মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩১

পেঁয়াজ দেবে না, ইলিশ দেবো কেন

পরিচয় প্রকাশ গুপ্ত

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০  

‘ওরা আমাদের পেঁয়াজ বন্ধ করে দিয়েছে, আমরা কেন ইলিশ দেব?’ ভারতকে আর ইলিশ না দেয়ার দাবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আড্ডা আলোচনায় ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ হয়ে উঠেছে। 

পেঁয়াজের দাম একদিনে ষাট থেকে লাফ দিয়ে ১২০ টাকায় উঠা এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সীর ‘দুষ্ট লোক ষড়যন্ত্র করছে, দেশে পিঁয়াজের অভাব নেই’, এসব কথায় দেশবাসি এখন ক্ষুব্ধ।

কারণ, পিঁয়াজ বিক্রেতা বলে দিয়েছে, আজ ১২০ টাকায় কিনছেন, কাল আরও ২০ টাকা বেশী নিয়ে আইসেন। মানুষ কার কথা বিশ^াস করবে? মন্ত্রী ছেলেভুলানো গল্প আউড়ে যাচ্ছেন বলে মনে করছে তারা। 

এদিকে, ভারত আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকার পরও মাঝপথে পিঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। আগে থেকে বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে কোন রূপ অবহিত করার প্রয়োজনীয়তাও তারা বোধ করেনি।

গত বছর এ সেপ্টেম্বর মাসেই ভারত গতবারও পিঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছিল। তারপর ধাপে ধাপে পিঁয়াজের দাম উঠেছিল প্রায় তিনশ’ টাকায়। এবারও তেমন অবস্থা ঘটতে যাচ্ছে বলে মানুষের ধারণা।

গতবার ঠিক এ সময়ে অর্থাৎ দুর্গাপূজার প্রাক্কালে প্রতিবেশী বাঙ্গালীর রসণার পরিতৃপ্তি দিতে আমরা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে ৫শ’ টন ইলিশ পাঠিয়েছিলাম।

এবারও সরকার পূজা উপলক্ষে সেখানে ১৪৭৫ টন ইলিশ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। যার মধ্যে দু’ট্রাক ইলিশ ইতিমধ্যেই ভারত পৌঁছেছে। এসব ইলিশের সাইজ ৮শ’ থেকে ১২শ’ গ্রাম।

এর মধ্যেই ভারত আমাদের পিঁয়াজ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং এক লাফে বাজারে পিঁয়াজের দাম উঠেছে ১২০ টাকায়। তাই ভারতকে ইলিশ দেয়া দেশবাসির অপছন্দ। 

গতকাল বোস কেবিনের আড্ডায় ‘ওরা আমাদের পিয়াঁজ দিচ্ছে না, আমরা ওদের ইলিশ দিতে পারি কিনা’ ইস্যুটি ছাড়তেই এক সঙ্গে সবাই হুঙ্কার দিয়ে পড়লো। যেন মরা গরুর উপর শকুন পড়েছে।

বিএনপি নেতা এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ভারতের প্রতি আমাদের প্রেম ওয়ান সাইডেড (এক তরফা)। এ কারণেই ওরা পিঁয়াজ না দিলেও আমরা ইলিশ দিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া পিঁয়াজ না দেয়ার পেছনে ভারতের রাজনীতিও আছে।

তা না হলে ঐ দেশের কৃষক এবং রাজনৈতিক নেতারা পিঁয়াজ রফতানি বন্ধ না করার দাবি জানিয়েছে, বলেছে, পিঁয়াজ রফতানি বন্ধ থাকলে কৃষক ন্যায্য দাম বঞ্চিত হবে। তারপরও ভারত তা বন্ধ করেছে।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি সেক্রেটারী আব্দুর রহমান বলেন, আমি মাত্র ল্যাব হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছি। গত কয়েক দিন আমাকে পত্রিকাও দেয়া হয়নি। তারপরও আমি পিয়াজ না দেয়া এবং তার বিপরীতে ইলিশ দেয়ার তীব্র নিন্দা করছি।

এড. সুমন মিয়া বলেন, পিঁয়াজ দেবে না, কিন্তু ইলিশ দেবো, তা হবে না। আড্ডাবাজ জগলুল হায়দারী বলেন, ওরা পিঁয়াজ দেবে না, কিন্তু আমরা ওদের ইলিশ দিয়েই যাব, এটাই চলবে। কারণ, এটাই আমাদের নিয়তি। এ নিয়ে বেশী কথা কইবেন না, মুশকিল আছে।
 

এই বিভাগের আরো খবর