শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

আমার শখের স্কুলটা শেষ

সাকিবুল সায়েম

প্রকাশিত: ১ এপ্রিল ২০২৩  


গত সাত বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের জন্য চাষাড়া রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে অবস্থিত শ্রী শুভ চন্দ্রের তৈরী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গতকালের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। গত দুই বছর যাবৎ এই বিদ্যালয়ের টিন এবং কাঠের তৈরী অফিসটি পুরাতন হওয়ায় ভঙ্গুর হয়ে যায়। মেরামতের জন্য অনেকের কাছেই সাহায্য চান এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী শুভ চন্দ্র। কিন্তু এই বিদ্যালয়টি টিকিয়ে রাখতে তেমন কোনো সমাজসেবীদের দেখা যায়নি বলে জানান তিনি।

 

 

বেকার হয়েও টুকটাক কাজ করে সম্পূর্ন নিজ অর্থায়নে তিনি এই বিদ্যালয়টি গড়ে তুলেছেন শুধুমাত্র সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদেরকে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা দেয়ার জন্য। প্রথম অবস্থায় এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পরিমাণ খুবই কম ছিলো। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের প্রায় ৬৬ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিত থাকে ৫০-৫৫ জন শিক্ষার্থী। সব বিদ্যালয়ের মত এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বসার জন্য বেঞ্চ নেই তারা চাষাড়া রেলস্টেশনের প্লাটফর্মের ফ্লোরে ছেড়া তেরপালে বসে ক্লাস করে। এসকল বাচ্চাদের অধিকাংশই এতিম। তাদের দেখভাল করার জন্য এই স্যার ছাড়া আর কেউ নেই। 

 

 

গতকাল তিনি কান্নাভেজা কন্ঠে জানান, আমার শখের স্কুলটা শেষ। এই মরা কাঠের ভাঙাচুরা অফিসটা যাও ছিলো গতকালের তুফানে তাও শেষ। যাক আল্লাহ চাইছে তাই হয়ত এমন হইছে। যামুনা ভাই, আর কারো কাছে হাত পাতমু না আল্লাহ চাইলে আমার স্কুলটা ঠিক হইবো নাইলে এমনেই আমার ছাত্রছাত্রীদের পড়াবো ইনশাল্লাহ। এভাবেই দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়তে দেখা যায় সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মানবিক শিক্ষা দেয়ার জন্য ”লাল সবুজের পতাকা শ্রী শুভ চন্দ্র প্রাথমিক শিশু বিদ্যালয়” এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক শ্রী শুভ চন্দ্রকে।

 

 

তিনি আরও বলেন, একটা তেরপাল আছিলো বৃষ্টির দিনে ছাত্রছাত্রীরা যাতে না ভিজে তাই রাখছিলাম কিন্তু ওইটাও এখন পুরনো হয়ে অনেক জায়গায় ছিড়ে গেছে। তবুও ওরা আসে বৃষ্টিতে ভিজেই ক্লাস করবে বলে কিন্তু আমার মনটা তো মানে না । হাত পাতি কেউ দেন কেউ দেন না। এই বাচ্চাগুলোর অধিকাংশই আমার মত এতিম। এদেরকে যদি আমি লেখাপড়া শিখানোর দায়িত্ব না নিতাম নষ্ট হয়ে যেত ওরা। মাদকের শিকার হতো। আমি থাকায় তা সম্ভব হয়নি। ইনশাল্লাহ তা কোনোদিন আমি হতে দিবো না।

 

 

কেউ সাহায্য করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই আসেন তারা বাচ্চাদের খাতা-কলম দেন ছবি তোলেন চলে যান। কিন্তু এই স্কুলটা কীভাবে চালাচ্ছি এই কথা কেউ জিজ্ঞেস করে না। বিগত সাত বছর যাবৎ এই স্কুলটা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি নিজে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। অনেক ইচ্ছা ছিলো কিন্ত পড়তে পারি নাই।

 

 

তাই আমি আমার মত লেখাপড়া শিখতে চাওয়া সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের জন্য সম্পূর্ন নিজ উদ্যোগে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তৈরী করার সিদ্ধান্ত নেই এবং আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় আমি খুব কষ্ট করে এ বিদ্যালয়টি তৈরী করতে সক্ষম হই। বিগত দুই বছর যাবৎ এই বিদ্যালয়ের একমাত্র টিন এবং কাঠের তৈরী অফিসটি পুরনো হয়ে যাওয়ায় ভেঙ্গে পরে। কোনোরকম ভাবে জোড়াতালি দিয়ে চালাচ্ছিলাম গতকালের ঝড়ে এখন তাও লন্ডভন্ড হয়ে গেল।  এন.হুসেইন/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর