সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

খুন-ধর্ষণ-অপরাধ মাত্রা ছাড়িয়েছে

এম সুলতান

প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২  

 

সব সময় আলোচনা সমালোচনা মাঝেই থাকে নারায়ণগঞ্জ জেলা। ২০২২ সালেও অপরাধ প্রবণতার দিক থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছিল উপরের সারিতে। জেলায় বেড়েছে খুন, ধর্ষণ, কিশোরগ্যাং, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা ও অপহরণসহ নানা ধরনের অপরাধ। জেলা পুলিশের সমন্বিতভাবে এসব অপরাধ প্রতিরোধে তেমন সাফল্য পায়নি। পাড়া মহল্লাগুলোতে টহলের স্বল্পতার কারণে কিশোরগ্যাংয়ের উপদ্রব এবং অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ নগর বিশ্লেষকদের।

 

গেল বছরে সৈয়দপুরে পূর্ব শত্রুতার জেরধরে কৃষকলীগ নেতা দৌলত হোসেন হত্যা, ইসদাইরে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মামুন হত্যা, ইসদাইর রাবেয়া স্কুলের সামনে কিশোরগ্যাং এর হাতে ১০ম শ্রেণির ছাত্র  ধ্রুব চন্দ্র দাস হত্যা, ইসদাইর রেললাইন এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গ্যাস ব্যবসায়ী শামীম হোসেনকে প্রকাশে কুপিয়ে হত্যা, চাষাড়া মহিলা কলেজ এর সামনে ছিনতাইকারীর হাতে গার্মেন্টস কর্মী মো. জয়নুর রহমান জনি নামে যুবক খুন, ফতুল্লায় ফতুল্লার মাসদাইর পাকাপুল এলাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে আমান ইসলাম নামে এক গার্মেন্টস কর্মী খুন শহরবাসীর মনে ভীতি ছড়িয়েছে।  আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চলতি বছরে আলোচিত চানমারী বস্তি উচ্ছেদ হলেও জেলা পুলিশের গাফলতির কারণ জেলার বিভিন্ন স্থানে  বেড়েই চলছে মাদক ব্যবসা। তার মধ্যে অন্য হলো নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর রেললাইন এলাকায় মাদক ব্যবসা, রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তিতে মাদক ব্যবসা, চানঁমারি ও খানপুর এলাকায় নতুন রাস্তায় মাদকব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসের মতো যেখানে প্রকাশ্যেই মাদকবিক্রির ৫/৬ টি স্পট তৈরি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও যে অবনতি ঘটেছে তা উঠে আসে মহিলা পরিষদের প্রাপ্ত তথ্য মতে।

 

নারায়ণগঞ্জ মহিলা পরিষদ তথ্য মতে জানা যায়, গত ১০ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৭৯টি। একই সাথে নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এদের মধ্যে নারী, নারী শ্রমিক ও শিশুরাও রয়েছেন। এছাড়া গণধর্ষণের শিকার ১২ জন, ধর্ষণের পর হত্যা ১১ জন, হত্যা ১৩ জন, শিশু হত্যা ৫ জন, উত্ত্যক্তকরণ ৩৬ জন, যৌতুকের জন্য হত্যা ৯ জন, অপহরণ ৫ জন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ৮৭ জন, বাল্যবিবাহ ১০ জন, আত্মহত্যা ১৭ জন, শিশু বলাৎকার ৬ জন এবং সাইবার ক্রাইমের শিকার ১৭ জন। তবে এই সংখ্যা কম বেশিও হতে পারে বলে সংবাদ সম্মেলনের মহিলা সংস্থা থেকে জানান।

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদাসীনতায় এবং অবহেলায় কারণে এবার বেড়েছে ছিনতাইকারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে। শহরের চাষাড়া সোনালী ব্যাংক এর সামনে ও মহিলা কলেজ এর সামনে ২/৩ টি ছিনতাইকারী চক্রের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। শেষ হতে যাওয়া বছরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপ্রতি এডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম যুগের চিন্তাকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ পরিকল্পিত ভাবে কিশোরগ্যাংকে মোকাবেলা করতে পারেনি। যেসকল এলাকায় কিশোরগ্যাং এর তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ গ্রহণ করতে হবে। কিশোর আইন সংশোধন করতে হবে কোটে গেলে তারা কিশোর বলে জামিন পেয়ে যায়। এভাবে চলছে। কখনো তাদের মোকাবেলা করা যাবেনা।  

 

অন্য বছরে তুলোনায় ২০২২ সালে মোটেও ভালো ছিলো না এই দায় পুলিশের উপরেই পড়ে। আমরা চাই যা চলে গেছে সেটা বলে লাভ নাই আমরা চাই সামনের বছর যাতে দায়িত্বশীল ভাবে নারায়ণগঞ্জকে পরিচালনা করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন,  নারায়ণগঞ্জ হচ্ছে জনবহুল এলাকা। এখানে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে লেগে থাকে। যাকে তাকে ফাঁসানোর জন্য বেশির ভাগ ধর্ষন মামলা করা হয়। আবার অনেক সময় ভুয়া মামলাও করা হয়। আমরা কিশোরগ্যাং এর তালিকা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমরা আশা করি নতুন বছরে আরো ভালো কিছু করবো।  

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর