মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

ডংজিং লংজিভিটি কারখানার বিষাক্ত সিসাযুক্ত গ্যাসে ভয়াবহ দূষণ  

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১  

বন্দরের লক্ষনখোলা মাদ্রাসা স্থান সংলগ্ন মদনপুর- মদনগঞ্জ সড়কের পাশেই চীনা কোম্পানীর প্রতিষ্ঠান ডংজিং লংজিভিটি নামে একটি ব্যাটারি কারখানার বিষাক্ত সিসাযুক্ত  ছাঁই গ্যাসে ও ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বিষাক্ত সিসাযুক্ত ছাঁই গ্যাসে ও ধোঁয়ায় লক্ষণখোলা, দাসেরগাঁও, মুছাপুর ইউনিয়নের পাতাকাটাসহ আশপাশের এলাকায় গ্যাস ভয়াবহ দূষণ ছড়াচ্ছে।

 

কারখানার ছাইয়ের কারণে ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় চারপাশ। ব্যাটারি কারখানার উড়ন্ত ছাই ও ধোঁয়ার কারণে পাতাকাটা, লক্ষণখোলা ও দাসেরগাঁ গ্রামসহ আশপাশের  মানুষের চোখের অসুখ, হাপানী ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ বালাই লেগেই আছে। স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, তিন বছর আগে বন্দরের লক্ষণখোলা ও পাতাকাটা এলাকায় কৃষি জমির উপর ডংজিং লংজিভিটি লিমিটেড নামে একটি চীনা ব্যাটারি কারখানা গড়ে উঠে। কারখানাটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার জন্য ব্যাটারি তৈরি করে। শুরুতেই কারখানার তরল ও উড়ন্ত বর্জ্যে দূষিত হতে থাকে পরিবেশ।

 

কারখানা থেকে নির্গত এসিড মিশ্রিত তরল বর্জ্য, সিসাযুক্ত ছাই ও ধোঁয়া দুর্বিষহ করে তুলেছে গ্রামের হাজার হাজার মানুষের জীবন। বিষাক্ত গ্যাসের বাতাসে স্বাভাবিক শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আশপাশের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখন রোগে ভুগছেন। চোখে ঝাপসা দেখে অত্র এলাকার সাধারন মানুষ। জীববৈচিত্রের ওপরও পড়ছে ক্ষতিকর ও বিরূপ প্রভাব। শুধু তাই নয় বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে কারখানার আশপাশের জমিতে ফসল হয়না। গাছে ফল ধরে না। পুকুরে মাছ ও বাঁচতে পারেনা। কারখানার কেমিক্যালে এলাকার মাটি, পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। দূষণের কবল থেকে রেহাই পেতে এলাকাবাসী সম্প্রতি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছিলো। পরিবেশ দূষণকারী কারখানা দ্রুত বন্ধ করা না গেলে এলাকা মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। দূষণের কবল থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন এলাকাবাসী।

 

তারা আরও জানান, কারখানায় কোন ইটিপি প্ল্যান্ট নেই। তরল এসিড মিশ্রিত বর্জ্য সরাসরি রেললাইনের  পুকুরে এবং খালে ফেলা হচ্ছে। এতে পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে মরে গেছে অনেক পুকুরের মাছ। এছাড়াও তরল এসিড মিশ্রিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে রেলওয়ের লিজকৃত পুকুরে এতে করে মরে যাচ্ছে মাছ লোকসানে মৎস্যচাষীরাও। এদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছেন, সামান্য পরিবেশ দূষণ হলেও হতে পারে। বর্জ্য পরিশোধনে ফ্যাক্টরিতে রয়েছে ৪টি ইটিপি প্ল্যান্ট। এছাড়া পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রসহ সব ধরণের কাগজপত্র রয়েছে বলে দাবি তাদের।

 

পাতাকাটা এলাকার রাজু মিয়া নামের এক ব্যক্তি জানান, সব সময় বাতাসে ছাই উড়ে। যখন বর্জ্য অপসারণ হতে থাকে তখন নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সিসাযুক্ত বায়ূর কারণে পাতাকাটা ও দাসেরগাঁ এলাকার মানুষ কবরস্থান রোড দিয়ে চলাচল করতে পারেনা। এ সড়ক দিয়ে গেলেই বিষাক্ত বর্জ্যসহ বায়ূ চোখে প্রবেশ করে। আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ এই সমস্যার মধ্যে আছি। ইতিমেধ্য আমরা এলাবাবাসীরা মিলে মানবন্ধনও করেছি। লক্ষণখোলা এলাকার আব্দুল মোতালেব নামের এক ব্যক্তি জানান, লক্ষণখোলা মাদ্রাসা পুকুরে আগে এলাকার লোকজন গোসল করতো। পানি নষ্ট হওয়ায় পুকুরটি আর ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। এছাড়াও সিসাযুক্ত ছাই ও ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। আলহাজ্ব ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় ও লক্ষণখোলা মাদ্রাসার কাছে কারখানাটি গড়ে উঠায় শিক্ষার্থীদের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।

 


এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চীনা কোম্পানী গুলো খুবই চালাক। বন্দরের ডংজিং লংজিভিটি প্রতিষ্ঠানটি তারা একটির অনুমতি নিয়ে দুইটি ব্যাটারি কোম্পানী চালাচ্ছে। এর আগেও দুই দফা আমরা এই কোম্পানীকে জরিমানা করে সর্তক করে দিয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, লকডাউনের কারনে দীর্ঘ সময় আমরা কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করি নাই। এই সুযোগে তারা আবারও পরিবেশ দূষণ করছে। আমরা শীগ্রই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 


সূত্র জানায়, আগে বর্জ্য ফেলা হতো পুকুর ও খালে। পুকুর ও খালের পানি অতি মাত্রায় দূষিত হয়ে পড়ায় কারখানা কর্তৃপক্ষ এখন এসিডের পানি শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলার জন্য রাতের আঁধারে পাইপ লাইন স্থাপন করছে।  এতে আরো দূষিত হবে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি।

এই বিভাগের আরো খবর