বুধবার   ১৬ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ১ ১৪৩১

দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের মুখে প্রশংসা নজর কেড়েছে নারায়ণগঞ্জ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৪  


দুর্গোপুজো সব সময় একটি আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় পালন হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। নারায়ণগঞ্জে নানা রঙে সাজে প্রতিটি পূজোর মন্ডপ। জেলার আকর্ষিত মন্ডপে গুলোতো ভক্তদের ভির বাড়ে চোখে পড়ার মতো। নারায়ণগঞ্জের ২১৪টি মন্ডপের মধ্যে এবারও পরিবেশ বান্ধব দূর্গা প্রতিমা সাজিয়েছে শহরের টানবাজার গোপীনাথ জিউর আখড়া। দূর্গা মায়ের মূতিসহ সকল প্রতিমা গুলোতে গহনা থেকে শুরু করে শাড়ী সব কিছু মাটির তৈরী। এছাড়া অন্যান্য গহনা, শাড়ীসহ আসবাবপত্রসহ সমস্ত সামগ্রী মাটিতে পচনশীল।

 

 


 
বাংলার প্রাচীন কারুকলার মধ্যে অন্যতম বাঁশ শিল্প। এই বাঁশকে কেটে বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল উপস্থাপন করেছেন নারায়ণগঞ্জের মণ্ডপশিল্পীরা। প্রতিমা নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন উঠে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। প্রতিমার রঙ ও সিসের প্রলেপ জলজ প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। তাই নদীদূষণ রুখতে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরের টানবাজার গোপীনাথ জিউর আখড়া।  ৬৭ বছরের পুরোনো এই আখড়ায় দুর্গাপূজার মণ্ডপ সাজানো হয়েছে পরিবেশবান্ধব সুতি পাপড়, বাঁশ ও বেতের সামগ্রী দিয়ে। পাশাপাশি প্রান্তিক গ্রামীণ এলাকার থিমে সাজিয়ে তোলা হয়েছে গোটা একটা মণ্ডপ।

 

 

 

মাটির তৈরি প্রতিমায় শাড়িটিও মাটিতে তৈরী হয়েছে। প্রতিমার অলংকার ও মাথার মুকুটেও মাটি এবং কাগজের ব্যবহার করা হয়েছে। মণ্ডপের তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে বাঁশ ও চাটাই দিয়ে। এছাড়া ছোট বেলায় দেখা গ্রামের সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই পূজা মন্ডপ ঘিরে। দূর্গা প্রতিমা থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রতিমাকে ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের নান্দনিক কারুকাজে তৈরি পূজামণ্ডপ দেশ ছাড়াও বিদেশ থেকে দেখতে আসছেন দর্শনার্থীরা।

 

 

 


 
মন্ডপ দেখতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, অন্যদের থেকে আলাদা একটা মন্ডপ এখানে। সব কিছু মাটিতে তৈরী হয়েছে। সবগুলো থেকে এটা একটু ভিন্ন লেগেছে। এই মন্ডপ পরিবেশ বান্ধব। কাপড় কেটে মন্ডপ সাজানো হয়েছে। এখানে প্লাস্টিকের কোন কিছু ব্যবহার করা হয়নি। বেশ ভালোই লাগছে। অনেক গুলো পুজো মন্ডপ দেখেছি, তবে এটা মন ছুঁয়ে গেলো। এতো গুলো মন্ডপের মধ্যে এটা একদমই আলাদা ছিলো। পুরোটাই একটা গ্রামীন পরিবেশ। আমরা চাই সবাই প্লাস্টিক ব্যবহার ছাড়া পুজো মন্ডপ তৈরী করুক।

 

 


 
একাধিক দর্শনার্থী ও মন্ডপে দায়িত্ব পালন করা ভলেন্টিয়াররা জানান, মন্ডপটা আমরা পরিবেশ বান্ধব করে ফুঁটিয়ে তুলেছি। গ্রামের ঔতিহ্যবাহী কালচার এই মন্ডপে ফুটিয়ে তুলেছি। প্রতিমার গাঁয়ের শাড়ি থেকে শুরু করে প্রতিটি ডিজাইন গ্রামের ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে।

 

 


 
ফ্রান্স থেকে আগত এক দর্শনার্থীরা ফিলিপ রোমে লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, আমার পরিবার হিন্দু, আমি হিন্দু ধর্ম পালন করি। আমার স্ত্রী বাংলাদেশী, আমার পরিবার আছে পশ্চিম বাংলায়। এবার প্রথমবার দূর্গা পূজায় আসছি নারায়ণগঞ্জে। মন্ডপ পরিদর্শনে এসে বুঝলাম, এটা কিছু ডিফরেন্ট আছে। এখানে প্লাস্টিক ইউজ করে না। আমরা সাবধান না হওয়ায় পুথিবী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে ভালো লাগে ধর্ম পালন করে আবার পাশাপাশি পুথিবীর কথাও চিন্তা করে।

 

 


 
টানবাজার গোপীনাথ জিউর আখড়া মন্দিরের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায় বলেন, আমরা পরিবেশ বান্ধব করেছি। আগামীতেও আমরা এমনটা করবো। মায়ের শাড়ি হলো চিরন্তন বাঙ্গালীর কাপড় ও সাজসজ্জা করিয়েছি। আমরা এবার কোন রকম শঙ্কাবোধ করছি না, অতিতে যেমন সবাইকে নিয়ে আমরা পূজা উদযাপন করেছি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন আমাদের কোন ইফেক্ট পড়বে না।     এন. হুসেইন রনী /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর