মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩১

না.গঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের এজিএম`র আগেই সংবাদ সম্মেলন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২৪  

# চাঁদার বিষয়ে বিএনপি নেতাদের স্পষ্ট বক্তব্য থাকতে হবে

# মোর্সেদ সারোয়ার সোহেল চেম্বার অব কমার্সকে পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেন
#মাসুদুজ্জামান নিজেকে সুপারহিরো ভাবতে শুরু করেছেন

নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুজ্জামান ও এজিএম এর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে একই সংগঠনের সদস্যদের একাংশ। ২৫ অক্টোবর (শুক্রবার) বিকেলে নগরীর ড্রিংক এন্ড ডাইন রেস্টুরেন্টে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এসময় নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সদস্য গোলাম সরোয়ার সাঈদ, মো সাহেবুল্লাহ রোমান, গোলাম হায়দার কবির, সাফায়েত হাসান, নিজামউদ্দিন ও নাসিরউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

 

সংবাদ সম্মেলনে সদস্য গোলাম সরোয়ার সাঈদ বলেন, আমাদের বক্তব্য ছিল ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন, তাদেরকে কোন হ্যারেজমেন্ট করা যাবে না। তবে যারা ব্যবসার নাম করে বিগত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন, দেশের সম্পদ লুটপাট করেছেন, বিগত সরকারের নেতাকর্মীদের অর্থপাচারে সহযোগিতা করছেন, দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছেন, তাদেরকে কোনভাবেই ক্ষমা করা হবে না। আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনে ফ্যাসিবাদের প্রেসক্রিপশনে যারা এতদিন দখল করে রেখেছিল তাদেরকে দায়িত্বে রাখা যাবে না। 

 

ব্যবসায়িক সংগঠনগুলিতে ব্যবসায়ীদের দ্বারা ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে নেতা তৈরি করতে হবে। আমাদের উদারতার সুযোগ নিয়ে চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির পদ থেকে কাজল সাহেব পদত্যাগ করার পরে অতি চাতুর্যতার সাথে ফ্যাসিবাদের দোষর সোহেল গং মাসুদুজ্জামানকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কো-অপ্ট করেন। সেই সাথে ত্বকি হত্যাকাণ্ডের আত্মস্বীকৃত খুনি পরিবারের ব্যক্তিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদায়ন করেছেন কেনো? আমরা জানি না। এ বিষয়ে তকি মঞ্চ নীরবতা ভূমিকা পালন করছে কেন? খুনি পরিবারের সদস্যকে এত বড় একটি দায়িত্বে রেখে ন্যায় বিচার সম্ভব হবে কিনা? প্রশ্ন থেকে যায়। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে মাসুদুজ্জামান সাহেব কি নিজেকে সুপারহিরো ভাবতে শুরু করেছেন। নাকি স্ট্যান্টবাজিতে শামীম ওসমানকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি আগস্ট বিপ্লবকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য স্ট্যান্টবাজি করে যাচ্ছেন কেনো?

 

তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি দাবি করলেন কে বা কারা তার কাছ থেকে আট লক্ষ টাকা চাঁদা নিয়ে গেছে। তিনি সেই টাকা ফেরত চাইলেন এবং কিছুদিন পরে পুনরায় সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করলেন চাঁদাবাজির টাকা তিনি উদ্ধার করেছেন। অথচ তিনি চাঁদাবাজদের নাম ঠিকানা কিছু বলেনি। তার এই বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জবাসী এবং ব্যবসায়ী মহল বিস্মিত হয়েছে। যার প্রমাণ তার বক্তব্যের লিঙ্ক এ গিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখলে বুঝতে পারবেন। চাঁদাবাজির টাকা নিয়ে তিনি প্রমাণ করতে চাইছেন গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে চাঁদাবাজরা তাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেছে। তার মানে নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এটাই প্রথম চাঁদাবাজি। 

 

গণঅভ্যুত্থানের কারণে চাঁদাবাজরা সুযোগ পেয়েছে, তার বক্তব্যে তিনি এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন। মাসুদুজ্জামান সাহেব আওয়ামীলীগের ঘনিষ্ঠ লোক ছিলেন, স্বৈরাচারের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। যার পুরস্কার স্বরূপ শেখ হাসিনার সরকার তাকে সিটিজেন ব্যাংক উপহার দিয়েছে। তখন ১৫০ ব্যাংকের আবেদন ছিলো, কিন্ত সে কোন যাদুতে এই ব্যাংকের পারমিশন পেলেন তা জানা উচিত। তিনি কত কোটি টাকা শেখ পরিবারকে দিয়েছেন এইটা নারায়ণগঞ্জবাসি জানতে চায়। স্বৈরাচার সরকারের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তিনি গত ১৬ বছরে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন, এই বিষয়টি সরকারকে দেখতে হবে। সেই সাথে তাকে প্রমাণ করতে হবে ককে তিনি চাঁদা দিয়েছেন এবং কে ফেরত দিয়ে গেছে। মাসুদুজ্জামান অন্য বক্তব্যে বলেছিলেন ৮ লাখ টাকার মধ্যে ৫ লাখ টাকা তারা ত্রাণ তহবিলে টাকা দিয়েছেন। যদি ত্রাণ তহবিলে টাকা দেওয়া হয় সেটা চাঁদাবাজি হয় কি করে? আর ত্রাণ তহবিলের টাকা মাসুদ সাহেবকে ফিরিয়ে দিল কিভাবে? এই ধরনের স্ট্যান্ড বাজি বক্তব্য দিয়ে মাসুদুজ্জামান সাহেব তার নৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ দিয়েছেন।

 

সদস্য সাইদ আরেও বলেন, অভিযোগের তীর যেহেতু বিএনপি'র দিকে, বিএনপি নেতাদের স্পষ্ট বক্তব্য থাকতে হবে, তারা কি চাঁদাবাজির টাকা নিয়েছেন, নাকি কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। গণঅভ্যুত্থানের বেনিফিসারি বিএনপি ও জামাত, তাই শহীদদের রক্তের সাথে কোনভাবে বিএনপি,জামাত বেইমানি করবে না, এটা জাতির সামনে নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে ফ্যাসিবাদের দোসরদের মাসুদুজ্জামান এর নেতৃত্বে চেম্বার অফ কমার্সে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। তারই অংশ হিসেবে তার নিজস্ব বলয়ের কিছু ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ে আগামীকাল চেম্বার অব কমার্সের এজিএম করতে যাচ্ছেন। গঠনতন্ত্রের আলোকে কমপক্ষে সাত দিন পূর্বে সাধারণ সভার নোটিশ সকল সদস্যদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

 

কিন্তু তিনি সুকৌশলে তার বলয়ের লোকের বাইরে কাউকে দাওয়াত দেননি, আমি নিজেও চিঠি পাইনি। আমরা সদস্যরা মনে করছি এই এজিএম এর মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগীরা আগস্টের বিপ্লবকে নস্যাৎ করার চক্রান্ত হিসেবে পুনরায় চেম্বারের বোর্ড দখল করতে চাইছে। যা স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র-জনতা কখনোই মেনে নেবে না। তাই আমরা এই এজিএম কে প্রত্যাখ্যান করছি এবং মাসুদ সাহেবকে সহ বোর্ডের সকল পরিচালকদের পদত্যাগ দাবি করছি। আমরা সদস্যরা মনে করছি মাসুদুজ্জামান স্ট্যান্টবাজির মাধ্যমে এবং গোপনে এজিএম ডাকার মধ্য দিয়ে চেম্বারের প্রেসিডেন্ট পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। সেই সাথে সোহেল গং পরিচালক থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। অবিলম্বে প্রেসিডেন্টসহ পূর্ণাঙ্গ বোর্ড পদত্যাগ করতে হবে।

 

সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা সাধারণ সদস্যগণ চার দফা দাবি পেশ করছি। মাসুদুজ্জামান সহ নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর পূর্ণাঙ্গ বোর্ড পদত্যাগ করতে হবে, বিএনপির মহানগর কমিটি এবং জেলা কমিটিকে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে হবে, চাঁদাবাজির টাকা তারা নিয়েছে কিনা? জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র জনতাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের কিভাবে মূল্যায়ন করবে? এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর মালিক সকল সাধারণ সদস্যবৃন্দ তাই সাধারণ সদস্যদের প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে যদি ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মা দখল দারিত্ব করতে চায় তাহলে সাধারণ সদস্যরা প্রতিরোধ করবে এবং এর দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।

 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে সদস্য গোলাম সরোয়ার সাঈদ বলেন, একটা একটা ব্যবসায়িক শহর। মাসুদ সাহেব কোথায় থেকে এসে কোথায় ব্যবসা করে এটা আমরা সবাই জানি। তার মানে এই না, শামীম ওসমান যেমন ৭০-৮০ রাকাত নফল নামাজ পরতো সেরকম বক্তব্য দিবেন। মাসুদ সাহেব যখন প্রেসিডেন্ট হয় তখন মোহাম্মদ আলীর সাথে আমার কথা হয়, আমরাও না করি নি। আমরা মাসুদ সাহেবের কথা তুলেছি তার আচারনের কারণে। আরেক জন আছেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোর্সেদ সারোয়ার সোহেল, তিনি চেম্বার অব কমার্সকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেন। যে কেউ সদস্য হওয়ার পর তার অধিকার থাকে সংগঠনের গঠনতন্ত্র নেওয়া, কিন্তু তারা এটা দিচ্ছেন না। মোর্শেদ সারোয়ার তার যোগ্যতায় এখানে আসেন নাই, সেলিম ওসমান টিক দিয়েছেন তাই উনি এখানে আসছেন।

 

আমাদের কথা এখন আপনারা পদ ছেড়ে দেন, সাধারণ সদস্যদের হাতে দিয়ে দেন। সাধারণ সদস্য যদি মনে করে আপনাকে প্রেসিডেন্টে বানাবে তাহলে নির্বাচনের মাধ্যমে হবেন, আমাদের কোন আপত্তি নেই। আমরা আহ্বান করবো, আপনারা যে এজিএম আগামীকাল করতে যাচ্ছেন সেটা বন্ধ করেন। না হয় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো। সদস্যদের মধ্যে প্রায় ২ শতাধিক আছেন যারা এই আচারণে ক্ষুব্ধ। আগে অনেকেই সদস্য হতে পারেন নি, কারণ আবেদন করার পর চেক করা হতো সে কোন আদর্শে বিশ্বাসী। এই জন্য অনেকে সদস্য হতে পারেন নি, কিংবা সদস্য হয়েও রিনিউ করতে পারেন নি। তারা যদি পদত্যাগ না করে এবং মাসুদ সাহেব আমাদের প্রশ্নের ব্যখ্যা না দেয় তাহলে আমরা কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো সেটা জানানো হবে। মাসুদ সাহেব যে মোহাম্মদ আলীর হাত ধরে আসছেন, এজিএমএ সেই মোহাম্মদ আলীকেই তিনি দাওয়াত দেন নি। এটা আমাকে মোহাম্মদ আলী আমাকে ফোনে জানিয়েছেন।
 

এই বিভাগের আরো খবর