বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

কর্মীদের মাথা বিক্রি করেই চলতেন নাহিদ-জিকু

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২৪  

বিএনপির কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচি আসলেই যেন পকেট ভারী হওয়া শুরু করতো জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান জিকু। নিজ সংগঠনের সহ-সভাপতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের মাথা বিক্রি করে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই কেন্দ্রীয় পার্টি অফিস থেকে অর্থয়ান করাসহ  নারায়ণগঞ্জের বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পোগ্রামের নামে একক পকেট বন্দি করতেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। 

 

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে গত বছরে ইফতার পার্টির নামে নারায়ণগঞ্জের হাই প্রোফাইলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ১ লাখ, ২ লাখ করে টাকা তুলে আবার বিভিন্ন বিএনপির মাইন্ডেট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে পুলিশের বাধায় ইফতার পার্টি না হওয়ায় পুরো টাকাই নিজেদের পকেট বন্দি করেন তারা। একই সাথে ১০ ডিসেম্বর, ২৮ অক্টোবর, হরতাল-অবরোধ, গত ৫ আগষ্টের পূর্বের আন্দোলন, ৫ আগষ্টের পর ঢাকায় কর্মসূচি, ইউনিট কমিটি গঠনের নামে খসড়া বানিয়ে কমিটি বানিজ্যেসহ কমিটির নেতাকর্মীদের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ ব্যাপক অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। 

 

এ ছাড়া কমিটি গঠনের দেড় বছরে ও ইউনিট কমিটি গঠনে ব্যর্থতার প্রমান দিয়ে জেলা ছাত্রদল। এর সব কিছুর বাহিরে জেলা ছাত্রদলের সব থেকে বেশি আলোচনা ছিলো কমিটির ৯ জনের মধ্যে অনঐক্য। সভাপতি ও সেক্রেটারী ছাড়া কমিটির বাকি সকলেই ছিলো জেলা ছাত্রদলের আলাদা ব্যানারে। এদিকে ইউনিট কমিটি নিয়ে আলোচনা আসলে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করা গেলে আবার একত্রিত হয়ে কমিটির নামে চাঁদাবাজি অবহৃত রাখেন তারা। 

 

এদিকে জেলা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগসহ বিভিন্ন ব্যর্থতায় গত (১৭ অক্টোবর) রাতে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এদিকে কমিটি ভাঙার এক মাসে ও কমিটি নিয়ে আলোচনা শোনা যাচ্ছে না। যার ফলে মাথা কর্মীদের মাথা বিক্রি করে চলা অনেকটাই নাই বলা চলে এদের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা ছাত্রদলের কমিটি রিটেক আনতে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। যা নিয়ে সমালোচনা ঝড় বইছে ছাত্রদল জুড়ে। এদিকে এই দুই জনের বিরুদ্ধে নিজ নিজ থানা এলাকায় পট পরিবর্তনের পর ভাঙচুর-লুটপাট-দখলের অভিযোগ রয়েছে।

 


সূত্র বলছে , জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে লাগাতার কর্মসুচির ঘোষণা দেন। এমতা অবস্থায় বিএনপির সহযোগী সংগঠন জেলা ও মহানগর ছাত্রদল দুই সংগঠনের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও শাহেদ আহম্মেদ যুবদলের কমিটিতে স্থান পাওয়া ছাত্রদল নারায়ণগঞ্জে ছন্নছাড়া হয়ে পরে। সে সময় দফায় দফায় দলীয়ভাবে কর্মসূচি ঘোষণা লক্ষ্য করা যেত কিন্তু ছাত্রদলের ব্যানারে কোন নেতৃবৃন্দকে লক্ষ্য করা যেত না। এই ভুঙ্গর অবস্থায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল জেলা ও মহানগরে নতুন কমিটি ঘোষণা করার গুঞ্জন তুললে জেলা ও মহানগর জুড়ে ডজনে ডজনে ছাত্রদলের ব্যানারে নিজেদের অবস্থান জাগান দেন এনকি অনেকে নিজ বলয়ের নেতাদের দিয়ে কেন্দ্রে গ্রুপিং শুরু করেন। 

 

এমন টানা প্রতিযোগীতায় গত ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। যেখানে জেলা ছাত্রদলে স্থান পায় দুইজন অযোগ্য নেতা। সভাপতির দায়িত্ব পান নাহিদ হাসান ভূঁইয়া যিনি রূপগঞ্জে বসবাস করেন তার নেতা যিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। নাহিদ হাসান ভূঁইয়া বিগত দিনে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কের দায়িত্বে থেকে রূপগঞ্জ ছাত্রদলকে ধ্বংস করে এসেছিলেন। একই সাথে কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান জিকু তার থানা আড়াইহাজার। তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমনের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত। বিগত দিনে এই জিকু আড়াইহাজার ছাত্রদলের আহ্বায়কের দায়িত্বে থেকে আড়াইহাজার ছাত্রদলের রাজনীতি ধ্বংস করে এসেছেন।  

 

জেলা ছাত্রদলের কমিটি হওয়ার পর থেকেই জেলা ছাত্রদলে কোন্দলের দেখা মিলেছে। যার মূল বিতর্কের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ হাসান ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান জিকু। কমিটি গঠনের পর নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে এদের নেতৃত্বে একত্মতা প্রকাশ করতে গেলেই। রমজান চলে আসে। সে সময় কেন্দ্রীয়ভাবে নিজ নিজ জেলায় ইফতার পার্টির পালনের কর্মসূচি দিলে সে সময় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে সাক্ষাৎ ও ইফতার পার্টির জন্য টাকা কালেকশন শুরু করেন এরা। এ সময় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম মান্নানের কাছে গেলে তিনি ১ লাখ টাকা ডোনেট করেন, নির্বাহী কমিটি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ১ লাখ, নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ১ লাখ, নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান সুমন ১ লাখ, একই সাথে জেলা নেতৃবৃন্দসহ বিএনপির বিভিন্ন ব্যবসায়ীক নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আরো কয়েক লাখ টাকা তুলেন।

 

পরবর্তীতে পুলিশর বাধায় ফতুল্লায় ইউনাইটেড ক্লাবে বন্ধ হয়ে যায় ইফতার পার্টি। সে সময় ঈদুল ফিতরে ৪০ জন গরীব দুস্থদের মাঝে শাড়ী, লুঙ্গি বিতরণ করে বাকি সব টাকা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পকেট বন্দি করেন। যা নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে পরতে হয় তাদের। একই সাথে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘোষিত হলে কেন্দ্রীয়ভাবে ২ লাখ টাকার কাছাকাছি এনে এটা ও বাকিদের না জানিয়ে নিজেদের পকেট বন্দি করেন। এরই মাঝে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে হরতাল-অবরোধে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল ছিলো উধাও। 

 

একই সাথে গত ৫ আগষ্টের পূর্বের ছাত্র আন্দোলনে ও জেলা ছাত্রদলের কোন নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। এদিকে ৫ আগষ্টের পর ঢাকায় বিএনপির প্রথম কর্মসূচিতে মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকাসহ আরো কয়েকজন নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা এনে সব টাকা দুই নেতা নিজেদের পকেট বন্দি করেন। বর্তমানে এই দুইজন তাদের চাঁদাবাজির স্থান আবারো ভারী করতে জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে আবারো স্থান পেতে বিভিন্ন স্থান থেকে জোরদার লবিং করাচেছন। 

এই বিভাগের আরো খবর