মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

প্রবাসের সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো শুভ’র পরিবারের স্বপ্ন

সাদিয়া মীম

প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২১  

বাবা, মা আর ছোট বোনের স্বপ্ন পূরণের জন্য চারবছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন ফতুল্লার কুতুবপুরের রবিউল হাসান শুভ। শনিবার রাতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় রবিউলের বাবা-মা। নিহত সন্তানের মুখ দেখা তো এখনো হয়নি এমনকি সামনের দিনগুলো কীভাবে যাবে সেই দুঃশ্চিন্তাও গ্রাস করছে পুরো পরিবারকে। 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবিউল হাসান শুভ কুতুবপুরের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আলাউদ্দিন হাওলাদার এর বাড়ির পাশে শফিকদের বাড়ির নিচতালার ভাড়াটিয়া । রবিউল হাসান শুভ পরিবারের একমাত্র ছেলে ।২০১৪ সালে এইচ.এস.সি  পাশ করেন ।রবিউল হাসান শুভ এর বাবা মুসলিম উদ্দিনের একটি ছোট ভাঙারির দোকান ছিল পাগলা রেল লাইনের পাশে। ডাবল লাইনের কাজকাজ ধরায় দোকানটি ভেঙে দেয়া হয়েছে ।

 

তখন বাবা মুসলিম উদ্দিন সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে অল্প বয়সে বিদেশে পাঠান ছেলে শুভকে। বাবা মুসলিম উদ্দিনের দোকান থেকে পাওয়া কিছু টাকা ও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে কিছু  টাকা ধার করে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শুভকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠান । সদ্য কৈশোর পেরিয়ে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই সংসারের হাল ধরতে দক্ষিণ আফ্রিকায়  কাজে লেগে পড়েন শুভ। যে বয়সে বইয়ের রঙ্গিন পাতায় মুখ লুকিয়ে তার বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা গল্প করার কথা সে বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয় শুভকে ।

 

শুভ সাউথ আফ্রিকায় তার নানার একটি দোকানে একজন স্টাফ হিসেবে কাজ করে আসছিল । হঠাৎ (২৮ আগষ্ট) শনিবার সকালে রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান রবিউল হাসান শুভ । পরিবারের কাছে খবর আসে (২৮ আগষ্ট) শনিবার সকাল ১১ টায় । তখন পরিবারকে জানানো হয়  শুভ সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়েছে ও তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ।  শনিবার সন্ধ্যা ৭ টায় সাউথ আফ্রিকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে শুভ । রাত সাড়ে ৯ টায় শুভর  পরিবারের কাছে তার মৃত্যু সংবাদ আসলে তার পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া |


শুভ’র বাবা মুসলিম উদ্দিন বিগত ৩ বছর যাবৎ বেকার। বোন মিতু পাগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এস.এস.সি পরিক্ষার্থী । মা রানী বেগম  গৃহিনী। পুরো সংসারটি চলতো শুভর একমাত্র উপার্জনের উপর । বিদেশে যাওয়ার পর শুভর মা শুভকে সব সময় বলতেন দেশে আসার কথা কিন্তু শুভ বলতেন মা আমি ৫ বছর নয় আমি টানা ১০ বছর সাউথ আফ্রিকা থাকবো, এরপর একবারে দেশে চলে আসবো । শুভর স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে গেল । পরিবারের কাছে আর কখনো ফেরা হবে না শুভর ।

 

পরিবার পরিজন জানেনা কবে আসবে শুভর মরদেহ। শেষ বারের মতো কবে দেখতে পাবে শুভকে সে অপেক্ষায় আছে তার পরিবার । পরিবারকে জানানো হয়েছে, আগামী ৭/১০ দিন পে দেশে আসবে শুভর মরদেহ। একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে সামনের দিনগুলো কেমন যাবে সেই অনিশ্চয়তায় রয়েছে পুরো পরিবারটি।  
 

এই বিভাগের আরো খবর