সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

চার ঘন্টা অচল শহর

অর্ণব হাসান

প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর ২০২২  

 

# নগরীর মানুষ আতঙ্কে ছিলেন
# পেটোয়া বাহিনী দিয়ে হামলা: মামুন
# বিএনপি-জামায়াত চক্র পুলিশের উপর হামলা করেছে : এড. দিপু

 

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ শহরের আলী আহম্মদ চুনকা সড়কের সামনে র‌্যালী করতে গিয়ে পুলিশি বাধায় জেলা মহানগর বিএনপি নেতৃবৃন্দ। র‌্যালীকে কেন্দ্র করে দলটির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বিক্ষিপ্তভাবে কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সহ সংঘর্ষ হয়। প্রায় ঘন্টা খানিকের বেশি সময় ধরে এই সংঘর্ষ শেষে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। 

 


নগরবাসি অভিযোগ করে জানান, বিএনপি এবং পুলিশের সাথে শহরে যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে তা মোটেও মানুষ প্রত্যাশা করেন নাই। এক পক্ষ ইট পাটকেল মারা আরেক পক্ষের গুলি ছুড়া নিয়ে মানুষ আতঙ্কে পড়ে যায়। রাজনৈতিক বোদ্ধ মহল প্রশ্ন তুলেন,বিএনপি হচ্ছে দেশের প্রধান বিরোধী দল। তারা তাদের দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেখানে পুলিশ প্রশাসনের এই ভাবে গুলি ছুড়া ঠিক হয় নাই। নারায়ণগঞ্জ শহর যেন আজকে রনক্ষেত্র পরিনত হয়। এমনকি সর্বস্তরের মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের মাঝে একটা আতঙ্ক তৈরী হয়। তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান।

 


এদিকে দলীয় সূত্রে জানাযায় প্রতি বছর নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর বিএনপি তাদের দলীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী জাকজমক ভাবে পালন করে থাকে। অন্যান্য বছর গুলোতে পুলিশ প্রশাসন তাদের বাধা প্রদান না করলেও এবছর বাধা দেয়ায় বিএনপি নেতা কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। র‌্যালীকে সফল করার জন্য সকাল ১০ টার আগে থেকে নেতা কর্মীরা জরো হতে থাকেন। এক দিকে চাষাড়া থেকে একাধিক মিছিল নিয়ে নেতৃবৃন্দ আসতে থাকে, অন্য দিকে বন্দর ঘাট থেকে একটি মিছিল আসতে থাকে, সেই সাথে আগে থেকে আলী আম্মদ চুনকা পাঠাগারের সামনে কয়েক হাজার নেতা কর্মী জরো ছিলেন। 

 


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০ টার পর থেকে বিএনপি পুলিশের মাঝে সংঘর্ষ হয়। যা প্রায় দের ঘন্টা চলে। এই ঘটনায় শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক চাষাড়া চত্বর পর্যন্ত সকল যান চলাচল বন্ধ ছিল। একই সাথে ডিআইটি থেকে জিমখানা মন্ডলপাড়া ব্রীঝ হয়ে নিতাইগঞ্জ মুন্সিগঞ্জের পরিবহন গুলো যানজট হয়ে বন্ধ থাকে। অপর দিকে চাষাঢ়া থেকে খানপুর সিদ্ধিরগঞ্জ, চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড লিংরোড সড়কের জেলা পরিষদ ছাড়িয়ে যানজট লেগে থাকে। এই যানজট স্বাভাবিক পর্যায় আসতে প্রায় চার ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে যায়। যার জন্য নগরবাসিকে এই চার ঘন্টা ভোগান্তি পোহাতে হয়।

 

আর এতে করে নগরবাসি তথা নারায়ণগঞ্জ শহরের আসা মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এমনকি অনেক রোগিকে বসে থাকতে হয়। আর এই ঘটনা নিয়ে নগরীর সচেতন মহল নানা প্রশ্ন তুলেন। এতে করে পুলিশ প্রশাসনও প্রশ্নবিদ্ধ হন। অথচ জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যারা প্রশাসন নিয়োজিত থাকে। আজকে সেই জায়গা দুই পক্ষ মিলে সংঘর্ষ লাগায় পুরো শহর বিশৃঙ্খলা তৈরী হয়। 

 


সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএনপির র‌্যালীকে ঘিরে আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিএনপির নেতাকর্মীদের  অবস্থানের কারণে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। সকাল সাড়ে ১০ টায় বিএনপির র‌্যালী বঙ্গবন্ধু সড়ক হয়ে নেতাকর্মীরা  চাষাঢ়ার দিকে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। নেতাকর্মীরা বাধা অতিক্রম করে এগোতে চাইলে পুলিশ তাঁদের ওপর চড়াও হয়। পুলিশকে এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে বিএনপির নেতা কর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা  চারদিকে ছোটাছুটি শুরু করেন।

 


অন্যদিকে পুলিশের টিয়ার সেলে শহরের ঐতিহ্যবাহি বিদ্যাপিঠ মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়ে পড়েন। তাৎখনিক ভাবে তাদের চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয় বলে জানা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

 


পুলিশের রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার এস এম শামীম বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যারা বিশৃঙ্খল তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে বলেছি। এর বাইরে কিছুই হয়নি। এই ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

 


বিএনপি নেতা কর্মীদের দাবী পুলিশ প্রশাসন শান্তিপূর্ণ বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচি নস্যাৎ করার জন্য এই কাজ করেন। কেননা আজকে বিএনপি নেতা কর্মীরা সরকার বিরোধী কর্মসূচি করতে আসে নাই। তারা তাদের দলীয় প্রতিষ্ঠা বাষির্কী উপলক্ষে র‌্যালী করতে এসেছে। আর এতে করে তাদের র‌্যালীতে পুলিশ বাধা প্রদান করেন।

 


জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, পুলিশ ‘ল’ অনুযায়ী কাজ করে। পুলিশ প্রথমে তাদের সড়ক অবরোধ না করার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের উপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ কারণে এতো সংখ্যক পুলিশ আহত হয়েছে।

 


বিএনপির নেতা কর্মীরা অলিতে গলিতে গিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ছিলো। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে। ধারনা করা হচ্ছে বাতাসে টিয়ার সেলের ধোয়া স্কুলে প্রবেশ করায় ছাত্রীরা টিয়ারসেলের জাজে অসুস্থ হয়েছে।

 


জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে চলা আন্দোলন নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে সরকার। এ জন্য ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসী বাহিনী ও সরকারের পুলিশের পেটোয়া বাহিনীর হামলায় জেলার অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আজকেও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাতে একজন নিহত হয়েছেন। সরকারের পেটুয়া বাহিনীর জন্য নগরবাসিকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই আমরা এই কর্মকান্ডের বিচারের দাবী জানাই। সেই সাথে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানাই।

 


এদিকে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনায় তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যদি গণতান্ত্রিক ভাবে সভা সমাবেশ করে তাহলে কাউকে কোন বাধা দেওয়া হবেনা। অথচ আজকে এখানে বিএনপির নেতৃবৃন্দ দলীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করতে এসে রণক্ষেত্রের সৃষ্টি করেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

 

 

পুলিশ জনগণের জন্য কাজ করে অথচ বিএনপি-জামায়াত চক্র তাদের উপর হামলা করেছে, সাংবাদিকদের উপর হামলা করেছে। তিনি আরও বলেন, গ্রেনেড আর পেট্রোল বোমা মেরে যদি সাধারণ জনগণকে হত্যার চেষ্টা করা হয় তাহলে নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা বসে থাকবেনা। অশান্তির সৃষ্টি করতে চাইলে আমরা আমাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রতিহত করবো। যদি এ ধরনের ঘটনা আর ঘটে তাহলে কাউকে ঘরে ফিরে যেতে দেওয়া হবেনা। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত, সাখাওয়াত হোসেন সুমনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
 

এই বিভাগের আরো খবর