শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ১৩ ১৪৩১

আমাদের সংগ্রাম আমাদের জীবন-২

জাফরিন বর্ণী  

প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২২  

 

বাঙালিরা এখন সংগ্রামকে নিজের জীবনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর এ সংগ্রামের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। বর্তমান আধুনিক বাংলাদেশে এ সংগ্রামটা এতটাই স্বাভাবিক যে দৈন্দদিন কার্যকলাপের খাতায় এর নাম সবসময় লেখা থাকে।

 

এখন কেউ আর নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত করতে ইচ্ছুক না। বরং অনিরাপদ,ভয়ংকর পরিবেশে কিভাবে সুখে শান্তিতে বসবাস করা যায় আমরা সে প্রশিক্ষন নিচ্ছি। এ কঠিন, অগোছালো, ক্লান্তিময় জীবনই যেন আমাদের চোখে স্বাভাবিক জীবনের প্রতিবিম্ব।

 

তবে স্বাধীনতার কিংবা মুক্তির চাহিদা কিন্তু আজও আমাদের মনের এক কোণায় বসে আছে। সে প্রতিনিয়তই কিন্তু প্রশ্ন করছে, “তুমি কি এখন মুক্ত তাহলে?”

 

বেশি দিন আগের ঘটনা না। ঐ যে হলি আর্টিজান হোটেলের জঙ্গি হামলার খবর, তা তো সবাই জানি। তারও আরো পরের ঘটনা, রাজন নামক ছোট্ট একটি শিশু। বয়স সম্ভবত ৮ কিংবা ১০, এর বেশি হবে না। চুরির অপরাধে তাকে বেঁধে পিটিয়ে শেষমেষ মেরেই ফেলা হয়েছিল।

 

আর সবচেয়ে লেটেস্ট যে খবর , গত বছরেরই কথা। ধর্ষণের অগনিত খবর পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কি যে লেখালেখির বাহার , সত্যি বলতে আমি পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম।

 

কেউ বলছে দেশের মেয়েরা ওড়না পড়তে ভুলে গেছে , টি-সার্ট পড়ে বের হয়ে গেছে এ জন্য এ দশা। কেউ বলছে ছেলের পরিবার ছেলেকে কোনো শিক্ষা দেয়নি, তাই এ অবস্থা। আবার অনেকে বলছে, বর্তমান সমাজে পাশ্চাত্য কালচারের প্রভাবের ফলাফল এগুলো। সকলের হরেক রকম মতামত, অনেক বিচার বিশ্লেষণের ব্যপার আছে এ বিষয়ে। তাই এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

 

একটা হাস্যকর বিষয় হল , যে দেশে চুরির অপরাধে ..যে অপরাধ ভাল ভাবে প্রমানও হয়নি , সে অপরাধে ছোট্ট ৮ বা ১০ বছরের শিশুকে মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলল  সেই দেশেই ধর্ষণের মত ঘৃণিত কাজের শাস্তি এখনো বিশেষ ভাবে বিবেচনা করতে হচ্ছে। কেন? ঠিক জানা নেই। অনেকে অনেক কারন দেখায়। এখন কারটা রেখে কারটা শুনব, বিবেচনা করা কঠিন।

 

তাই এখন ধর্ষণও এদেশে স্বাভাবিক অপরাধ। রাস্তায় শান্তি মনে টিং টিং করে হেঁটে বেড়ালে এমন তো হবেই। এ বাণী সমাজের বয়োজষ্ঠ্যরাই শিখিয়ে দিয়েছেন। ভালই শিখিয়েছেন,বুদ্ধি খারাপ না।

 

রাস্তায় যদি কেউ পাগলা গরু ছেড়ে দেয় , সে গরু তো গুতাবেই। আমরা মানুষ রাস্তায় হাঁটব কেন? রাস্তা কি হাঁটার জায়গা নাকি ?

 

জানি, কথা গুলো এব্রো থেব্রো , লজিক বিহীন। কিন্তু সত্যি বলতে বর্তমানে মানুষের স্বাভাবিক মন মানসিকতা এটাই। এ চিন্তাই হল আধুনিক স্বাধীনতার বিষময় ফল।

 

হলি আর্টিজানে যে জঙ্গি হামলা হয়েছিল তাতে অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তবে একটা উল্লেখ্য বিষয় ছিল যে, ঐ যে জঙ্গিরা, তারা বাঙালি তরুণ সমাজের অংশ ছিল। সম্ভবত ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্র। ইংরেজি মিডিয়ামের কথা তো বলতেই হয়। কখনো সেখানকার কোনো শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছেন?

 

আমার মনে হয় তাদের সাথে আমরা সাধারন বাঙালি কথায় পারব না। কারণ অর্ধেক কথা তো আমরা বুঝবই না। ইংরেজির ভাল স্পিকিং স্কিল অর্থাৎ কথা বলার দক্ষতা না থাকলে তাদের সাথে কথা বলাটা ঠিক হবে না। কারন তারা সুন্দর আমেরিকান আ্যকসেন্ট ব্যবহার করে। ব্যপারটা কেমন যেন।

 

৭১ এর সময়ে , ভারত-বাংলাদেশ-রাশিয়া একপাশে ছিল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার কার্যক্রম চলমান ছিল এবং এর বিপরীত পক্ষে ছিল পাকিস্তান, আমেরিকা,চিন, এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল না।

 

আমি বলছি না যে, ইংরেজি দক্ষতা খারাপ কিছু। তবে কেন যেন মাঝে মাঝে মনে হয় ইংরেজি শিক্ষার আগ্রহ এতটা তীব্র যে, আমরা এখন বাংলা ভাষায়ও এর মিশ্রন করে ফেলছি। কেউ এটা আধুনিকায়ন হিসেবে ধরে নেয় আর কেউ একে সাংস্কৃতিক দূষণ বলে আখ্যায়িত করে।

 

আমি তরুন সমাজের অংশ হিসেবে বলতে পারি , বিষয়টা যাই হোক না কেন। এটা আমাদের মনে বিভ্রম ঠিকই সৃষ্টি করছে। আমাদের কেউ কেউ এ আধুনিকায়নের পাপেট আর কেউ কেউ আবার এ অবস্থায় লক্ষ্যহীন।

 

প্রতিবছর ২৬ শে মার্চ এবং ১৬ই ডিসেম্বর এদেশে ব্যাপক আয়োজনে উদযাপিত হয়। কত না প্রতিযোগিতা , কবিতা ,রচনা, চিত্রকলার বাহার! আমাদের মুক্তির ইতিহাস আমাদের সম্মুখে তুলে ধরে। তবে আমি পত্র-পত্রিকায় বা টিভির বিভিন্ন শোতে একটা ছোট্ট কাহিনী প্রায়ই শুনেছি।

 

একটা ১৫ বছর বয়সী কিশোর। পাকিস্তানি আর্মির একটা ট্যাংক উড়িয়ে দেওয়ার সংকল্প মাথায় নিয়েছিল। সে তার বুকে বোমা বেধে ট্যাংকের নিচে শুয়ে পড়ে। কিশোরটি প্রাণ হারিয়েছিল , কিন্তু নিজের সংকল্পও অসম্পূর্ণ রাখেনি।

 

বিষয়টা জেনে বুঝাই যাচ্ছে, যোদ্ধা হবার কোনো নির্দিষ্ট প্রশিক্ষন থাকে না। আমাদের পরিস্থিতি আমাদের প্রকৃত যোদ্ধাকে উৎসাহ দেবে। এ উৎসাহকে কার্যকরী রূপ দেবার সিদ্ধান্তটা আমাদের।