শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ১৩ ১৪৩১

নান্নু-সোহাগের কী হবে

এম মাহমুদ:

প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২৪  

সোনারগাঁয়ে আলোচিত রয়েল রিসোর্ট কান্ডে হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলায় প্রায় সাড়ে তিন বছর পর বেকসুর খালাস পেয়েছেন। কিন্তু ২০২১ সালের দিকে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি ও সোনারগাঁ উপজেলা যুবরীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু পরিকল্পিত ভাবে মামুনুল হককে হেনেস্তা এবং মামুনুল হকের বৈধ স্ত্রীকে অনত্র নারী প্রচার করে মামুনুল হকের সম্মানহানীও করেছিলেন। 

 

পরবর্তীতে মামুনুল হককে হেনেস্তা এবং সম্মানহানী করায় আওয়ামীলীগ থেকে পুরস্কার স্বরূপ নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন সোহাগ রনি ও রফিকুল ইসলাম নান্নুকে এই রয়েল রিসোর্ট কান্ডের ঘটনাকে উল্লেখ করে একের পর এক মামলা দায়ের করানোর মাধ্যমে মামলা বাণিজ্যে মহোউৎসবে সুযোগ করে দিয়েছিলেন আওয়ামীলীগ। কিন্তু আওয়ামীলীগ শাসন আমলেই সোনারগাঁয়ের বহু অপকর্মের হোতা নান্নু-সোহাগকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামীলীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পূর্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় একাধিক হত্যা কান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকা অভিযোগে মামলা তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখনও গ্রেফতারের আওতায় আসেনি। যার কারণে অত্যান্ত দ্রুত সময়ের মধ্যেই হেফাজতের নেতাকর্মীরা মামুনুল হককে হেনেস্তা এবং সম্মানহানীর কারিগর সোহাগ-নান্নুকে গ্রেফতারের আওতায় বিচার কার্য পরিচালনার দাবি জানাচ্ছে।

 


রয়েল রিসোর্ট কান্ডের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলাম নেতা মাওলানা মামুনুল হক তার দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত-আরা ঝর্ণাসহ রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন। সেসময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মামুনুল হকের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে হেনেস্তা এবং সম্মানহানী করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি ও সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুকে নিয়োগ দেন আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা। 

 

পরবর্তীতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডার বাহিনীদের নিয়ে সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টে প্রবেশ করে মামুনুল হকের অবস্থান করা ৫০১ নম্বর রুমে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা করে মামুনুল হক অকথ্য ভাষায় গালামন্দ করেন যুবলীগের সভাপতি নান্নু ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সোহাগ রনি মামুনুল হককে ধাক্কা দেন। নান্নু-সোহাগের এসকল ঘটনা তাদের নিজস্ব ফেইসবুক আইডিতে লাইভ করে দেখিয়ে দেশব্যাপী প্রচারের চেষ্টা করলে হেফাজতের নেতারা সংঘবদ্ধ হয়ে সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টে ধাওয়া দিলে নান্নু-সোহাগ তাদের সাঙ্গ পাঙ্গরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে মামুনুল হককে উদ্ধার করতে সক্ষম হন হেফাজতের নেতারা সেদিন সোনারগাঁ হেফাজতের নেতাদের দখলে থাকলেও পরদিন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কুটকৌশলে হেফাজত নেতাদের দমাতে প্রশাসনের সহযোগীতায় একাধিক মামলার প্রস্তুতি নেন। এমনকি প্রতিবাদ সভা করে আওয়ামীলীগের নেতারা নান্নু-সোহাগকে বাহাবা দেন। এরপরই মামুনুল হককে আসামী করে একের পর এক মামলা দিতে থাকেন নান্নু-সোহাগের পরামর্শে প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহল থেকে আর এই একের পর এক মামলা দিয়ে হেফাজত নেতাদের কাবু ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মামলা অর্ন্তভুক্ত করে মামলা বাণিজ্যে লিপ্ত হন নান্নু-সোহাগ। 

 

এরপর মামুনুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত-আরা ঝর্ণাকে নিয়ে নানা নাটকীয়তা সৃষ্ট করেন। এরমধ্যেই ২০২১ সালের ১৮এপ্রিল মামুনুল হককে গ্রেফতার করে একটি মানিব্যাগ চুরির মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল রহস্যজনকভাবে মামুনুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত-আরা ঝর্ণা থানায় এসে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এই মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে অণিত সকল অভিযোগের যাচাই বাছাই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০২৪ সালের ২৪ অক্টোবর মামুনুল হককে খালাস দেওয়া হয়। কিন্তু মামুনুল হককে হেনস্থা এবং সম্মানহানীর কারিগর বিতর্কিত যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নান্নু ও সোহাগ ইতিমধ্যেই আওয়ামীলীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পূর্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় একাধিক হত্যা কান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকা অভিযোগে মামলার আসামী হয়ে গা ডাকা দিয়ে থাকলেও এখনো গ্রেফতার হয়নি। যার কারণে হেফাজত নেতাদের দাবি শীঘ্রই নান্নু-সোহাগকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় হনে বিচার কার্য পরিচালনা করা। তাছাড়া রিসোর্ট কান্ডে নান্নু-সোহাগের ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেফতার হয়ে মাওলানা ইকবাল নিহত ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল নিহত হয়। যার কারণে ইতিমধ্যেই মামুনুল হক আওয়ামীলীগ দোসরদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এছাড়া শীঘ্রই নান্নু-সোহাগের বিরুদ্ধেও আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে তাগিদ দেয়া হবে দলীয়ভাবে । 

 


ধর্ষণ মামলায় মামুনুল হক বেকসুর খালাস পাওয়ায় এই মামলার আইনজীবী এড. ওমর ফারুক নয়ন যুগের চিন্তাকে বলেন, আসলে একটি নাটকীয়তার আদলে এই মামলাটি সাঁজানো হয়েছিল। যার কারণে এই মামলা থেকে আজকে মামুনুল হক বেকসুর খালাস পেয়েছেন। কিন্তু রিসোর্ট কান্ডে মামুনুল হককে হেনেস্তা করার পর একটি মানিব্যাগ চুরির মামলায় গ্রেফতার করা হয়। সেসময় থেকেই আমি মামুনুল হকের মামলার আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত হই। তিনি আরও বলেন, মামুনুল হককে গ্রেফতারের পর তার মামলার আইনজীবী হওয়ায় তার সাথে কথা বলতে যাওয়ায় তৎকালীন এডিশনাল এসপি আমাকে ধাক্কা দিয়েছিলেন। 

 

এছাড়া তার বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণ মামলা আইনজীবী হিসেবে আমি পরিচালনা করায় আমাকে নারায়ণগঞ্জের আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি জুয়েল এবং সাধারণ সম্পাদক মহসীন তাদের আওয়ামী পন্থী আইনজীবীদের নিয়ে আমাকে বিভিন্ন ভাবে হেনেস্তা বা হুমকি ধামকি প্রদান করেছিলেন। তাছাড়া মামুনুল হককে হেনেস্তা করার মূল কারিগর ছাত্রলীগের সাবেক সি.সহ-সভাপতি সোহাগ রনি ও সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে বিগত সময়ে হুমকি ধামকি প্রদান করেছিল। 
 

এই বিভাগের আরো খবর