মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩১

করোনা প্রতিরোধে যা যা করণীয়

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২১  

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এই অঞ্চলে মহামারীর কেন্দ্রবিন্দু থাকতে পারে দীর্ঘদিন। এক বছরে করোনা মোকাবেলার প্রস্তুতি ও সক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ আমাদের ছিল। সেদিক থেকে আমরা খুব একটা সফল হইনি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যেসব পরামর্শ দিয়েছিলেন তাও বাস্তবায়িত হয়নি।


সাধারণ মানুষও সব ভুলে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া শুরু করেছিল। তাতে সংক্রমণ বেড়ে গিয়ে প্রতিদিন এখন সংক্রমণ আর মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। সরকারি হিসেবে করোনার সংক্রমণ এখন নিম্নগামী। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তব চিত্রটা এখনো অজানা। ‘সীমিত’ লকডাউনের সময় ঢাকা ছেড়ে লাখ লাখ মানুষ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন আবার তারা ফিরে আসতে শুরু করেছে।

 

ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। সরকার বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। জনসচেতনতামূলক প্রচারণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য বিতরণেও ঘাটতি ছিল। ফলে জনমানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

 

বিশ্বজুড়েই এই মুহূর্তে সংক্রমণ বাড়ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, কোভিড-১৯ একটি আরএনএ ভাইরাস। প্রকৃতিগতভাবেই এটি নিজের রূপান্তর ঘটায় (মিউটেশন)।নিজে থেকেই নতুন ধরণের জন্ম দেয়। নতুন ধরনগুলো হয় আরও বেশি শক্তিশালী। ক্রমাগত নিজেদের রূপান্তর ঘটিয়ে ভাইরাসগুলো শক্তিশালী হচ্ছে, বাড়াচ্ছে সংক্রমণ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিকোণ থেকে জনসমাগম সংক্রমণ ছড়াতে সহায়তা করে। বাংলাদেশে তাই হয়েছে।

 

তাছাড়া করোনার মধ্যেও গণজমায়েত করা, গণপরিবহন ব্যবহার, বাজার-রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য স্থানে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে না পারা, সুযোগ থাকার পরও করোনা মোকাবেলায় সঠিক প্রস্তুতি না নেওয়া সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

 

সমাধানের পথ
করোনার এই সংক্রমণ থামাতে না পারলে বড় স্বাস্থ্য বিপর্যয় হতে পারে। অর্থনীতিতে এর ক্ষতিকর প্রভাব আরও বাড়বে। তাই কয়েকটি বিষয় জোরদার করা আবশ্যক।

মানুষকে ঘরে থাকতে উৎসাহিত করুন: দেশের সর্বোচ্চ সংক্রমণ হার ঢাকা ও চট্টগ্রামে। এসব এলাকায় মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকতে উৎসাহিত করতে হবে। তাদের আন্তরিকভাবে বোঝাতে হবে। এই দুই শহরে অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য জনসাধারণকে ঘরে থাকতে হবে। না হলে লকডাউন দিয়ে কাজ হবে না।

 

টিকা নিতে উৎসাহিত করুন: গণটিকা কর্মসূচির প্রথম ডোজ শেষ, দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া চলছে। কিন্তু এই কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় ধীরগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আমরা একটা উৎস থেকে টিকার উপর নির্ভর করে বসে ছিলাম, ফলে অন্যান্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহে পিছিয়ে গেছি। ফলে টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ১৫ মের মধ্য টিকার বিদ্যমান মজুত শেষ হবে—এমন খবর বেরিয়েছি।

তাই দ্রুততম সময়ে একাধিক টিকা আনতে হবে। পাশাপাশি দেশেই টিকা তৈরির পরিকল্পনা নিতে হবে। সবাইকে টিকা নিতে হবে। তবেই আমরা করোনা প্রতিরোধ করতে পারব।

 

বয়োজ্যেষ্ঠদের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন: করোনায় মারা যাওয়া ৮০ শতাংশেরই বয়স ৫০ বা তার বেশি। তাই বয়োজ্যেষ্ঠদের বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। যাঁরা করোনায় ভুগছেন বা যাঁদের মৃদু উপসর্গ আছে, তাঁদের সবাইকে হাসপাতাল বা ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। অবস্থা খারাপ না হলে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, তবে যোগাযোগটা থাকতে হবে। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

 

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা: রোগী ব্যবস্থাপনায় আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রন্টলাইনারদের প্রস্তুত রাখতে হবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করতে হবে। কোভিড-১৯ চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত সকলকে উৎসাহিত করতে হবে। গণমাধ্যমে এ বিষয়ক প্রচারণা চালাতে হবে। 
এতে জনসচেতনতা বাড়বে, ব্যক্তি পর্যায় থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হবে। টেলিমেডিসিন সেবাকে হাসপাতাল সেবার সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম; তবে করোনা–পরবর্তী জটিলতা শরীরের অনেক ক্ষতি করে। ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে, কিডনি, লিভার ও ফুসফুসের ক্ষতি হয়, দীর্ঘকালীন স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয়।

 

মাস্ক ব্যবহার: মূল করণীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মাস্ক ব্যবহার। সব সময় সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ সংক্রান্ত জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসতে হবে। মসজিদ, মন্দির, মহল্লা, ওয়ার্ড সবখানে মাস্ক ব্যবহারে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে।

 

সার্বজনীন ও দীর্ঘমেয়াদী প্রচারণা: এক বছরের বেশি হয়ে গেলেও করোনা সতর্কতার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তেমন কোনো প্রচারণা নেই। সবার কাছে করোনা প্রতিরোধ বিষয়ক তথ্য পৌঁছে দিতে সকল পর্যায়ে সৃজনশীল প্রচারণা দরকার। সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টাকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা; এমনকি কর্পোরেট সংস্থাগুলোও এ কাজে এগিয়ে আসতে পারে। আমরা যতভাবে মানুষের কাছে যেতে পারব, তত তারা সতর্ক হবে; প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাও জোরদার হবে।

গবেষণা: করোনা সংক্রান্ত গবেষণায় মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। গবেষণা থেকে পাওয়া জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা যাবে।

এই বিভাগের আরো খবর