সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

জলাবদ্ধতা এখনো নিত্যসঙ্গী পশ্চিম তল্লাবাসীর

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০২২  

 

# নিজেদের দুর্ভাগা মনে করেন এলাকাবাসী

 

ফতুল্লা আর জলাবদ্ধতা যেন এক সূত্রে গাঁথা। কাঠফাটা রৌদ্রে অনাবৃষ্টির কারণে যখন বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকে নারায়ণগঞ্জবাসী তখন ফতুল্লবাসী মনে-প্রাণে বৃষ্টি না আসার জন্য স্রষ্টার নিকট আকুতি জানায়। কারণ একটাই, এমনিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে রাস্তা-ঘাট, অলি-গলিসহ বাড়ি ঘরে পানি জমে থাকার কারণে যখন মানুষজনের ভোগান্তির শেষ নেই। 

 


সেই পানি ঢুকে পড়েছে অনেকের বাসা-বাড়ি কিংবা দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। যাদের পাকা ঘর বা ভবন তারা ইটের গাঁথুনির মাধ্যমে ঘরে পানি প্রবেশে বাধ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। সেখানে একবার যদি ঝুম বৃষ্টি নামে তাহলে আর রক্ষা নেই। ঘরে ভেতর পানি প্রবেশ করে সব কিছু ভেসে যাবে। 

 


বৃষ্টি ছাড়াই যেখানে পানির মধ্যে বাস সেখানে একবার বৃষ্টি হতে পারলে আর তাদের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। একই সাথে ফতুল্লায় অবস্থিত বিভিন্ন কল-কারখানায় কেমিক্যালযুক্ত বিষাক্ত পানি ও পয়ঃ নিষ্কাশনের মলমূত্র মিশে চরম দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ। আর এর মূল কারণ পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা।

 


সরেজমিনে ফতুল্লা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পশ্চিম তল্লা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তল্লার আলোচিত সেই বাইতুস সালাত জামে মসজিদ সংলগ্ন ইউনিয়ন এলাকার গলিটি বিষাক্ত নোংরা পানিতে ডুবে আছে। আশে পাশের গলিগুলোর একই অবস্থা। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এই নোংরা পানি দিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করছে। 

 


মসজিদের মুসল্লিরা এই পথ দিয়েই নামাজের জন্য কাপড় উচু করে আসছে। রিকশা অটোসহ গাড়ি চলছে খুব ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে এবং নিচু এলাকায় কয়েকটি ডাইং ফ্যাক্টরির কারণে শুকনো মৌসুমে পানিবব্ধতা বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এ পানি দিয়ে যাতায়াতের ফলে চর্মসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয়রা। অনেককে বাধ্য হয়েই দুই মিনিটের রাস্তা রিকশার মাধ্যমে ১৫-২০ টাকা খরচ করে পার হতে হচ্ছে।

 


স্থানীয় বাসিন্দা আসমা আক্তার জানান, এখানে পানি জমার জন্য বৃষ্টির প্রয়োজন হয় না। এখানে সব সময়ই পানি জমে থাকে। আর যদি একবার বৃষ্টি হয় তাহলে তাদের কষ্টের মাত্রা আরও বহুগুনে বেড়ে যায়। এখানকার মেম্বার চেয়ারম্যান সবাই বিষয়টি জানে। কিন্তু আমাদের সমস্যা দূর করার কোন ব্যবস্থাই হচ্ছে না। 

 


এ সময় তিনি সামনের একটি বাড়ি দেখিয়ে বলেন, এই যে দেখেন, বাড়ির দড়জার সামনে ইট দিয়ে গাঁথনি দিয়ে পানি আটকে রাখা হয়েছে। তা নাহলে ঘরের ভিতরেই পানি চলে যেত। আমাদের এই সমস্যা কবে নাগাদ সমাধান হবে তার উত্তর কেউ দিতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, গত বছরতো বর্ষার সময় এই এলাকার বিভিন্ন স্থানে নৌকার ব্যবহারও করতে হয়েছে।

 


আরেক বাসিন্দা আসিফ জানান, এখানে আগে থেকেই পানিবদ্ধতার সমস্যা ছিল। কিন্তু গত দুই বছর আগে এই মসজিদে (বাইতুস সালাত জামে মসজিদ) বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩৪ জন নিহত হয়। তারপর সিটি কর্পোরেশন মসজিদের পূর্বপাশ দিয়ে যাওয়া এই সড়কটি ড্রেন নির্মাণসহ সড়কটি উচু করে তৈরি করে। 

 


এরফলে এখানকার পানি সরানোর ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। উল্টো ড্রেনের পানিও এখানে দিয়ে বের হয়ে এখানকার পানির সাথে নোংরা ময়লা মিশে যায়। ফলে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।

 


ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য মেহেদী মোহাম্মদ বাবু বলেন, ‌‘আমাদের এই এলাকাটি বেশ নিচু। এখানে যখন বাড়ি-ঘর তৈরি হয় তখন তা কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে তৈরি করা হয়নি। তাই এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদের বিস্ফোরণের ঘটনার পর সিটি কর্পোরেশন মসজিদের পূর্ব পাশে অনেক উচু করে ড্রেন নির্মাণ করে।

 


এর ফলে রাস্তার পশ্চিম পাশের ইউনিয়ন এলাকার পানি যাওয়ার পথটি অবরুদ্ধ হয়ে যায়। আমরা কিছু দিন হলো নির্বাচিত হয়েছি। তারপরও এখানকার বিভিন্ন এলাকার সমস্যাগুলো গুরুত্ব অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে আমি বিষয়টি নিয়ে আমাদের চেয়াম্যানের সাথে আলোচনা করেছি।’ এন.এইচ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর