শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ১৩ ১৪৩১

কোন পথে মহানগর বিএনপি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২৪  

গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তোপের মুখে পরে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেই নারায়ণগঞ্জের সাবেক মন্ত্রী, হুইপ, এমপি, মেয়র, জেলা-উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বার পালিয়ে যান। এদিকে গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের রসাতলে মামলা-হামলার শিকার হয়ে জর্জরিত হয়ে পরেন দেশের সবচাইতে বড় বিরোধী দল বিএনপি। বিগত দিন থেকেই বলয় ও গ্রুপিং ভিত্তিক রাজনীতিতেই বিশ^াসী দলটি। কিন্তু পট পরিবর্তনের আড়াই মাসে দলে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে কোন পদক্ষেপ নেয়নি নেতাকর্মীরা। এদিকে মামলা-হামলা- গ্রেফতারের ভয়ে আওয়ামী লীগের ফেলে যাওয়া সম্রাজ্যে দখলে নিয়েছে বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা। 

 

এছাড়া ও বিভিন্ন্ স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের মতো নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে যাতে সৃষ্টি হচ্ছে নানা বিশৃঙ্খলা। এদিকে জেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ জুড়ে বিসিক, ইপিজেড নিয়ে বড় সংঘর্ষের রূপ রেখা লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। এরই মাঝে ফতুল্লার ৫টি ইউনিয়ন ও সিদ্ধিরগঞ্জের ১০ ওয়ার্ড জুড়ে সকল প্রকারের দখলদারিত্ব, লুটপাট, চাঁদাবাজি সব বন্ধে ও নিয়ন্ত্রণে আনতে  ইতিমধ্যে জেলা জুড়ে এই বিশৃঙ্খলা এড়াতে জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ জুড়ে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ বিরোধী সমাবেশ পালন করছে। যাকে ঘিরে গিয়াসের হুঙ্কারে বহু বিএনপির নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন অপকর্ম থেকে সাইড লাইনে রয়েছেন। 

 

একইভাবে মহানগর বিএনপির আওতাধীন দফায় দফায় সংঘর্ষ, লুটপাট, চাঁদাবাজি, নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কোন এক্যাশন নেয়নি মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে এই মহানগর জুড়েই চলছে বলয়ের রাজনীতি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল। এদিকে পট পরিবর্তনের আড়াইমাসে মাঠে বেশি একটা সময় দেখা যায়নি মহানগর বিএনপিকে। শুধু দূর্গাপূজোয় মন্ডপ পরির্দশনে টানা ২ দিন মাঠে দেখা গেলে আবারো রাজপথবিমুখ হয়ে পড়েছে নেতাকর্মীরা। একই সাথে রাজপথে নেই বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা। যা নিয়ে বুঝতে আর বাকি নেই মহানগর বিএনপির রাজনীতি অনেকটাই নিস্কিয় হয়ে পড়ার মতোই। এদিকে বর্তমানে জেলার থেকে বেশি সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে মহানগর বিএনপির। 

 

ইতিমধ্যে মহানগর বিএনপির আওতাধীন বন্দর থানা বিএনপি, বন্দর উপজেলা বিএনপি, সদর থানা বিএনপিসহ এর আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে । এদিকে বর্তমানে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নির্বাচনমুখী কমিটি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচেছ। যার পরিপ্রেক্ষিতে দলের মেয়াদোত্তীর্ণ সকল আহ্বায়ক কমিটিতে হাত দিতে পারে হাইকমান্ড যেখানে নারায়ণগঞ্জের মহানগর বিএনপির নাম ও আলোচনায় রয়েছে। এছাড়া ও আলোচনার মুখে শোনা যাচ্ছে মহানগরের কমিটি ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন বা পূর্ণাঙ্গ দুটোতেই একটি পদে রদবদল আসার পরিকল্পনা রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।

 


সূত্র বলছে, গত ২ বছর দলীয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে লাগাতার কর্মসূচি চললে ও পটপরিবর্তনের পরে অনেকটাই কমে আসে বিএনপির দলীয় কর্মসূচি। এরই মাঝে ধীরে ধীরে রাজপথ থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করে মহানগর বিএনপির নেতকার্মীরা। তা ছাড়া গত (৬ সেপ্টেম্বর) বন্দরে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বন্দর কুশিয়ারা এলাকায় সন্ত্রাস, মাদক বিরোধী সভায় যাওয়ার পথে সেখানকার যুবদল-ছাত্রদল নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হন। যা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় মামলার ঘটনা ঘটে। তারপরের দিন টিপুর উপরে হামলার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশের ডাক দেন মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। এর পর থেকে স্থবিরতা লক্ষ্য করা যায় মহানগর বিএনপিতে। যা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি দুই বছর বেশি সময় ধরে চলছে। 

 

গত বছর কয়েকবার সম্মেলনের চেষ্টা করে নতুন নেতৃত্বে আসতে পারেনি মহানগর বিএনপি। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর মহানগরের বিএনপির রাজনীতি অনেকটাই চোখে না পড়ার মতোই। এর আগে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। যেখানে আহ্বায়কের দায়িত্ব পান এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পান আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তার পর থেকেই কমিটি থেকে ১৫ জন বিদ্রোহ করে একাংশ মহানগর বিএনপির ব্যানারে আন্দোলন সংগ্রাম করতে দেখা গেছে ১ মাস। এ ছাড়া ও বিদ্রোহ করে তারা বিভিন্ন ইউনিটের পাল্টা কমিটি ও ঘোষণা করেছেন আবার দুই পক্ষই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দরখাস্তসহ একান্ত আলাপ ও করেছিলেন দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে দ্বন্দ্বে দ্বন্দ্বে ২ বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি কমিটি। এদিকে বর্তমানে মহানগর বিএনপির মূল দ্বারা কমিটির নেতা হিসেবে রয়েছেন আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক রেজা রিপন, যুগ্ম আহ্বায়ক এড. হুমায়ূন কবির। 

 

শত প্রতিকূলতায় তারা ইউনিট কমিটিগুলো দিতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিটি ইউনিটের কমিটি গঠন এই কমিটির সমচাইতে বড় সফলতা। তবে মহানগর বিএনপির এড. জাকির হোসেন বেশি একটা সময় এই কমিটির নেতাকর্মীদের সাথে ভিড়েন না। অন্যদিকে এড. হুমায়ূন কবীর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনিও বেশি একটা সময় কমিটির নেতাকর্মীদের সাথে সময় দিতে পারেন না। যার পরিপ্রেক্ষিতে এড. সাখাওয়াত, এড. টিপু, রেজা রিপনই বর্তমানে মহানগর বিএনপির মূল ধারার নেতৃত্বে আছেন। এছাড়া কমিটির স্থান পেয়েও বাহিরে রয়েছে বাকি নেতাকর্মীরা। এদিকে বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা বর্তমানে আবারো রাজপথে আসার চেষ্টায় আছেন কিন্তু এখনো তারা সম্পূর্ণভাবে সাইড পাচ্ছেন না। এদিকে গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর মহানগর এলাকায় লুটপাট ও চাঁদাবাজির সঙ্গে দলের কিছু নেতাকর্মী জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ চলে আসে।

 

এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে ইতিমধ্যে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে বিতর্কিত ৮ জন বিএনপি নেতা বহিস্কার ও ১০ জনের মতো শোকজ হয়ে বলে শোনা গেছে কিন্তু  মহানগরে এখনো কোন বহিস্কার বা শোকজ শোনা না গেলেও লুটপাট, দখল, চাঁদাবাজির মতো বিভিন্ন ঘটনা সামনে উঠে এসেছে। দলের দুঃসময়ে সাখাওয়াত-টিপু যে বলিষ্ট ভূমিকা রেখে মহানগর বিএনপিকে আকঁড়ে ধরে রেখেছিলেন, আওয়ামী লীগের ছায়া সরে যাওয়ার পর তাদের অতীত কর্মকাণ্ডকে মূল্যায়ন করে দলকে সামনে ভালো সাংগঠনিক কাঠামোর রূপ দিতে হাইকমান্ড সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে কি না এটিই এখন দেখার বিষয়। 
 

এই বিভাগের আরো খবর