সোমবার   ১৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৪ ১৪৩১

জালালের মামলায় চৌরঙ্গীর মালিক সাত্তারসহ ডিবির ৪ এসআই

প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : বরফকল এলাকার চৌরঙ্গী পার্কের মালিক কাজী আব্দুস সাত্তারসহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের চার এসআই ১২ জনকে আসামী করে মামলা (পিটিশন মামলা-১৯৬/১৮) দায়ের করেছেন মাই লাইফ ক্যাফে ফাস্টফুডের মালিক ১১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি এবং শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিন।

মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) দুপুরের দিকে নারায়ণগঞ্জে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ‘ক’ অঞ্চল মেহেদী হাসানের আদালত বাদীর আবেদন আমলে নিয়ে তা আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুলিশ সুপার কর্তৃক নির্বাচিত একজন সহকারী পুলিশ সুপার কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় জালাল উদ্দিন উল্লেখ করেন, খানপুর বরফকল খের্য়াঘাট সংলগ্ন চৌরঙ্গী ফ্যান্টাসি পার্কের সামনে মাই লাইভ ফেয়ার ফুড নামে একটি ফাস্টফুডের দোকানে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। মামলায় আসামী করা হয় মোট ৫ জনকে। 

এর মধ্যে চৌরঙ্গী ফ্যান্টাসী পার্কের মালিক মিশন পাড়া মৃত: কাজী আব্দুস সামাদের ছেলে আব্দুস সাত্তার, ডিবির এসআই আমিনুল (৪৮), এসআই বকুল (৫০), এএসআই মিজান (৪৮) এবং এএসআই সায়েম (৪২)। স্বাক্ষী হিসেবে রয়েছেন জালাল উদ্দিন নিজে, মো.ইরান, মাসুদ এবং আব্দুল কাদির, রীসা ইসলাম মর্জিনা, মো.আলামিন, আলাউদ্দিন, সাহাবউদ্দিন।

ফৌজধারী দন্ডবিধির ১৪৩/৩২৩/৩২৬/৩০৭/১০৯/৩২৪/৩৫৪/৩৭৯/৩৮০/৩৮৫/৫০৬ ধারায় দায়ের করা মামালায় জালাল উল্লেখ করেন তাঁর ফাস্টফুডের দোকানটি চৌরঙ্গি পার্কের মালিক আব্দুল ছাত্তার উচ্ছেদ এর জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ চেষ্টা করছিলো। 

২৬ আগস্ট ৭ ঘটিকার সময় বিবাদী আব্দুস ছাত্তার মিয়ার ইন্ধনে ডিবির আমিনুল, এসআই বকুল, এসআই মিজান, এস আই সায়েম তাঁর দোকানে ফাস্টফুড খাওয়ার জন্য আসে। এসময় জালালের ছেলে আল আমিন তাহাদেরকে যথারীতি কুলকফি, লাচ্ছি, বার্গার, ফোসকা তাদের খেতে দেয়।  

খাওয়া শেষে জালালের ছেলে আলামিন খাবার বিলের টাকা চাওয়া মাত্র আব্দুল ছাত্তারের পূর্ব পরিকল্পনা ভাবে ও নির্দেশ মোতাবেক ডিবির লোকজন ধমক দিয়া জানায় তারা ‘আমরা ডিবির লোক, কিসের বিল দিবো’ এবং তারা ৬০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে ।

জালাল উল্লেখ করেন, তার ছেলে আলামিন এগুলোতে প্রতিবাদ করায় তারা তাদের সাথে থাকা রাইফেল পিস্তল, শটগান দিয়ে আমার ছেলেকে এলোপাথারী বাইড়িয়ে শরীরে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত ও নীলা ফুলা জখম করে এবং ক্যাশ  থেকে নগদ দশ হাজার টাকা নিয়া যায়। 

এই খবর শুনে আমার  স্ত্রী আসলে তাকেসহ ও স্বাক্ষীদের উপর আক্রমন করেও মারপিট করে এক পর্যায়ে ২নং বিবাদী আমিনুল এর হাতে থাকা পিস্তলের বাট দিয়া বাদীর মাথায় আঘাত করিয়া কাটা রক্তাক্ত জখম করে এবং মুখে আঘাত করিয়া দাঁত উঠাইয়া ফেলে। 

এ সময় তারা বাচাতে এসে অন্যান্যদের কিল ঘুষি লাথি মারিয়া মাটিতে ফেলিয়া দেয়। এসব ঘটনায় এলাকার লোকজন প্রতিবাদ জানালে এলাকাবাসীকে  তারা হুমকি প্রদান  করে এবং বলে এইখানে (চৌরঙ্গী পার্ক) ব্যবসা করিতে হইলে  প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তাদের দিতে হবে।

জালাল উদ্দিন উল্লেখ করেন, সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা  করতে গেলে থানা কর্তপক্ষ ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নিতে অস্বীকার করায় তিনি বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এবং এ কারণে মামলা করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

জালাল উদ্দিনের পক্ষে আদালতে মামলাটি দাখিল করেন অ্যাডভোকেট  মো. রফিক আহমেদ। তিনি জানান, ন্যায় বিচারের স্বার্থে আদালত আমাদের আবেদনটি আমলে নিয়ে একজন সহকারি পুলিশ সুপারকে দিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে তা আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, রোববার সন্ধ্যায় নগরীর খানপুর বরফকল খেয়াঘাট সংলগ্ন চৌরঙ্গী ফ্যান্টাসী পার্কের সামনে ১১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি এবং শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিনের মালিকাধীন ‘মাই লাইফ ক্যাফে’ ফাস্টফুডে খাবার খেয়ে বিল না দিতে চাওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সঙ্গে জালাল উদ্দিনসহ যুবলীগ নেতাকর্মীদের ব্যপক সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ ডিবি সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। 

এতে  ১১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী রিনা ইয়াসমিন, ছেলে আলামিন ও রবিন পুরো পরিবারের সদস্যরাই গুরুতর আহত হন। ডিবি’র এসআই মিজান ও এসআই সায়েম, এএসআই আমিনুল ও এএসআই বকুলসহ পাঁচ সদস্য আহত হন। 

গুরতর আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং আহতদের তিনশো শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও  ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  এ ঘটনা তদন্তে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলমকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এই কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম এবং ডিআই-১ শরাফতউল্লাহ। কমিটিকে দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। 

ঘটনার দিন দিবাগত রাতে ডিবি পুলিশের এএসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় এ মামলা দুটি দায়ের করেন। বরফকলে ডিবি পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশকে মারধর এবং পুলিশের কাজে বাঁধা প্রদানের অভিযোগে পৃথকভাবে ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে এএসআই আমিনুল দুটি মামলা দায়ের করেন।  

মামলায় মাই লাইফ ক্যাফে ফাস্টফুড দোকানের মালিক জালাল উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী রীনা ইয়াসমিন, এবং ছেলে আলামিন, রবিনসহ অজ্ঞাত নামা আরো বেশ কয়েকজনকে আসামী করা হয়।

সোমবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে ডিপিডিএস’এর এনওসিএস সাউথ বিভাগে প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কালামের নেতৃত্বে জালাল উদ্দিনের অটোরক্সা গ্যারেজ ‘ শেখ সিয়াম এন্টারপ্রাইজে’ এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। 

এসময় ডিপিডিএস’র এনওসিএস পূর্ব বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.ওয়াজেদ চৌধুরী, সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম, সাব-এসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার নন্দদুলালা সাহা উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাস্থলে জালাল উদ্দিন উপস্থিত না থাকলেও গ্যারেজের ম্যানেজার সোহাগ উপস্থিত ছিলেন।

ওইদিন বিকেলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ৭ কর্মকর্তাসহ ৮ জনকে ডিবি থেকে সাময়িক প্রত্যাহার (ক্লোজড) করে মাসদাইরে জেলা পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে। 

তারা হলেন, ডিবির পরিদর্শক মাসুদুর রহমান, এস আই মিজানুর রহমান ও আবু সায়েম, এএসআই আজিজুর রহমান, দেওয়ান তৌফিক, বকুল মিয়া, আমিনুল হক ও কনস্টেবল লুৎফর রহমান। 
 

এই বিভাগের আরো খবর