাসী। এদের ব্যাক্তিগত স্বার্থের বলি হচ্ছে নিরীহ মানুষ।


এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও ইট ভাটায় চাঁদাবাজীকে কেন্দ্র করে পায়ই সংঘর্ষে লিপ্ত হয় উভয় গ্রুপ। এর মধ্যো সামেদ আলী সরকার দলীয় লোকজন এর নাম ব্যাবহার করলেও ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও স্থানীয় চেয়ারম্যান শওকত আলীর ভাতিজার বাড়িতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামেদ আলী বাহিনী হামলা করে নারীসহ ৬ জনকে আহত করে। তবে এ ঘটনার পর এলাকা থেকে প্রায় বহুদিন নির্বাসিত ছিলেন দুর্ধর্ষ এই সামেদ আলী। তবে মাসখানেক পূর্বে তার আক্রমনাত্নক প্রত্যাবর্তন এ আবারো আতঙ্কে বক্তাবলীবাসী।

 

এলাকাবাসী বলছে এখনই যদি এই দুই গ্রুপকে না থামানো যায় তবে করুন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে বক্তাবলীবাসীর জন্য। তবে এত নেতিবাচক ঘটনার পরও রহস্যজনকভাবে উভয় গ্রুপের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যায় নি প্রশাসনকে।


এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বক্তাবলীবাসী। স্থানীয়রা বলছেন সামেদ আলী এলাকা থেকে দীর্ঘদিন নির্বাসিত ছিলেন। তবে তিনি একমাস আগে ফিরে এসেছেন। ফিরে এসেই একমাসেই গোটা এলাকাকে আবারো অশান্ত করে তুলেছেন। এক মাসেই সংঘর্ষে জড়িয়েছেন তিনবার। নিশ্চই তিনি কারো ইন্ধনেই এসব করে চলছেন। এসব করার সাহস পাচ্ছেন। 

 

এ ঘটনার ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান শওকত আলী জানান, আমি এ ঘটনার সম্পর্কে কিছুই জানিনা।  তবে এলাকায় অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে শুধু এতটুকু জানি। বিস্তারিত এখন বলতে পারছিনা। তবে এলাকাবাসীর প্রানের দাবি উভয় গ্রুপের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা নিয়ে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনা হোক।

 

এ বিষয়ে এ সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম জহিরুল হক বলেন, আমরা সবসময় অভিযান চালাচ্ছি। এসপি মহোদয় সবসময় এই ঘটনার তদারকি করছেন। পুলিশ লাইন থেকে ফোর্স দেওয়া হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে পাশে বর্ডার এরিয়া ,ওরা পালিয়ে যায়। আমরা ফেরিতে উঠলেই ওরা খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। আমরা কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।

এ বিষয়ে ফতুল্লা থানার ওসি (নূরে আযম মিয়া) জানান, আমরা ৪ জনকে গ্রেফতার করেছি। একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
একই সমস্যা একই জায়গায় বারবার হচ্ছে । এর শেষ কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এসেছি মাত্র একবছর হলো। শুনেছি এ সমস্যা বহুদিনের। তবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আমরা ঐ জায়গায় বিশেষ দৃষ্টি রাখছি।


তবে বক্তাবলীবাসীর মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এই অবস্থা থেকে কবে মুক্তি পাবে তারা? এই সমস্যার সমাধান কোথায়? প্রশাসনকে আরো দায়িত্বশীল হয়ে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এ জনপদের বাসিন্দারা।

এই বিভাগের আরো খবর