শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

গরিবের নাগালের বাইরে ইফতারি 

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২৪  

 

জায়গা জমিন বেচাকেনায় যেমন ভাবে শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে তেমনিভাবে গত কয়েক বছর যাবৎ রমজান মাসকে ঘিরে দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধিতে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। এই অসাধু সিন্ডিকেটের জন্য মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত যাতাকলে পরে নির্যাতিত হচ্ছে। বিশেষ করে রজমান মাস আসলেই সবকিছুর দাম যেন গরিবের নাগালে বাইরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন আকাশ ছোয়া।

 

দিনমজুররা বাজারের কোন কিছু ক্রয় করতে গেলে পণ্যের পরিবর্তে চোখের পানি ভরে নিয়ে আসে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সিন্ডিকেট নামক অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। যার জন্য দিনের পর দিন বছরের পর বছর তাদের আশফালন বেড়েই চলছে। তাই ভোক্তারা তাদের লাগাম টানার দাবি জানান।

 

এদিকে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান মাস। যে মাসকে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ মাস বলা হয়ে থাকে। কেননা এই মাসে কোরআন মাজিদ নাজিল হয়েছে। আল্লাহর রাসুল হাদিসে বলেছে যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল আর নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারলো না সে ব্যক্তি ধ্বংস। কিন্তু এই মাসেই এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে তোলে অতিরিক্ত দামে পন্য বিক্রি করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিচ্ছে। যা গরিবদের নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে।  

 

অপরদিকে পরিবারের সন্তানদের আবদার পূরণ করতে প্রথম রোজায় নামি-দামি ইফতারের দোকানগুলোতে ভীড় জমায় পরিবারের কর্তারা। কেউ কিনছে টিকা বা জালি কাবাব, কেউ কিনছে চিকেন রোল, কেউবা কিনছে হালিম। বিকেল থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে। আবার কেউ ইফতার কিনতে এসে বাড়ি চলে যাচ্ছে। কেননা ইফতার অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

মঙ্গলবার সরেজমিনে নগরীর আনন্দ হোটেল, মনির কেবিন ও হোয়াইট হাউজের মতোনামি দামি রেস্তোরাঁয় ঘুরে দেখা যায় দোকান গুলোতে বেগুনি প্রতি পিস ১০ টাকা, আলুর চপ ১০ টাকা, পেঁয়াজু ১০ টাকা, সামী কাবাব ৩০ টাকা, জালি কাবাব ৩০ টাকা, টিকা কাবাব ৩০ টাকা, চিকেন স্যান্ডউইচ ৭০ টাকা, স্পেশাল সমুচা ৩০ টাকা, চিকেন ডিম চপ ৩০ টাকা, চিকেন সবজি চপ ৩০ টাকা, পাকুড়া ৩০ টাকা, চিকেন রোল ৮০ টাকা, ভেজিটেবল রোল ৭০ টাকা, চিকেন স্টিক ৫০ টাকা, চিকেন চাপ ১৬০ টাকা, চিকেন ফ্রাই ১৫০ টাকা, চিকেন শর্মা ১৫০ টাকা, বাটার নান ৫০ টাকা, ছোলা বা বুট (কেজি) ২৪০ টাকা, রেশমি জেলাপি ৩৪০ টাকা, বোম্বাই জিলাপি ৩০০ টাকা, গ্রিল চিকেন ৪৮০ টাকা, শাহী হালিম ছোট ৩৫০ টাকা, (৫০০ মিলি) ১০০, ফিরনি (প্রতি পিস) ৭০ টাকায়।

 

অথচ সপ্তহা খানিক আগেও বেগুনি ৫ টাকা, আলুরচপ ৫ টাকা অন্যান্য পন্য বর্তমান দামের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। যা এখন এক রাতে প্রায় ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এতে করে দিনমজুর কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন চাইলেও নিজেদের পছন্দের খাবার খেতে পারছে না। এমনকি অনেকের খাবার যোগাতে চোখের পানি ঝরাতে হচ্ছে।

 

তাই প্রশ্ন উঠেছে ব্যবসায়ীদের এই জুলুম, অত্যাচার কবে শেষ হবে। সচেতেন মহল বলছে তাদের জবাবদিহিতা নেই বলে আজকে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

 

শরীফ মিয়া বলেন, এবার ইফতার পণ্যের দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তারা তো বলেই নিত্য পন্যের দাম বেশি তাই এমন হচ্ছে। আসলে আমরা দোষ দেই ব্যবসায়ীদের তারা দোষ দেয় সরকারকে।

 

মনির রেস্তোরার কর্মচারী জানান, গত বছরের তুলনায় এবার ক্রেতার কমদামি আইটেমের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। কারণ গরু ও খাসির মাংসের তৈরি ইফতারি পণ্য ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গত বছরের তুলনায়। মুরগি ও অন্যান্য ইফতারি ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

 

এছাড়া দিগুবাবু বাজারের এক লেবু বিক্রেতা জানান, সিন্ডিকেটের জন্য সকল কিছুর দাম বেড়েছে। তাই এখন লেবুর দাম বেড়েছে। জানা যায়, যেই লেবু সপ্তাহ খানিক আগে ২০ থেকে ৩০ টাকা হালি বিক্রি হত সেই লেবু এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা হালি দরে।

 

এত দাম বাড়তি কেন জানতে চাইলে কয়েকজন জানান, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়েছে। তাই নগরবাসীর মাঝে প্রশ্ন তুলেন এই ভাবে আর কতদিন চলবে। ব্যবসায়ীদের কাছে গরিবরা নিরব ভাবে অত্যাচারিত হচ্ছে। তাদের লাগাম টানা। যদিও জেলা প্রশাসন ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভায় বলেছেন ছদ্মবেশে বাজারে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করবেন বেশি দাম নিলেই মামলা দেয়া হবে। এস.এ/জেসি 

এই বিভাগের আরো খবর