সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

আট লেন করেও যানজটমুক্ত হয়নি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২২  

 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক । এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ২৫ হাজারের বেশি গাড়ি চলাচল করে থাকে। গাড়ির চাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল অংশ আট লেনে উন্নীত করা হয়। কিন্তু নানা কারণে এর সুফল পাচ্ছে না এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা।

 



ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল খানকা মসজিদের সামনে থেকে কাঁচপুর ব্রিজের ঢাল পর্যন্ত বিভিন্ন যানবাহনের অবৈধ কাউন্টার ও ট্রাক স্ট্যান্ড বসানোর ফলে এখান দিয়ে যানবাহনগুলো ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না।

 



এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অফিস সংলগ্ন অংশ থেকে শিমরাইল ডাচ বাংলা ব্যাংক পর্যন্ত বন্ধু পরিবহন, কোমল, মনজিল, সময়, অভিনন্দন, নীলাচল বাস ও লেগুনার কাউন্টার থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারী ও পরিবহন চালকদের। এছাড়া দূরপাল্লার যানবাহন থেকে শুরু করে আঞ্চলিক পরিবহনগুলো মহাসড়কের মাঝখানে যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা গেছে।

 



ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে রয়েছে ডিপিডিসির কার্যালয়, সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আদমজী ইপিজেড, র‌্যাব-১১ এর সদর দপ্তর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানাসহ অসংখ্য পোশাক কারখানা। ফলে এখানে জনসংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর চলাচলের মূল কেন্দ্র এ মহাসড়ক দিয়ে বলা যেতে পারে।

 



ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশেই শিমরাইল-আদমজী-নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবস্থিত । এ সড়ক দিয়ে অটোরিক্সা, মিশুক, ব্যাটাারি চালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, সিএনজি, ট্যাঙ্কলরি, যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার ও কাভার্ডভ্যানসহ হাজারো যানবাহন চলাচল করে। বর্তমানে এ সড়কের শিমরাইল মোড় অংশটি অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দখলে থাকে। তার পাশেই অবৈধভাবে সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড বসানো হয়েছে।

 



পাশাপাশি মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে গাড়ি চলাচলের জন্য নির্মিত বাইপাস সড়কটিতে দোকান বসিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে হকাররা।প্রায় ৫ শতাধিক দোকান বসানো হয়েছে সেখানে। হকার বসিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে।

 



অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নাসিক ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের নামে দৈনিক প্রতি দোকান থেকে ১৫০-৫৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয় বলে জানান হকাররা। আনোয়ার ইসলামের দৈনিক বেতনভুক্ত শীতল, নাইম ও জামাল নামে তিন ব্যক্তি ফুটপাত থেকে চাঁদা আদায় করে বলে জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম সড়ক ও জনপথের বিভাগের (সওজ) বিভিন্ন কর্মকর্তা ও পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়ে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করেন।

 



হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের ছোট ছেলে ইলিয়াস ইসলাম লিয়নের নেতৃত্বে কিছুসংখ্যক চাঁদাবাজ চাঁদা আদায় করে আসছে। ইলিয়াস লিয়ন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিলুপ্ত ছাত্রলীগ কমিটির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

 



ফয়েজ নামের এক হকার জানান, আগে চাঁদাবাজ রিপনের হয়ে আমাদের থেকে ফয়েজ চাঁদা আদায় করতো। কিন্তু গত রোজার ঈদের পর থেকে জামাল নামের একজন আমাদের থেকে কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের হয়ে টাকা নেন। আমাদের দোকানের জন্য আমরা দৈনিক ১৫০ টাকা দেই। টাকা না দিলে দোকান উঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

 



নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আরেক হকার জানান, আমাদের নেকবর আলী মার্কেট মালিকের আওতায় ৪০টির অধিক দোকান আছে। দোকান প্রতি ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় হয় সেখান থেকে। তবে আমরা যতটুকু জানি মার্কেট মালিক দেলোয়ার ও তার ভাই আনোয়ার আমাদের থেকে টাকা নিয়ে কাউন্সিলরকে বুঝিয়ে দিয়ে ভাগবাটোয়ারা করেন।

 



কথা হয় 'সময়' পরিবহনের ইউসুফ মিয়া নামের এক চালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, দিনদিন গাড়ির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যার ফলে আমরা বিভিন্ন স্ট্যান্ডে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করি। চিটাগাংরোড থেকে শুরু হয় যাত্রী উঠা। তাই এখানে একটু বেশি সময় নিয়ে যাত্রী উঠাই আমরা। গাড়ি খালি রেখে চলাচল করলে আমরা উপার্জন করবো কীভাবে? এমনিতেই যাত্রীর থেকে গাড়ির সংখ্যা বেশি এখন।

 



জালকুড়ি হাই স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার শোভার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমি এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন কাঁচপুর থেকে স্কুলে যাই। মাঝেমধ্যে শিমরাইল মোড়ের যানযটের কারণে স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যায়।

 



ফুটপাত দখল করে চাঁদাবাজির বিষয়টি জানতে চাইলে নাসিক ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম জানান, চাঁদাবাজির বিষয়ে আমি কিসের বক্তব্য দিবো। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যারা চাঁদাবাজি করে তাদের আটক করা হোক।

 



জানতে চাইলে কাঁচপুর শিমরাইল হাইওয়ে ক্যাম্পের ইনচার্জ একেএম শরফুদ্দিন জানান, পূর্বেও আমরা এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি। এবং এখান থেকে চাদাবাজদের গ্রেফতারও করা হয়েছিল। এর আগেও দুইবার অভিযান করা হয়েছে। কিছু দিন পর আমরা আবার উচ্ছেদ অভিযান করব। সেই সাথে মোবাইল টিম ও বসানো হবে।

 




এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান মানিক বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়ে আমাদের জানা নাই। শিমরাইল মোড়ের ফুটপাতের তালিকাভুক্ত চাঁদাবাজ জামাল ও রিপনকে একাধিকবার আমরা গ্রেফতার করেছি। আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ চাঁদাবাজি করলে আমরা তাদের ছাড় দিবো না। পুলিশের নাম বলে যারা যারা চাঁদাবাজি করে এগুলোকে গ্রেফতার করে আমরা চালান দিবো।

 



অবৈধ স্থাপনা কেন ভাঙা হচ্ছে না জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সওজের নির্বাহী পরিচালক শাহানা ফেরদৌস (সওজ) জানান, উচ্ছেদ করা হচ্ছে রেগুলার। আমরা কিছুদিন পর পরই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করি। তবে আমরা সকালে করলে বিকেলে হকারা বসে পড়েন। আসলে আমাদের উচ্ছেদ করার জন্য পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযানটি পরিচালনা করতে হয়। তার জন্য প্রসেসিং এর প্রয়োজন হয়। আমরা খুব শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো।

 



মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড সম্পর্কে তিনি জানান, আমরা এটি ভেঙে দিলে পুনরায় তা বসানো হয়। আমার আসলে জনবলটা তেমন নেই। আমি এ বিষয়ে ডিসি অফিসের সমন্বয় সভা ও কয়েকবার বলেছি। এটা পুলিশ এবং জেলা প্রশাসন যদি রেগুলার একটা মনিটরিংয়ে রাখেন তাহলে হবে বলে আমার মনে হয়।

 

এই বিভাগের আরো খবর