রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

ইটভাটা গিলে খাচ্ছে তিন ইউনিয়ন

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০২৩  


# কৃষি জমির মাটি কেটে গভীর গর্তে পরিণত করা হচ্ছে

# তিন বছরের মধ্যে কোন লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি : পরিবেশ অধিদপ্তর

# মাটি কাটার খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমরা লোক পাঠাচ্ছি : বন্দর ইউএনও
 

নারায়ণগঞ্জ এর বন্দর উপজেলার মুসাপুর, ধামগড় এবং মদনপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে হাটলে চোখে পড়বে শুধু ইটভাটা আর ইটভাটা। একই সাথে জায়গায় জায়গায় ভূমিদস্যুদের ভেকু দিয়ে মাটি কাটার দৃশ্যও দেখা যাবে প্রায় প্রতিনিয়ত। স্থানীয়দের দাবি, একসময় রাতের বেলায় লুকিয়ে জমির মাটি কাটলেও এখন আর তার প্রয়োজন পড়ে না।

 

 

এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে সদর্পেই সেই ভয়ানক কাজগুলো করে প্রভাবশালীদের মদদপুষ্ট এসব ভূমিদস্যুরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান কিংবা সাবেক মেম্বার, কেউ স্থানীয় কোন রাজনৈতিক দলের নেতা আবার কেউ ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা কোন প্রভাবশালী লোকের মদদপুষ্ট।

 

 

তাই তাদের এখন আর ডর ভয় কিছুই নাই। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ করা হলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপের অভাবে তা বন্ধ করা আর সম্ভব হচ্ছে না। এসব ভূমিদস্যুদের পিছনে খুব প্রভাবশালীদের সাপোর্ট থাকায় স্থানীয়রাও প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। 

 

 

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে পাওয়া তথ্যে জানা যায় এই তিনটি ইউনিয়নে ৫০ এর অধিক ইটভাটা আছে। এরমধ্যে ২৫টিরও বেশি অবস্থিত মুসাপুর ইউনিয়ন এলাকায়। এক সময় যেসব এলাকায় মাঠের পর দেখা যেত সবুজ ফসলের দৃশ্য এখন সেসব এলাকায় একের পর ইটভাটা।

 

 

এখন এসব এলাকার মানুষকে ইটভাটার এই বৈরি পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে বসবাস করতে হচ্ছে। অথচ এসব ইটভাটার বেশিরভাগই লাইসেন্স বিহীন। যে দু’একটার লাইসেন্স আছে তা-ও মেয়াদোত্তীর্ণ। অভিযোগ রয়েছে প্রতি মৌসুমে এখানকার ইটভাটার মালিকরা মিলে প্রশাসনের পিছনে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা খরচ করে ইটভাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

 

 

এর মধ্যে অনুমতির মেয়াদ শেষ হওয়া প্রতি ইটভাটা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং যেগুলো কোন লাইসেন্স-ই নেই সেগুলো থেকে এক লাখ টাকা করে জমা দিয়ে ইটভাটাগুলো চালানো হচ্ছে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। যা প্রশাসনসহ উপজেলার বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতা এবং পাতি নেতাদের মধ্যে বন্টন করা হয় বলে জানা গেছে। 

 

 

একই সাথে এখানকার কিছু ভূমিদস্যু যেসব চাষের জমি খালি আছে, সেগুলো কেটে পুকুরের চেয়েও বেশি গভীর করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। এসব ইটভাটাগুলো দেশের প্রচলিত সর্বপ্রকার আইন ভঙ্গ করে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মযজ্ঞ। অথচ প্রশাসন তাদের কিছুই করতে পারছে না বলে স্থানীয়রা খুব আতঙ্কে আছে বলে জানান তারা।

 

 

এই বিষয়ে তারা পরিবেশ মন্ত্রনালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। আইন অনুযায়ী কোন আবাসিক এলাকায় ইটভাটা করা যাবে না। কোন কৃষি জমিতে ইটভাটা করা যাবে না। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। একই সাথে গত তিন বছর যাবত তাদের লাইসেন্সও নবায়ন করা হচ্ছে না বলে পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। 

 

 

এরই মধ্যে কিছু দিন আগে এই ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মসজিদের জায়াগার মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উছেছিল। সেই সাথে সেখানকার কিছু নেতা পরিচয়দানকারী সুযোগ সন্ধানীও আছে বলে জানা গেছে। পরে অবশ্য সেই চেয়ারম্যান তার নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন।

 

 

বর্তমানে মুসাপুর, ধামগড় ও মদনপুর ইউনিয়নের বেশিরভাগ জায়গায়ই প্রকাশে কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কুদরত-ই-খুদা’র নির্দেশক্রমে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বন্দর উপজেলার সহকারি ভূমি অফিসার সুরাইয়া ইয়াসমিনের নেতৃত্বে মদনপুর ইউনিয়নে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। সে সময় সেখানে উপস্থিত কাউকে না পাওয়া যাওয়ায় সেখানে নিয়মিত আইনে মামলা পরিকল্পনার কথা জানা গিয়েছে। 

 

 

এসব বিষয়ে কথা বললে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিএম কুদরত-ই-খুদা বলেন, আমরা যেসময়ই জমির মাটি কাটার খবর পাই, সাথে সাথেই সেখানে লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করি।

 

 

এরমধ্যে আমরা বেশ কয়েক জায়গায় মাটি কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি। আবাসিক এলাকায় ইটভাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যখন অভিযান চালাই তখন তারা লাইসেন্স দেখাতে না পারলে জরিমানাসহ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কৃষি জমির বিষয়টি নিয়ে আমরা এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি মিটিং করেছি।

 

 

এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ এর উপপরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন যুগের চিন্তাকে জানান, আমি ২০২০-এ এখানকার দায়িত্ব নিয়েছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এখানকার কোন ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন করিনি। সেই অনুযায়ী এখানকার কোন ইটভাটা-ই এখন বৈধ নয়।

 

 

এগুলো অবৈধ হলে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের ইট তৈরির সময়ের আগে এক মৌসুমের জন্য তারা হাইকোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে আসে।

 

 

তাই আমরা হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করতে পারি না। তবে আমরা অন্যান্য কোন ফল্ট পাইলে এবং যেগুলোর কোন অনুমতি বা কাগজপত্র না থাকে সেগুরো অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করি।  এন.হুসেইন/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর