বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আশ্বিন ৪ ১৪৩১

কর্মীদের বিপদের মুখে ফেলে পালিয়ে যান শামীম ওসমান

সৈয়দ রিফাত

প্রকাশিত: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

 

‘বাবা-মা’কে গর্ব করে বলতাম আমি শামীম ওসমানের রাজনীতি করি’। ‘এমন একজনের রাজনীতি করি যাকে শুধু নারায়ণগঞ্জ নয় পুরো বাংলাদেশ এমনকি বর্হিবিশ্ব পর্যন্ত চেনে’। ‘যার খেলা হবে স্লোগান দেশ ছাপিয়ে বিদেশের মাটিতেও বেশ প্রচারিত’। ‘প্রায়শই বলতেন, এক রাতে দুই-চার লাখ লোক জড়ো করার ক্যাপাসিটি আমার জানা আছে’।

 

 

‘আমরাও সেটাই বিশ্বাস করতাম’। ‘সবাই বলতো আর যাই হোক দেশের প্রভাবশালী এই সাংসদ একজন সাচ্চা কর্মীবান্ধব নেতা’। ‘অথচ, বাঘের মতো হুঙ্কার দেয়া সেই শামীম ওসমান লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেলেন’। ‘যাবার আগে কাউকে হুশিয়ার তো দূরে থাক কোন বার্তাও দিয়ে যাননি কথিত প্রভাবশালী শামীম ওসমান’। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা।

 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা যুগের চিন্তার এই প্রতিবেদককে বলেন, ৩ আগস্ট-ই স্ব-পরিবারে নারায়ণগঞ্জ ছাড়েন নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। রাজধানী ঢাকায় একদিন অবস্থান করে ৪ তারিখ সে কোথায় গিয়েছে এটা গুটিকয়েক লোক ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না।

 

 

দূরে অবস্থান করেই আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন, রাজপথে অবস্থান করার জন্য। আমরা যারা ছাত্রলীগ করি তারা রাজপথেই ছিলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিভাবে দমানো যায় সেই নিয়ে আমরা সবরকম চিন্তাধারায় মগ্ন ছিলাম। ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমরা নারায়ণগঞ্জেই অবস্থান করেছি। শামীম ওসমান দূর থেকেই ৪ আগস্ট পর্যন্ত সকলকে বিভিন্ন রকম দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

 

৫ আগস্ট পর্যন্ত তার ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে আমাদের কাছে বিভিন্ন বার্তা আসে। আন্দোলন দমাতে ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আমরা আমাদের নেতার নির্দেশনা মোতাবেক রাজপথে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এরপরের সবকিছু তো সকলেরই জানা। দেশছেড়ে পালিয়ে যান বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীস শেখ হাসিনা। জয় হয় ছাত্র-জনতার। আর ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পরি আমরা।

 


মহানগর ছাত্রলীগের ওই নেতা আরও বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবর চাউর হতে থাকলে ভিন্ন রূপ তৈরি হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুনি আমি সহ আমাদের ছাত্রলীগের অনেকের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা এসে আমাদের খোঁজ চাইছে। বুঝতে বাকি থাকে না, হাতের কাছে পেলে হয়তো আমাদের জানে মেরে ফেলবে।

 

 

কিভাবে আর কি কষ্ট করে যে, আমরা নারায়ণগঞ্জ ছেড়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। অনেক কষ্ট করে আমরা চার পাঁচজন চোরের মতো করে পালিয়ে নারায়নগঞ্জ ছেড়েছি। সারারাত অবস্থান করেছি রাস্তায়। পরদিন যেতে পেরেছি আমাদের গন্তব্যে।

 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা যুগের চিন্তার এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা যাকে অনুসরণ করে রাজনীতি করতাম। যার সব কথা মেনে চলতাম। সেই শামীম ওসমান কিভাবে পারলেন আমাদের কোন দিক নির্দেশনা না দিয়ে পালিয়ে যেতে। একবারও কি তার কর্মীদের কথা ভাবলেন না। তা মানে তিনি প্রমাণ করে দিলেন, ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’।

 

 

সে আমাদের সাথে যেটা করেছে সেটা ক্ষমার অযোগ্য। নিজে নিরাপদে সরে গিয়ে কর্মীদের বিপদের মুখে ফেলে রেখে গেছেন তিনি। হয়তো সৃষ্টিকর্তা চেয়েছে বলেই আমরা এখনো বেঁচে আছি। আর না হলে জনরোষের মুখে হয়তো সেদিন মারা পরতাম। জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল শামীম ওসমানের রাজনীতি করা!

 


প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণঅভ্যুথানে হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেন আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা। গ্রেপ্তার আতঙ্কে গা-ঢাকা দিয়েছেন প্রায় সব পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতারা। তবে, এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি যাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তাদের মধ্যে একজন নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।

 

 

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, শামীম ওসমান ভারতের দিল্লীতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে তাকে দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত বাংলাদেশী এক শিক্ষার্থী।     এন. হুসেইন রনী  /জেসি