শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ১৩ ১৪৩১

‘এই গরমে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণ’

ডা. আল ওয়াজেদুর রহমান

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২৪  

 

বেশ কিছুদিন ধরে সর্দিকাশি সারছে না। হালকা জ্বরও আছে। এ তো সিজন চেঞ্জের কুফল বলে অনেকেই ব্যাপারটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন না। এরকম সাধারণ লক্ষণগুলো যে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাথমিক কারণ হতে পারে, সেটা অনেকেই ভেবে দেখেন না।

 

ইনফ্লুয়েঞ্জা, যা অনেক সময় ফ্লু নামেও পরিচিত। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট এক প্রকার সংক্রামক রোগ। এই রোগের লক্ষণগুলো হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে। সবচেয়ে প্রচলিত লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যাথা, পেশী ও হাঁড়ের গিরায় ব্যথা, মাথাব্যথা, কাশি এবং ক্লান্তি অনুভব করা।

 

লক্ষণগুলো সাধারণত ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার দুই দিন পরে শুরু হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক সপ্তাহেরও কম সময় ধরে থাকে। আর পাঁচটা কমন কোল্ড ইনফেকশনের থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জাকে আলাদা করা কঠিন। তিন-চার রকমের ইনফ্লুয়েঞ্জার কথা সাধারণত আমরা বলে থাকি। গুরুতর অবস্থায় ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

শিশু ও বয়স্কদের ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে একটু বেশিই সাবধান থাকা প্রয়োজন। এদের জ্বর, গায়ে প্রবল ব্যথা, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। হতে পারে, ইনফ্লুয়েঞ্জার বদলে নিউমোনিয়া অর্থাৎ বুকে ইনফেকশন হয়েছে।

 

সাধারণত বাচ্চা বা ৬০ বছরের উপরে বয়স হলে, পাশাপাশি ডায়াবিটিস, হৃদরোগ ও অ্যাজ়মার মতো সমস্যা থাকলে অবিলম্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ, এ সকল ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে জটিলতা খুব সহজেই দেখা দেয় এবং একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে সাধারণ রোগীদের তুলনায় এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি প্রায় তিনগুণ বেশি থাকে। তাই এ ধরনের জটিলতা হলে তখন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করার কথা ভাবা হয়।

 

এমনিতে ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসা প্যারাসিটামল দিয়ে করা হয় সাথে কিছু সিমটোমেটিক ট্রিটমেন্ট। পাশাপাশি কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলতে হবে। ধুলোবালি যতটা পারবেন এড়িয়ে চলুন। খাওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে খাবেন। এছাড়া অন্যান্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলাও খুব জরুরি যেমন- কাশি হলে মুখে রুমাল চাপা দিয়ে কাশবেন সবসময়।

 

আসলে ইনফ্লুয়েঞ্জার ইনফেকশন হল ড্রপলেট ইনফেকশন। রোগীর হাঁচি, থুতু ইত্যাদির অংশ রুমাল বা জামায় লেগে থাকলে, তা থেকে বাড়ির অন্য লোকেদের এই ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে খাওয়া দাওয়ার উপর কোনও বিধি নিষেধ আরোপ করা হয় না। তবে রোগীরা বেশিরভাগই কিছু খেতে পারেন না, ফলে সহজপাচ্য খাবার দেওয়াই সবচেয়ে ভাল। আর প্রচুর পরিমাণে ফ্লুইড অর্থাৎ তরল খাবার অবশ্যই খাবেন।

 

ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে ভ্যাক্সিনেশনের ব্যবস্থা আছে। শিশু ও বয়স্ক মানুষরা এই ভ্যাক্সিন নিলে অনেকটাই সুরক্ষিত থাকতে পারবেন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভ্যাকসিন নিয়ে ফেলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

 

অনেকেই মনে করেন এই রোগটি শুধু শীতকালে হয়, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে বিশেষ করে আমাদের দেশে গরমকালের শুরুতে অর্থাৎ এপ্রিল মাস থেকে এই রোগটির প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, তাই এই তীব্র গরমে আসুন আমরা সচেতন হই এবং সাবধান থাকি। লেখক : ডা: আল ওয়াজেদুর রহমান (এমবিবিএস,এমপিএইচ,এফসিজিপি,সিসিডি) ফ্যামিলি মেডিসিন ও ডায়াবেটিস চিকিৎসক।এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর