রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৮ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ করেছি : বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু

এন.হুসেইন রনী

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০২২  

 

১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় পাকিস্তানের সামরিক সরকারকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতেই তারা সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা শুরু করে।

 

 

যেহেতু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত ছিলাম, তাই ৭০ এর নির্বাচনের পর থেকেই দলীয় নেতাদের কথায় বিশেষ করে আমার প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুর কথায় বুঝতে পেরেছিলাম, স্বাধীনতা যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে।

 

 

১ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার মহান বিজয়ের মাসে যুগের চিন্তার বিশেষ আয়োজন ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা’ অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলছিলেন, অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান বাচ্চু।

 

 

তিনি বলেন, ঢাকায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আক্রমণ করেছিলো ২৫ মার্চ রাতে; কিন্তু নারায়ণগঞ্জে আক্রমণ করে ২৭ মার্চ। আমরা ঐ দিন অস্ত্র নিয়ে তৈরি ছিলাম পাকিস্তানীদের মোকাবিলা করার জন্য।

 

 

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে শুধু আমরা যুদ্ধ করিনি, ঐ সময় কৃষক, শ্রমিক-জনতা এবং সাধারণ মানুষ সকলেই মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহযোগীতা করেছে।

 

 

অনেক সাধারণের মাঝে মহয়সী মা’কে দেখেছি; যারা না খেয়ে আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তারা আমাদেরকে উৎসাহ যুগিয়েছেন, সাহায্য করেছেন।

 

 

এই সাধারণ মানুষগুলো যদি আমাদের সহযোগীতা না করতো, তাহলে আমরা প্রশিক্ষিত পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারতাম না। আমি সেই সকল সাধারণ মানুষগুলোর অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি।

 

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান বাচ্চু জানান, প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য আমরা খুব কষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সালদা নদী পাড়ি দেবার সময় পাকিস্তান আর্মিরা আমাদের নৌকার দিকে গুলি ছুড়ে। সে যাত্রায় আমরা কোনক্রমে বেঁচে যাই।

 

 

অত:পর আমরা উদয়নগর হয়ে আগরতলা পৌছাই। যেখানে আমরা নামলাম তার নাম বটতলা ষ্টেশন। সেখানের মানুষের সহযোগীতায় আমরা জয় বাংলা অফিস খুঁজে পাই। সেখানে গিয়ে আমি আমার নেতা বজলুর রহমান সাহেবকে দেখতে পাই, যিনি বর্তমান এসএসএফ চীফ মেজর জেনারেল মুজিবুর রহমান সাহেবের পিতা।

 



পরবর্তীতে বজলু ভাই আমাদেরকে মেলাগড় ইয়ুথ ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিলেন। আমি আগরতলায় পৌছেছিলাম ১৪ এপ্রিল; এপ্রিল-মে মাস আমরা ইয়ুথ ক্যাম্পেই ছিলাম।

 

 

পরবর্তীতে শেখ ফজলুল হক মণি ভাইয়ের নির্দেশ এবং ছাত্র নেতা মনিরুল ইসলাম ভাইয়ের টেলিগ্রাম পেলাম। সেই অনুযায়ী ক্যাপ্টেন সুলতান সাহেবেরে সাথে উত্তর চব্বিশ পরগণার বরিহাট থানার ইচামতি নদীর পাড়ে বাকুন্ডি ক্যাম্পে আসি; যেটা ছিলো আমার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

 

 

সেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে যখন বাংলাদেশে আসার জন্য তৈরি হচ্ছি, তখন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে বললেন, না তুমি এখন দেশে যেতে পারবেনা। তোমাকে এখানে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

 

 

চেইন অব কমান্ডের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শুরু হলো আমার জীবনের আরেক নতুন মিশন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান বাচ্চু বলেন, যাই হোক আমি ভারতের সকল কার্যক্রম সুসম্পন্ন করে বাংলাদেশে মেজর এম.এ জলিলের অধীনে ৯নং সেক্টরে খুলনা অঞ্চলের মোংলাপোর্ট সংলগ্ন বাজুয়া বাজার ক্যাম্প কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।

 

 

সেখানে আমরা কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালনা করি। পরিশেষে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর স্নেহে সিক্ত হয়েছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরর ভালোবাসা পেয়েছি। আমি গর্ব অনুভব করি, যখন মানুষ আমাকে বলে আপনি তো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আপনিতো এদেশের সূর্যসন্তান, আপনি আমাদের গৌরব। তাছাড়া যুগের চিন্তা পরিবারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করার জন্যে।

এই বিভাগের আরো খবর