শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ১৩ ১৪৩১

ওসমান পার্টি এখনো প্রকাশ্যে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২৪  

জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেছিলেন ‘নারায়ণগঞ্জে কোন দল নেই। নারায়ণগঞ্জে শুধু ওসমান লীগ আর ওসমান পার্টি আছে।’ ওসমানদের উদ্দেশ্য করে জাপার প্রয়াত চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের পর থেকে নারায়ণগঞ্জে ওসমানদের রামরাজত্ব আরো বেপরোয়া ভাবে পরিচালিত হতে থাকে। কিন্তু গত ৫আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ওসমানদের সাম্রজ্য ধসে পড়লে ওসমানরা নারায়ণগঞ্জ ত্যাগ করলে ওসমানলীগ সমর্থিত নেতারা গা ডাকা দেন। অথচ, গত ৫আগস্টের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ওসমান পার্টির নেতারা মামলার আসামী হলেও এখনো ওসমান পার্টির নেতারা রাজনৈতিক কার্যকলাপ প্রকাশ্যে পরিচালনা করে নারায়ণগঞ্জ জুড়ে ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

 


রাজনৈতিক বিশ্লেষক সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জে ওসমান লীগ ও ওসমান পার্টি হচ্ছে উৎপত্তি স্থল হয়েছে খান সাহেব ওসমান আলীর বংশপরম্পরাক্রমে। খান সাহেব ওসমান আলী ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ছিলেন এম ওসমান আলী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সেসময়ের রাজনীতিবিদরা তাকে অত্যন্ত সমীহ করতেন। পরবর্তীতে খান সাহেব ওসমান আলীর বড় ছেলে একেএম সামসুজ্জোহা বাবার পথ ধরেই রাজনীতিতে এসে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। 

 

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে নির্বচনে তিনি সাংসদ হন। বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতির ময়দানে থাকা সামসুজ্জোহা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। সেসময় থেকেই নারায়ণগঞ্জ জুড়ে আওয়ামীলীগকে ওসমানদের নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে উত্তর বলয় ও দক্ষিণ বলয় কেন্দ্রীক বিভক্তির রাজনীতির দিকে দাবিত করেন। সামসুজ্জোহা বেঁচে থাকতেই তার বড় ছেলে নাসিম ওসমান স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়ার  মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে ওসমান পার্টির জন্মলগ্ন শুরু হয় এবং জাতীয় পার্টি থেকে একাধিকবার সাংসদও হন নাসিম ওসমান। এছাড়া নাসিম ওসমান এক সময় আওয়ামীলীগের সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। 

 

যার কারণে নারায়ণগঞ্জে একই সাথে ওসমান লীগ ও ওসমান পার্টিকে নেতৃত্ব দিতেন। কিন্তু তার ছোট ভাই একে এম শামীম ওসমান আওয়ামীলীগের রাজনীতি সক্রিয় হওয়ার পর ওসমানলীগের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে নেন। একপর্যায়ে ওসমানীয় সাম্রজ্য ওসমান পার্টি থেকে নিয়ন্ত্রণ  করেন  নাসিম ওসমান ওসমানলীগ থেকে শামীম ওসমান। পরবর্তীতে নাসিম ওসমান পরলোকগমন করলে  তার মেজু ভাই সেলিম ওসমান ওসমান পার্টির নিয়ন্ত্রণ নেন। অথচ, কালে ভাদ্রে ওসমানরা ওসমান পার্টি ও ওসমান লীগ করে ওসমানীয় সাম্রজ্য সৃষ্টি করে নারায়ণগঞ্জকে জিম্মি করে রেখেছিলেন। যার কারণে ওসমানলীগের নিয়ন্ত্রক শামীম ওসমান গডফাদার তকমা পেয়েছিলেন। তবে  ওসমানলীগ ও ওসমান পার্টি  করলে ও তার সর্বদা আওয়ামীলীগ  নির্ভর ছিলেন।  যার কারণে  আওয়ামীলীগ ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা চারবার সরকার গঠন করলে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ওসমান লীগ ও ওসমান পার্টিও দোসররা ওসমানীয় সাম্্রজ্যে আদর্শে নারায়ণগঞ্জ জুড়ে ব্যাপক  লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, গুম, হত্যা  করে আঙ্গুল  ফুলে কলা গাছ হয়েছেন। কিন্তু  ২০২৪ সালের ৫আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলে ওসমানলীগের নিয়ন্ত্রক  শামীম ওসমান পালিয়ে গেলে  তার অনুসারী ওসমানলীগের সমর্থকরা গা ডাকা দেন।  

 

কিন্তু ওসমান পার্টি নিয়ন্ত্রক সেলিম ওসমানও পালিয়ে গেলেও তার অনুসারী ওসমান পার্টির নেতারা এখনো রাজনৈতিক কার্যকলাপ নির্বিঘ্নে পরিচালিত করছেন।  তার হলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু ও নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম ইকবাল  ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোদাচ্ছেরুল  হক দুলাল  ও সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন,নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ও বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন , নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধান, নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক রিপন ভাওয়াল। নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টিও সভাপতি সানাউল্লাহ সানুর পৈতিক ভিটা বন্দরে হওয়ায় এখনো বন্দরে অবস্থান করছেন।

 

 তাছাড়া এলাকায় এখনো বিএনপির সাথে আঁতাত করে রাজনৈতিক প্রভাব সমন্বত রেখেছেন। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মামলার আসামী হলেও এখনও প্রকাশ্যে বন্দরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে  সানু। অপরদিকে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক  আবু নাইম ইকবাল নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সোনারগাঁ থেকে এখনো সদস্য থাকলেও নির্বিঘ্নে সোনারগাঁয়ে  তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বসে রাজনৈতিক ও  তার  জেলা পরিষদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মামলার আসামী হয়েও এখনো প্রকাশ্যে ইকবাল। নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাতীয় পার্টিও সভাপতি মোদাচ্ছেরুল  হক দুলাল গডফাদার শামীম ওসমানের বন্ধু এবং ওসমান পার্টিও ওসমানীয় সাম্রজ্যেও দোসর হয়েও এখনো নারায়ণগঞ্জে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন। অপরদিকে মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন ও বন্দরে ২৪নং ওয়ার্ডেও কাউন্সিল থাকলেও তাকে অপসারণ করা হলে এখনো বন্দরে প্রকাশ্যে  রাজনৈতিক  কার্যকলাপ করছেন নির্বিঘ্নে এমনকি  তার অনুসারীরাও পূর্বের ন্যায় তাদের  দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সেক্টরগুলোও আবারও নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টায় রয়েছেন। 

 

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টিও সহ-সভাপতি ও বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন  চেয়ারম্যান পদে  না থাকলেও এলাকায় প্রকাশ্যে থাকছেন বিএনপির সাথে আতাঁত করে রাজনৈতিক প্রভাব সমন্বত রেখে প্রকাশ্যে রয়েছেন।  অথচ সে ছিলেন ওসমান পার্টির  নিয়ন্ত্রক সেলিম ওসমানের অন্যতম ও আস্থাভাজন এবং বন্দরের সেলিম ওসমানে সকল অপকর্মের ক্রাইম পার্টনার। নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধান কিছুদিন পূর্বে একটি খেলাধুলার প্রোগ্রামে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মামলার আসামী  হয়েও প্রকাশ্যে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি খেলাধুলার অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে অংশগ্রহণে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক রিপন ভাওয়াল ওসমান পার্টির অন্যতম নিয়ন্ত্রক সেলিম ওসমানের আস্থাভাজন এবং সেলিম ওসমানের সকর অপকর্মের স্বাক্ষী এই রিপন ভাওয়ালও এখন প্রকাশ্যে শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলাফেরা করতে দেখা যায়। ওসমান পার্টির ওসমানীয় সাম্রজ্যের একটি অংশ হত্যা মামলার আসামী হয়েও এখনো প্রকাশ্যে থাকার কারণে বিভিন্ন মহল থেকে তাদের গ্রেফতারের দাবি উঠছে। কারণ তার বিভিন্ন সময় ওসমানদের অজেন্ট বাস্তবায়নে বিভিন্ন অপকর্মে ভূমিকা রেখেছে। আবারও ওসমানদের নির্দেশক্রমে যেকোন সময়ে ওসমানদের অজেন্ট বাস্তবায়নে যেকোন ধরণের অপকর্ম সংগঠিত করার শঙ্কা রয়েছে বলে বিভিন্ন মহলের অভিমত রয়েছে।  
 

এই বিভাগের আরো খবর