শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ১৩ ১৪৩১

আক্তার ইস্পাতের বিষাক্ত ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ জনজীবন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৬ জুন ২০২৪  


ফতুল্লার কুতুবপুরের হিন্দু পাড়ায় অবস্থিত মেসার্স আক্তার ইস্পাত ধোঁয়া নির্গমনের সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই মিলটি চালু করেছে। যার ফলে পিলকুনীসহ এর আশেপাশের এলাকা নন্দলালপুর, আলীগঞ্জ, দেলপাড়া, দাপা- ইদ্রাকপুরের লোকজন বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ  হচ্ছে। এই ধোয়ায় ভুক্তভোগী এখানকার প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামজিক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় ৩০/৪০ হাজার মানুষ।

 

 

এমন মারাত্মক দূষণের বিষাক্ত এই কালো ধোঁয়ার ক্ষতিকর দিকসমূহের ব্যাপাওে মোটামুটিভাবে সবাই অবগত। কালো এই ধোঁয়াকে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার যার মানে ঠান্ডা মাথায় মানুষকে খুন করে। এতে  শিশুরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এতে শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, চুলপড়াসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মোটকথা এটা অব্যাহত থাকলে জনজীবন একেবারে হুমকির মুখে পড়বে।

 

 

মিলের আশেপাশের ঘরবাড়িগুলো দিনের বেলা দরজা জানালা বন্ধ করে রাখছে। এমনিতে তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। তারপর আবার আবদ্ধ ঘরে থাকাটা যে কতটা অসহনীয় তা ভুক্তভোগীরাই বুঝবত পারছে। এরপর রাতের বেলায় প্রায় ৪০/৫০ টি ট্রাকের বিশালাকার লোহার পাত / পাত লোড- আনলোডের বিকট আওয়াজের কারণে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে তাদেরকে।

 


এলাকার প্রবীন মুরুব্বি  ইউসুফ মিয়া এ প্রতিবেদক বলেন, আমার বাবা, দাদা, পরদাদা এখানে প্রায় দু’শ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। আমরা বরাবরই শান্তিপ্রিয় মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ঘরবাড়ি বিক্রি করে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক দফা মিল কতৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন তাদেরকে কোন পাত্তাই দিচ্ছে না।

 

 

একটি সূত্র থেকে জানা যায়, যারা সেখানে অভিযোগ করতে গিয়েছে তারাই ম্যানেজ হয়ে ফিরে আসে। আবার এলাকার কিছু আতি- পাতি নেতার নামও শোনা যাচ্ছে যারা ওই মিল মালিকের সাথে বিভিন্ন সময়ে নিবিড় যোগাযোগ করে চলছে। এলাকার কিছু লোকজন একবার বৈঠকও করেছিল। সে বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা আজো আলোর মুখ দেখাতো দূরের কথা বরং কালো ধোঁয়ার অন্ধকারই বেশি দেখা গেছে।

 

 

এই এলাকাটি মূলত একটি জনবহুল ও সম্পূর্ণ আবাসিক এলাকা। পরিবেশ অধিদপ্তর আবাসিক এলাকায় জনজীবন হুমকির মুখে পড়বে এমন বাণিজ্য ভবনের ( রি-রোলিং মিল ও ইস্পাত মিলের মতো ইন্ডাষ্ট্রি) অনুমোদন কিভাবে দেয় এটা কারো বোধগম্য নয়। এমন অসংগতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তারা ভয়ে একেবারেই নিশ্চুপ।

 

 

এখানে কোন ব্যক্তি,গোষ্ঠী কিংবা সম্প্রদায়ের একক স্বার্থ জড়িত নয়। আক্তার ইস্পাতের মতো এস.কে ও আল- বাক্বারা রি- রোলিং মিলের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া থেকেও মানুষ নিরাপদ নয়। এলাকাবাসীর দাবী, আমরা আমাদের অস্থিত্বের স্বার্থে, আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকবার স্বার্থে,আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম একটি নির্মল বায়ু সেবনের স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তর, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, মিডিয়ার মাধ্যমে জোর দাবি জানাই।

 

 

যাতে অনতিবিলম্বে এ ব্যাপারে সকলের সমন্বয়ে দ্রুত  ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। আর তা না হলে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে পিলকুনীর হিন্দু সম্প্রদায়সহ আশেপাশের এলাকার লোকজনকে নিয়ে অনতিবিলম্বে বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে বলে তারা বলেন।

 


তবে এ বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোনটি রিসিভড করেননি।       এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর