বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১

ছাত্রলীগ দুই ভাইয়ের ব্যবসা বুঝে নিতে মালয়েশিয়া যুবদল নেতা রনি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২৪  

 সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাসদাইর ও শাসনগাঁও বিসিক এলাকার সকল প্রকারের শিল্প-কারখানাগুলোর ঝুট সেক্টরসহ সুতার কোন, কার্টুনসহ বিভিন্ন ওয়েস্টেজ পণ্যের ব্যবসা যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমান। এ মধ্যে অয়ন ওসমানের অংশটি নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেল। এরা প্রকাশ্যে না থেকে তাদের ঘরের আত্মীয় স্বজন চাচাতো ভাই-খালাতো ভাইদের দিয়েই সব নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি এই ঝুটের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে আজমেরী ওসমান ও অয়ন ওসমানের দুই গ্রুপের মধ্যে মাঝে মধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো কিন্তু পটপরিবর্তনের পর কিছুদিন এলাকায় আত্মগোপনে থেকে পরে পালিয়ে মালেয়শিয়া চলে যান কুখ্যাত এই রিয়াদ-রাফেল।৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেল প্রধান। সেপ্টেম্বরের ২৯, ৩০ এবং অক্টোবরের ১ তারিখে তাদের দুজনকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শহরের হাংতুয়া এলাকার কবহধহমধ চড়রহঃ ঈড়হফড়সরহরঁস এর ৪র্থ তলার রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, রিয়াদ সেখানে প্রায়ই খেতে আসেন।  তবে যাওয়ার আগে বিগত দিনে মাসদাইর-বিসিকে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব কিছুই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেলের খালাতো ভাই জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। এ ছাড়া এই যুবদল নেতা রনির মায়ের খালাতো বোনের ছেলে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কুখ্যাত হাবিবুর রহমান রিয়াদ।

 

 রিয়াদ ছিলেন নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত ডাকাত পরিবারের আশা ডাকাতের ভাতিজা। বর্তমানে তিনি প্রকাশ্যে না আসলে ও এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের মাধ্যমেই সব নিয়ন্ত্রণ করতেন রনি। এদিকে বিসিকের ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রথমে আজমেরী ওসমানের ক্যাডার ঝুট সন্ত্রাস শ্রমিকলীগ নেতা কাইল্লা রকমতের কাছে দ্বারস্ত হন রনি। পরবর্তীতে  দুই ছাত্রলীগের ভাইয়ের মাধ্যমে (বিকেএমইএ) এর এক নেতার দ্বারাস্ত হন আর তাঁর টোকেনে স্থানীয় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ঝুট সেক্টর দখলে নিয়ে তাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাচ্ছে এই যুবদল নেতা রনি। কাউকে ফাস্ট পার্টি আবার কাউকে সেকেন্ড পার্টি বানিয়ে গোটা বিসিক, মাসদাইরের সিংহভাগ ঝুটের টাকাই যায় রনির পকেটে।  এদিকে গণঅভ্যুত্থানের তিন মাস যেতে না যেতে না যেতেই রনির খালোতো ভাই রাফেল ও রিয়াদের সাথে সাক্ষাৎ করতে গত সপ্তাহে টুরিস্ট ভিসায় সিঙ্গাপুর থেকে মালেশিয়ায় যান জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। যা নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে যুবদল তথা বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে। সূত্র জানিয়েছে, কুয়ালালামপুর শহরের হাংতুয়া এলাকায় তাদের তিন ভাইয়ের স্বাক্ষাৎ হয়েছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, ঝুট ব্যবসা, ঠিকাদারী ব্যবসাসহ শামীম ওসমানের ক্ষমতায় রিয়াদ-রাফেল যেকল ব্যবসা ও কুকীর্তির নিয়ন্ত্রক ছিলেন সেগুলো বুঝে নিতেই মালয়েশিয়া গিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন রনি।
 
সূত্র বলছে, জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ ও রাফেল মাসদাইর-বিসিক ও তোলারাম কলেজের মাধ্যমেই বিভিন্ন পন্থায় উপার্জন করেছেন কোটি কোটি টাকা। ছাত্র নয় এমন নেতাও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এদিকে গত জুলাই ও আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এসব নেতাদের হাতে দেখা গেছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। গত ৫ আগস্টের পর পটপরিবর্তনে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে মালেশিয়ায় পাড়ি জমালে ও সব সমীকরণ মিলিয়ে মাসদাইর ও বিসিকের ব্যবসায় হাত-বদল হলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একই পরিবারের হাতে। এদিকে বিগত দিনে রিয়াদ ও রাফেলের নিয়ন্ত্রাধীন মাসদাইরে ছুরি ঘুরাতেন ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদের চাচাতো ভাই অনিক প্রধান, তার ভাই অমিত প্রধান, রিয়াদের আরেক চাচাতো ভাই সুমন প্রধান, ভাই সিয়াম প্রধান, হিমেল প্রধানসহ রিয়াদের চাচা জসিম প্রধান ও রিয়াদের বাবাসহ এলাকায় নানা অত্যাচার করতেন। এদিকে কিছুদিন পূর্বে দানিয়াল হত্যায় এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও রয়েছে। 

 

এ ছাড়া বিগত দিনে যুবদল নেতা রনির মৃত্যু দুলা ভাই ছিলেন বঙ্গবন্ধু লীগের মহানগর শাখার সভাপতি এবং তিনি ছিলেন বিসিকের অন্যতম ঝুট সন্ত্রাসদের মধ্যে একজন। বিগত দিনে তারই ছোট ছেলে সিফাত ছাত্রলীগের পদ নিয়ে রাফেল ও রিয়াদের সাথে বিসিকের ৩০টি নিটিংয়ের ঝুট নিয়ন্ত্রণ করতেন। 

 

পট পরিবর্তনের পর ছাত্রলীগ মামার পিছু ছেড়ে এসেছেন যুবদল নেতা মামার ছায়াতলে আর নিয়েছেন ২৯টি নিটিং। এদিকে রনির ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণে অন্যতম বাধা হিসেবে ছিলেন ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদ। যাকে ঘিরে গত (২৯ আগষ্ট) রনির ঘনিষ্ঠ নেতা ফতুল্লা থানা বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর ও এনায়েতনগর ইউনিয়েনর ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সিরাজের নেতৃত্বে দুই শতাধিক সন্ত্রাসী নিয়ে বিসিকের সংঘর্ষ চালান। যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বর্তমানে সিরাজ ও জাহাঙ্গীরকে মশিউর রহমান রনি দায়িত্ব দিয়েছেন ব্যাবসায়ী নেতা হাতেমের সাথে থাকতে। যাকে ঘিরে সিরাজের নামে রনি নিয়েছেন ৭টি গার্মেন্টসের ঝুটসহ সকল সেক্টর নিয়ন্ত্রণ আর সেটার টোকেন দিয়েছেন সেই বিকেএমইএর শীর্ষ নেতা। সেগুলো হলো- এবি এফ গার্মেন্টস, খাতুনসহ আরো কয়েকটি। তা ছাড়া বর্তমানে মাসদাইর এলাকায় রনির ভাই রুবেল, এনায়েতনগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি জুম্মন ও তার বাবাসহ এনায়েতনগরের ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মাসদাইর রেখেছেন দখল। আর বর্তমানে তিনি সেজেঁছেন দোয়া তুলসিপাতা। তা ছাড়া এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির নামে ফকির এপারেলসের ঝুট নিয়ন্ত্রণ করেন রনি। যা গত বুধবার মাল নামলে ও এখনো হয়নি হিসেবের ভাগ সকলের একটাই কথা রনি বিদেশ থেকে আসলেই, টাকার ভাগ হবে। বর্তমানে মাসদাইর ও বিসিকের নিয়ন্ত্রণে অন্যতম ভয়ঙ্কর রূপে রয়েছে যুবদল নেতা রনি।

এই বিভাগের আরো খবর