রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

ডেঙ্গু নিয়ে এখনো টনক নড়েনি ইউনিয়ন পরিষদগুলোয়

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২৩  

 

# এনায়েতনগর ও ফতুল্লায় ডেঙ্গু নিধন কার্যক্রম শুরু হলেও নিষ্ক্রিয় বেশিরভাগ ইউনিয়ন

 

 

সারাদেশে থামছেই না ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। গতকাল ১৮ জুলাই (মঙ্গলবার) সারাদেশে রেকর্ড ১৩ জনের মৃত্যু  হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৫৩৩ জন। নারায়নগঞ্জের পরিস্থিতি ও এর ব্যাতিক্রম নয়। প্রতিদিনই বিপুল পরিমান রোগী শহরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ছুটছেন। কিন্তু এত বিপুল পরিমান রোগীর চাপ সামলাতে পারছেনা হাসপাতালগুলি। ফলে বাধ্য হয়ে ঢাকামুখী হচ্ছেন নারায়নগঞ্জবাসী। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে এনায়েতনগর ও ফতুল্লা ছাড়া কোনো ইউনিয়ন পরিষদে এ নিয়ে তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি। ডেঙ্গু শব্দটি বর্তমানে টক অব দ্যা কান্ট্রি।

 

তথ্যমতে, নারায়নগঞ্জ জেলা শিল্পখ্যাত হওয়ায় এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ জীবিকার সন্ধ্যানে বসবাস করে। এতে করে অতি ঘনবসতিপূর্ন অঞ্চলে পরিনত হয়েছে এই শহর। ফলে এক রকম বিশৃঙ্খল ও বিক্ষিপ্তভাবে চলাফেরা করে এ জনপদের মানুষ। ঘনবসতিপূর্ন হওয়ায় এডিস মশার বিচরনে অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয় এখানে। এছাড়াও এ শহরের অধিকাংশ ড্রেনেস্লেব নেই। ফলে সাধারণ মানুষ অসচেতনভাবে বিভিন্নধরনের ময়লা আবর্জনা ও অপ্রয়োজনীয় বস্তু ড্রেনে ফেলে দেয়। এছাড়াও বাসাবাড়ির আশেপাশে ময়লা আবর্জনা জমিয়ে রাখে। যা এডিস মশা জন্মাতে সহায়ক।

 

এছাড়াও ডাস্টবিনের অপ্রতুল্যতার কারনে মানুষ যেখানে সেখানে ময়লা ফেলছে যা আরেকটি বড় কারন। প্রতিরোধে কার্যকর গুরুত্ব না দেওয়ায় গোটা দেশ জুড়ে ডেঙ্গুর প্রভাব এতটা বেড়েছে বলে জানান জনস্বাস্থ্যবিদেরা। পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতি হওয়ায় সামনে আক্রান্তের সংখ্যা আরো কয়েকগুন বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তথ্য মতে, বছরেরর জুলাই মাসের শেষ কিংবা আগস্ট মাসের শুরুতে ডেঙ্গুর সংক্রমন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তবে এ বছর এ চিত্র ভিন্ন। এবার জুলাই এর শুরু থেকেই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। আগস্টের দিকে পরিস্থিতির চরম অবনতি হবে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  এ সমস্যা সারাদেশে মহামারি আকার ধারন করছে ধীরে ধীরে।

 

তবে বর্তমান সময়ের এই আলোচিত মরনব্যাধি এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে। দেশের স্থানীয় থেকে জাতীয় সকল ধরনের মিডিয়ায় ডেঙ্গু নিয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করা হলেও এ নিয়ে টনক নড়েনি ফতুল্লা থানাধীন ইউনিয়ন পরিষদগুলোর ও আশেপাশের ইউনিযনগুলোর। অথচ এ সকল ইউনিয়ন এর অন্তর্গত বাসিন্দাদের হাহাকার থামছেই না। তারা বলছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

 

এমনকি সচেতনতামূলক উদ্যোগ পর্যন্ত নেয়নি ইউনিয়ন পরিষদগুলো। নেই তাদের কোনো কার্যক্রম। বিভিন্ন ইউনিয়নগুলোর এলাকাবাসির সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তারা জানান, টিভিতে দেখি বিভিন্ন জায়গায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে মশার ঔষধ স্প্রে করছে। কিন্তু আমাদের জনপ্রতিনিধিরা হয়তো আমাদের নিয়ে ভাবে না, তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে কিছুই করছে না। অনেকে এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে আমার ফ্যামিলিতে এবং আত্মীয়দের মধ্যো অনেকেই এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ নিয়ে যেনো  কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের। এ উদাসিনতা শুধু ফতুল্লায় নয়। এমন চিত্র গোটা নারায়নগঞ্জের।

 

এ ব্যাপারে এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান জানান, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আমলে নিয়ে আমরা ফগিং মেশিন ইতিমধ্যো উপজেলা পরিষদ থেকে পেয়েছি এবং নিজেরাও ক্রয় করেছি। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমানে মশক নিধনে প্রয়োজনীয় ঔষধ রয়েছে। আমরা স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু করেছি কিন্তু খুব দ্রæত এ সমস্যা সমাধানে সাধ্যমতো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।

 

এ বিষয়ে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন জানান, আমরা ইতিমধ্যো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে কাজ শুরু করে দিয়েছি। গতকাল ৯ নং ওয়ার্ডে দুটি ফগিং মেশিন দ্বারা মশার লার্ভা ধ্বংসকারি ঔষধ স্প্রে করা হয়েছে। আজ ৮ নং ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু হবে। লোকবল সংকটের কারনে  প্রতিদিন আমরা একটি করে ওয়ার্ডে এ কার্যক্রম পরিচালনা করবো। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে সরকার জদি নতুন কোনো নির্দেশনা দেয় তবে সে নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবো।

 

এ ব্যাপারে বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শওকত আলী  জানান, ডেঙ্গুর ভয়াবহত বিবেচনায় উপজেলা কতৃক মশার ঔষধ দেওয়ার স্প্রে মেশিন দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডের মেম্বারদের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে এ ঔষধ স্প্রে করার ব্যবস্থা করছি।

 

এ ব্যাপারে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুর সাথে সাম্প্রতিক সময়ে কথা হলে বলেন, ডেঙ্গু এতটা ব্যাপক পরিসরে বৃদ্ধি পেয়েছে আমি জানিই না। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুর ব্যাপারে এমন কোনো কিছু শুনিনি। অথচ কুতুবপুরের জনগনের দাবি ফতুল্লার অন্যন্য ওয়ার্ডের চেয়ে কুতুবপুরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশি ভয়াবহ।

 

তবে সচেতন মহল বলছে অতিদ্রুত এর লাগাম টেনে ধরতে না পারলে এর ফলাফল হবে ভয়াবহ। তাই কাল বিলম্ব না করে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ জনপ্রতিনিধিদের।

এই বিভাগের আরো খবর