রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৮ ১৪৩১

প্রশাসনের নীরবতায় ফুটপাত-সড়ক দখলে হকাররা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪  

# শহরের সড়কে যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ হকার
# হেঁটে চলার জায়গাটি এখন আর অবশিষ্ট নেই

 

নারায়ণগঞ্জ শহরকে যানজট, হকার সমস্যা সহ নানা সমস্যা থেকে নগরবাসিকে মুক্তি দেয়ার জন্য এই বছরের শুরুতে এক গোল টেবিল বৈঠকে দুই মেরুর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শামীম ওসমান এবং সেলিনা হায়াত আইভী এক হয়েছিলেন। তাদের এক হওয়ার সুফল নগরবাসী পেয়েছেও বটে। কিন্তু গত ৫আগষ্টের  কিছু দিন পরেই তা ভেস্তে যায়। সচেতন মহলের মতে, প্রশাসনের নীরবতায় নারায়ণগঞ্জ শহর হকারর আর যানজটে অতিষ্ঠ মানুষ। শহরের করুণ পরিস্থিতিতে নগরবাসিকে স্বস্তি দেয়ার মত কোন লোক  নেই। প্রশাসনের কঠোরতায় আগে ফুটপাতে হকাররা বসতে পারত না। অথচ সেই হকাররা এখন ফুটপাতের সাথে বঙ্গবন্ধু সড়কের অর্ধেক দখল করে নিয়েছের হকাররা। এই হকাররা এখন লাগামহীন ভাবে বেপরোয়া হয়ে ফুটপাতের সাথে সড়ক দখল করে নিয়েছে। আগে সদরা থানার পুলিশ টহল দিয়ে তাদের উঠিয়ে দিলেও এখন আর কেউই তাদের কোন কিছু বলে না। এছাড়া হকারদের ভিড়ে থেকে একটি গোষ্ঠি ছিনতাই, চুরি চালিয়ে যায়। এদিকে বৈধ, অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা মিশুকের রাজত্ব চলছে পুরো শহর জুড়ে। আরেক দিকে অবৈধ হকারদের বেপরোয়া দখলে মানুষ এখন আর ফুটপাত সড়কে হেঁটে চলাচল করতে পারেন না। চাষাঢ়া থেকে কালির বাজার ৫ মিনিটে হেঁটে চলার পথও এখন হকার আর মানুষের ভীড়ের জন্য ৩০ মিনিটে হেঁটে গন্তব্যে পৌছানো যায় না। যার গাড়িতে কিংবা ব্যাটারি চালিত পরিবহনে চলাচল করে তারাতো ঘণ্টা খানিক সময়ে চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ যেতে পারে না। তাছ্ড়াা বঙ্গবন্ধু সড়ক দিয়ে এম্বুলেন্স যাবে এখন সেই পরিবেশও নেই।  
 
অপরদিকে ৫ আগষ্টের আগ পর্যন্ত শহরে একদিকে ব্যাটারি চালিত অটো প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তখন নিয়ন্ত্রনে ছিল। কিন্তু সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে প্রশাসন ভঙ্গুর হয়ে পরে। এতে করে হর হামেশাই ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিকশা শহরময় তাণ্ডব চালাচ্ছে। তার মাঝে অবৈধ পার্কিং করে গাড়ি রেখে রাস্তা দখল করে রাখে। এছাড়া সবচেয়ে বড় ঝামেলা হকারতো আছেই। তারাও এখন বেপরোয়া হয়ে গেছে। একজন মানুষ শহরে এখন হেটেও চলাচল করতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আবার অনেকেই ছিন্তাকারীদের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু এসব নিয়ে প্রশাসনের কোন মাথা ব্যথা নেই। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ পথচারীরা। শহরকে যানজট মুক্ত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

পথচারী সেলিমুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি বলেন, নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত পুরো শহরজুড়ে অবৈধ হকারদের দাপট চলছে এখন। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে বৈধ রিকশার পাশাপাশি অবৈধ রিকশার দাপট। এসব অবৈধ যান বাহনের কারণে শহরে যানজটের সৃষ্টি হলেও প্রশাসনের তরফ থেকে এ নিয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। আগে দেখতাম পুলিশ হকারদের বসতে দিত না। বসলে তাদেরকে উঠিয়ে দিত। কিন্তু এখন পুলিশ হকারদের সামনে দিয়ে যায় অথচ হকারদের কিছু বলে না। আর এতে করে হকাররা বেপরো হয়েফুটপাত ছেড়ে সড়কের অর্ধক দখল করে নিয়েছে।

আরেক শরীফ নামের এক পথচারী বলেন, ৫ আগষ্টের পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরে পুলিশ প্রশাসনও অনেকটা ভঙ্গুর হয়ে গেছে। নামকাওয়াস্তে যৌথ বাহিনী একদিন অভিযান পরিচালনা করলেও তার ফল নগরবাসী কোন কিছুই ভোগ করতে পারে না।
নগরকবাসীর মতে, নগরীকে যানজট মুক্ত রাখতে হলে শহরে ইজিবাইক, মিশুক ও ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। তাদের সাথে আগের মতে হকারদের ফুটপাতে বসতে দেয়া বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় যানজটের কারণে এ শহর অচল হয়ে যাবে। যা এখন অচল হয়ে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা সহ শহরে প্রায় ৬শ’র বেশি হকার রয়েছে। যারা অবৈধ ভাবে ফুটপাত, সড়ক দখল থাকায় মানুষ এখন নিরুপায় হয়ে গেছে। এর থেকে উত্তরনের পথ খুঁজছে তারা।

সচেতন মহলের মতে, অবৈধ এসব হকার এবং যান চলাচলের বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগ যদি এখনি কঠোর না হয়, তা হলে এ শহরে চলাচল করা মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। এ ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে নগরবাসী।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার  প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানান, যানজট নিরসনে অবৈধ যানবাহন বিশেষ করে ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিকশার বিরুদ্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে। তাছাড়া আমাদের পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন পয়েন্টে চেক করে তারা যেন প্রবেশ করতে না পারে সে বেপারেও তৎপর রয়েছে। অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যানজট নিরসনে আমাদের পুলিশ তৎপর হয়ে কাজ করছে।
 

এই বিভাগের আরো খবর