সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

কুতুবপুরে বেড়েছে চুরি-ছিনতাই উৎকণ্ঠায় সাধারণ মানুষ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩  

 

কুতুবপুরে হঠাৎ করে বাসা-বাড়িতে চুরির হিড়িক পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চুরির ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ভিআইপি ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরাও রেহাই পাচ্ছেন না চোরদের থেকে। চুরি সংঘটনকালে বাধা দিতে গেলে চোরদের হাতে জখমসহ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

 

 

অন্যদিকে চুরির ঘটনায় পুলিশ মামলার পরিবর্তে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) নিতে আগ্রহী বেশি। এ সব জিডির গুটি কয়েক ছাড়া বেশির ভাগেরই কখনো কোন তদন্ত হয় না। অনেকে চুরির সময়ের সিসি টিভি ফুটেজ পুলিশকে দিলেও পাচ্ছেন না যথাযথ প্রতিকার। এ সব কারণে চুরির পরেও অনেকে ঝামেলা এড়াতে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকছেন।

 

 

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (২৮ জানুয়ারি) পাগলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নজরুল ইসলাম নামে এক মৃত ব্যক্তির জানা যায় উপস্থিত হওয়া কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মনিরুল আলম সেন্টুসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের পকেট থেকে প্রায় ৭/৮ টি মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায় একটি চোর চক্র।

 

 

অভিযোগ রয়েছে, পাগলা নন্দলালপুর এলাকায় ভাই ভাই ডাইং থেকে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারী) গভীর রাতে সাড়ে চার লাখ টাকার কবুতর, নন্দলালপুর মেডিকেল গলি এলাকায় কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় দশটি বাড়ীতে চুরি, আলীগঞ্জ এলাকায় কয়েক হাজার টাকার মালামাল চুরি, দেলপাড়া এলাকায় গ্রীল ভেঙে ঘরে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণ অলংকার, আসবাবপত্র, ৫টি মোবাইল সেট, নয়ামাটি এলাকায় দিনের বেলায় বিদুতের ক্যাবল চুরি, পরিত্যক্ত কলকারখানা থেকে হরহামেশাই প্রতিনিয়ত হচ্ছে মালামাল চুরির ঘটনা।

 

 

স্থানীয় অনেকে আবার দেখেও না দেখার অভিনয় করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এলাকার কতিপয় স্থানীয় অসৎ ব্যাক্তিদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে কুতুবপুরের বিভিন্ন এলাকায় হরহামেশাই প্রতিনিয়ত হচ্ছে চুরি ও ছিনতাই। অনুসন্ধানে জানা যায়, ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে একটি প্রভাবশালী চোর চক্র। এই চোর চক্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন কতিপয় অসাধু ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবসায়ীরা।

 

 

চোর চক্রের সদস্যদের পালিত করতে দিতে হয় ব্যয়বহুল অর্থ। তাদেরকে মাদক সেবনও করাতে হয় বলেও জানা যায়। কুতুবপুরের চোর চক্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন, পাগলা মেরী এন্ডারসনের সামনে ভাঙ্গারীর দোকানের জাফর ওরফে ফর্মা জাফর, তার মেয়ের জামাই লিমন, আলী, হাবু, সোর্স শান্ত, দুলাল, কামাল, হানিফ, সুমনসহ কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সক্রিয় এই চোর চক্রের সদস্যরা।

 

 

চোর চক্রের সদস্যদের মধ্যে অন্যতম, সোহেল ওরফে চোর সোহেল, সাগর, রানা, শান্ত, খোরশেদ আলম, শাহ আলী, অনিক, জুয়েল, মাছ জুয়েল, দেলোয়ার, রিদয়, আব্বাস, নাছির, কাউসার, জসিম। তাদের নেই কোনো স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা। তাদেরকে যারা লালন পালন ও আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে সহযোগিতা করেন তাদের হেফাজতে থেকেই চুরি করেন বলেও জানা যায়। এইসব চোরদের দিনের বেলায় দেখা না মেললেও রাতে তাদের দেখা মিলে বিভিন্ন এলাকায়।

 

 


স্থানীয়দের অভিযোগ, মহল্লায় পুলিশি টহল অনেক কমে গেছে। পুলিশ বিভিন্ন অভিযানে বেশি সময় দেওয়ায় চোর চক্র অনেক বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নানা পদক্ষেপ নিয়েও বাড়ি-ঘরের চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। কয়েকজন বাড়ির মালিক বলেন, চোরদের থেকে বাঁচতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরেও কাজ হচ্ছে না।

 

 

নন্দলালপুরের বাড়িওয়ালা দুলাল মিয়া বলেন, চুরির অভিযোগে থানায় মামলা নিতে চায় না। বেশিরভাগ ঘটনায় হারানোর জিডি নেয় থানা। এ সব জিডি কখনো তদন্ত করতেও দেখা যায় না। যার কারণে এখন চুরি হলেও অনেকে অভিযোগ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

 

 

পারভেজ বলেন, চুরির পরে থানায় সিসি ফুটেজ জমা দিলেও চোরেরা ধরা পরে না। বাড়িওয়ালা বা ভাড়াটিয়ারা চোরদের চিনতে না পারায় এসব ঘটনা বারবার ঘটলেও অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না।

 

 

পাগলা শান্তি নিবাসের আজহার উদ্দিন বলেন, এলাকা ভিত্তিক টহল আরও জোরদার করতে হবে। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। দেলপাড়ার বাড়িওয়ালা সাইদুর রহমান সুমন বলেন, পুলিশের তালিকাভুক্ত চোর ও দস্যু চক্রের ওপর নিয়মিত নজরদারি বাড়ানো হলে আমাদের এলাকাগুলোতে ৮০ শতাংশ চুরি কমে যাবে।

এই বিভাগের আরো খবর