বুধবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৪ ১৪৩১

কাকে ভয় দেখালেন শামীম ওসমান

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২০  

বিশেষ প্রতিনিধি : অনুষ্ঠানটি ছিল পুলিশ মেমোরিয়াল ডে। স্থান ছিল মাসদাইর পুলিশ লাইনস। আয়োজক ছিল জেলা পুলিশ। আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ডিসি, এসপি। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শামীম ওসমান বলেছেন, ২০০১ সালে তার কাছে পুলিশের চেয়ে বেশি অস্ত্র ছিল। 

 

গতকাল গণমাধ্যমে সংশোধনী দিয়ে শামীম ওসমান বলেছেন ২০০১ সাল নয় কথাটি হবে ৯১ সালে। পুলিশ প্রশাসন আয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে অস্ত্রভান্ডার থাকার কথা স্বীকারোক্তির পাশাপাশি আরো অনেক কথা বলেছেন। প্রশাসনকে সৎ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রশাসনকে ইঙ্গিত করে বলেছেনস অনেক কথা। 

 

তিনি একজন সংসদ সদস্য আইন প্রণেতা। তিনি বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়েই পুলিশের চেয়ে তার অস্ত্রভান্ডারে বেশি অস্ত্র থাকার তথ্যটি ফাঁস করেছেন বলে মনে করেন বোদ্ধামহল। 

 

তাদের মতে,  কোন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দু’টি বৈধ অস্ত্র রাখতে পারেন। একটি পিস্তল ও একটি শর্টগান। যেহেতু শামীম ওসমানের কাছে পুলিশের চেয়ে বেশি অস্ত্র আছে-তাহলে সেগুলি অবশ্যই অবৈধ। ৯১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দিনকাল বদলে গেছে। শামীম ওসমান অবৈধ অস্ত্রগুলো জমা দেননি। জমা না দেয়া মানে অস্ত্রগুলো তার কাছে রয়ে গেছে। 


শামীম ওসমান অনুষ্ঠানে আরো বলেছেন, আমি বড় গুন্ডা। কোনো মাস্তান, বন্দুকবাজ ও লাঠিয়াল বাহিনীর আমার দরকার নেই। কারণ আমি নিজেই জানি আমার থেকে বড় মাস্তান আর কেউ নাই। আইনশৃংখলা বাহিনীর  প্রোগ্রাম। 


কাজেই প্রশ্ন উঠেছে সেখানে এই সকল কথা বলে উনি আসলে কাকে ভয় দেখাতে চেয়েছেন। কেনই বা প্রয়োজন পড়লো ভয় দেখানোর। আসলে এটা শামীম ওসমানের পুরনো টেকনিক। 


নারায়ণগঞ্জে নতুন ডিসি, এসপি জয়েন করলে নানা বাহানা ও কসরতে শামীম ওসমান বুঝিয়ে দেন তিনি নারায়ণগঞ্জের নিয়ন্ত্রণ কর্তা। এবারো একই কারনে পুরনো কায়দায় ভয় দেখানোর চেষ্টা। 


এদিকে, ১০ মাস আগে নারায়ণগঞ্জে জয়েন করেছেন জেলা প্রশাসক মো: জসীমউদ্দিন এবং ৩ মাস যাবৎ পুলিশ সুপার মো: জায়েদুল আলম। সম্ববত তাদেরকে বশে আনতেই শামীম ওসমান বাক্য বান ছুঁড়েছেন।


শামীম ওসমান বিশেষ ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, প্রশাসনের মধ্যে দলবাজিটা আমি পছন্দ করি না। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ করতে এটা কোনো কোয়ালিটি হতে পারে না। আপনি যোগ্যতা সম্পন্ন এটাই আপনার কোয়ালিটি। 


নারায়ণগঞ্জে পুলিশ প্রশাসনের কিছু সংখ্যক লোকের কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের অন্য কোন দলকে দমন করার জন্য পুলিশের দরকার নেই। নারায়ণগঞ্জে আমরা একলাই যথেষ্ট। 


আমার কাছের লোক হলেও আপনারা কাউকে খাতির করবেন না। কোনো মাস্তান, বন্দুকবাজ ও লাঠিয়াল বাহিনীর আমার দরকার নেই। কারণ আমি নিজেই জানি আমার থেকে বড় মাস্তান আর কেউ নাই। 


নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে সৎ ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি সংসদ সদস্য হিসেবে নয়, জনগণ হিসেবেই তাদের প্রত্যেকটি কথায় টের পাই তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে চান। তাদের নিয়ে আমি গর্ব করি। স


ামাজিক অবক্ষয় রোধের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার একার পক্ষে নারায়ণগঞ্জকে ঠিক রাখা সম্ভব নয়। আপনাদের সকলকে নিয়েই নারায়ণগঞ্জকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য তিনি পুলিশ প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।


শামীম ওসমান গর্বের সাথে বলেন, রাতের বেলা ডাকলে এখনো ২ লাখ লোক বের করতে ১ ঘন্টা সময় লাগে ওই ক্যাপাসিটি আমার আছে। ’৭৯ সনে জিয়াউর রহমানকে আটকে রাখার লোক আমরা। কীভাবে আন্দোলন করতে হয় আর কীভাবে আন্দোলন ঠেকাতে আমরা সেটা জানি।


শামীম ওসমানের ভয় দেখানো সুলভ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম যুগের চিন্তাকে বলেন, সে এই কথা বলেছে প্রশাসনকে করায়ত্ব করার জন্য। না’গঞ্জে ভয়ের শাসন কায়েম করার জন্য। জনমনে ভীতি সঞ্চার করতেই এই বক্তব্য। 


শামীম ওসমান প্রমাণ করলেন অতীত থেকে (৯১ সাল) এ পর্যন্ত যত হত্যাকান্ড ঘটেছে সকল হত্যাকান্ডে তার ক্যাডার বাহিনী জড়িত। তার ক্যাডারদের অস্ত্র আছে। একজন এমপি’র লাগামহীন বক্তব্য দেয়া উচিৎ নয়।


নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন বলেন, শামীম ওসমান প্রকাশ্যেই বলেছে তার কাছে অস্ত্র ছিল। হয়তো আবেগে এটা বলেছে। তবে এটা বলাটা সমীচীন হয়নি। রাত বারোটার সময়ও সে দু লাখ লোক হাজির করার ক্যাপাসিটির কথা বলেছেন। সবই বলেছেন প্রশাসনের সামনে। অতএব বিষয়টা প্রশাসন দেখুক।


সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ওরা চায় সবাই ওদের ভয় পাক। শুধু ভিন্ন রাজনৈতিক দল নয় নিজের দলের মধ্যে নেতাকর্মীদের এবং ব্যবসায়ীদেরকে ভয় পাওয়াতে চায়। এর জন্য যা যা দরকার তাই করে। ওরা মানুষের উপর হামলা চালায়। লাশ ফেলে। 


অস্ত্রভান্ডারের কথা বলে। সচরাচর ওরা এসবই করে বেড়ায়। প্রশাসনকে বাগে নেয়ার জন্য ওদের নিজস্ব কৌশল আছে। ভীতিকর কথা বলে সকলকে বাগে রাখতে চায়। শামীম ওসমান যেভাবেই বলুক যে উদ্দেশ্যেই বলুক কথাটা সঠিক। কথাটা সত্য। 


শামীম ওসমান অস্ত্রভান্ডারের কথা স্বীকার করেছেন। আমরা তাকে অস্ত্র জমা দিতে দেখিনি। পুলিশ প্রশাসনের উচিৎ তাঁর অস্ত্রের সন্ধান করা। অস্ত্রের সন্ধান করার জন্য তাকে গ্রেফতার করা উচিৎ।


আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরউদ্দিন বলেন, এটা শামীম ওসমানের স্ট্যান্টবাজি হলেও আমরা সত্য বলে ধরে নিলাম। যেহেতু তিনি নিজে স্বীকার করেছেন পুলিশের অনুষ্ঠানে। অস্ত্রগুলো গেল কোথায় ? 

তিনি একজন বড়মাপের নেতা। হাজার হাজার নেতাকর্মী বেরিয়ে আসে তার কথায়। অতএব তিনি জেনে বুঝেই বলেছেন। এ কারণে আমরা শংকিত হই। আতঙ্কিত হই। এই অস্ত্র কখনো নিরীহ মানুষের উপর ব্যবহার হবে কীনা। 


উনি অস্ত্রভান্ডারের কথা স্বীকার করেছেন। এখন উনি যেন অস্ত্রভান্ডার কোথায় আছে সে তথ্যটাও দেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। নইলে জনগণ বুঝে যাবে শামীম ওসমান কাকে ভয় দেখিয়েছেন এবং কারা ভয়ে মরছেন।


নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, জনমনে ভীতি সঞ্চার করার জন্য শামীম ওসমানের বক্তব্য ফৌজদারি মামলার বিষয়। তিনি একজন অনির্বাচিত সাংসদ। ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর আবেদন জানাচ্ছি। 


নারায়ণগঞ্জ শহরে ওসমান পরিবারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানগতভাবে কিছু মানুষ প্রতিবাদ করে। কিছু মানুষ করেনা। যারা প্রতিবাদ করে সংগঠিতভাবে করে। তাছাড়া এই শহরে কারা ওসমান পরিবারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আর কারা তাদের ঘেটু ও সমর্থক- তা জনগণ জানে। 

সুতরাং ওসমান পরিবার যে অন্যায়টা করবে সংগঠিতভাবেই প্রতিবাদ করতে হবে। আমি মনে করি একেএম সামসুজ্জোহার সন্তান হিসেবে শামীম ওসমান ভাল কাজ করে নাই। সে নির্বাচন ছাড়া এমপি হইছে। অন্যান্য কর্মকান্ড বিতর্কিত। ওসমান পরিবারের লোকজনকে সরকার কেনো সমর্থন করে এটা নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা হচ্ছে। 


জনগণের প্রত্যাশা এবার শামীম ওসমান সম্পর্কে সরকার ভাল সিদ্ধান্ত নিবে। না নিলে জনগণ হতাশ হবে। আমরা যারা প্রতিবাদ করি তারা প্রতিবাদ করেই যাব। 


গণমাধ্যমের মধ্যে যুগের চিন্তা শুধু ওসমান পরিবার নয় যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অন্যায়কারী পার পাবেনা।

এই বিভাগের আরো খবর