রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৮ ১৪৩১

বাদলের জমি খেকো আশরাফুল গায়েব

হাবিবুর রহমান

প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২৪  

 

 

 

# ভূমিদুস্যতা করে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে এই আশরাফুল
#  ফের কাশীপুরে ঢোকার আশায় কিছু কথিতদের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে দর-দাম

 

ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সংগঠিত হওয়া বিভিন্ন অপকর্মের মূল হোতা হচ্ছেন কাশীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম. সাইফুল্লাহ বাদল। তারই সহযোগী হিসেবে সুপরিচিত ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ভূমিদুস্য আশরাফুল আলম। এদিকে সাইফুল্লাহ চাদাঁবাজ, ভুমিদস্যুতা, স্কুল-মাদ্রাসা বানিজ্যে মাদককারবারী, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, ঝুট সন্ত্রাসী, থানায় প্রভাব বিস্তারসহ বহু অভিযোগ রয়েছে। এই সকল অপকর্মের মধ্যে অন্যমত ছিলো ভূমিদুস্যতা। 

 

যা পরিচালনায় ছিলেন এই জমি খেকো আশরাফুল আলম। কাশীপুরের নরসিংপুর এলাকায় বাদলের সহযোগীদের নিয়ে ভূমিদুস্যতা চালাতেন তিনি শুধু কাশীপুরেই সীমাবদ্ধ নয় পুরো ফতুল্লা জুড়েই ভূমিদূতায় ছিলো তার অধিপত্য। তা ছাড়া টাকার বিনিময়ে বিচার, সাধারণ মানুষদের জোরপূর্বক খাড়া দলিল করে ভয়ভীতি দেখিয়ে অল্প অর্থে জমি লিখে নেওয়া এই সকল অপকর্মের মাধ্যমে বর্তমানে শত শত কোটি টাকার মালিক ১০টির অধিক বাড়ি-গাড়ি-ফ্লাটসহ বহু জমির মালিক বনে গেছেন এই মুনসুর আলী প্রেসিডেন্টের ছেলে আশরাফুল আলম। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় একক রাজত্বভাবে ভূমিদুস্যতা চালিয়ে আসছে এই আশরাফুল আলম। 

 

সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে লুটেছেন টাকা, কাশীপুর দেওভোগ হাজী উজির আলী স্কুল ও কাশীপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ নিয়ে দূর্নীতি। এদিকে গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর নারায়ণগঞ্জের গডফাদার ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান। এর মধ্যে কিছু অর্থের বিনিময়ে কাশীপুরের ক্যাডার সাইফুল্লাহ বাদল কিছুদিন বাসায় থাকলে ও সদর-ফতুল্লার কয়েকটি হত্যা মামলা বর্তমানে ঘর-ছাড়া তিনি। 

 

তারই মাঝে বিগত দিনে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ও বাসায় থাকতে পেরেছিলেন সেই আওয়ামী লীগের ক্যাডার নেতার সহযোগী আশরাফুল আলম। কিন্তু এবার তিনি গত ১৫ বছরে যেভাবে অত্যাচার চালিয়ে গেছেন তা মাত্রা ছাড়িয়েছে বলেই বর্তমানে তিনি ও ঘর-ছাড়া হয়ে পরেছেন। বর্তমানে ফের ঘরে ফিরতে বিএনপির কিছু কথিত নেতাকর্মীদের সঙে আতাঁত করে দর-দাম চালাচ্ছে এই আশরাফুল আলম।

 

জানা গেছে, গত ১৯৯১ সালে জামান থেকে দেশে আসেন এই কথিত আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল আলম। এসেই তাদের পৈত্তিক সম্পত্তি প্রেসিডেন্ট বাড়ি এলাকায় একটি ভবন নির্মাণ করেন। সে সময় বিদেশ থেকে আসায় তার সাথে ছিলো টাকা। সেই টাকাকে পুজি করে তার সাথের কিছু লোক নিয়ে নেমে পরেন জমি ব্যবসায়। আস্তে আস্তে জামায়াত কিছু লোকদের সাথে সম্পর্ক ভালো থাকায় তাদের সাথে ভিড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পরেন তিনি।

 

 পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মামলায়-হামলায় নির্যাতিত হতে হয় এই আশরাফুলকে। এক সময় ভোল পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে যোগসাজসে বনে যান আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে তার এক ঘনিষ্ঠ লোকের মাধ্যমে শামীম ওসমানের রাজনীতি ঢুকেন তিনি। সে সময় শামীম ওসমান তাকে কাশীপুরের স্থানীয় হওয়ায় সাদরে গ্রহণ করে কাশীপুরের আওয়ামী লীগের সাইফুল্লাহ বাদলের সাথে রাজনীতি করতে বলে। 

 

ওই সময় তিনি রাজনীতিতে ভর করেই তার জমি ব্যবসা অনেকটাই শক্তিশালী করতে থাকে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় চলে আসলে তিনি কিছু বিএনপি নেতাদের সাথে যোগসাজস করে আতাঁতের মাধ্যমে তার জমি ব্যবসা অব্যহৃত রাখেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩০টি আসন লাভ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এককভাবে সরকার গঠন করে। এর পর থেকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি এই আশরাফুল আলমকে।

 

 তিনি বাদলের পিছনে পিছনে থেকে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বহু সাধারণের জমি লিখে নিয়েছেন। একই সাথে ২০১৪ সালে ব্যবসায়ী ও আওয়ামী-লীগ নেতা জলিল হত্যাকান্ডে প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন মো.আশরাফুল আলম। যিনি একসময়ে জামাতের নেতা থাকলেও বর্তমানে তিনি থানা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি এবং কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কার্যকরী সদস্য। মূলত জায়গা নিয়ে জলিলের সাথে সমস্যা হয়েছিলো এই আশরাফুলের। 

 

পরবর্তীতে চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ বাদলের বাসায় একটি বিচার হয়। আশরাফুল বাদলের সহযোগী হওয়ায় বিচার পুরোই আশরাফুলের পক্ষে আসে যাকে ঘিরে জলিল সেখান থেকে রাগ হয়ে চলে গেলে এর পরের দিনই জলিল নিখোঁজ হয়ে পরে। কয়েকদিন পর বস্তাবন্দি জলিলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে সেই মামলায় কয়েখ লাখ টাকার বিনিময়ে বেঁচে যান তিনি। পরবর্তীতে জলিল হত্যাকান্ডে নিহতের মা ছিলেন মামলার বাদী। সেই মামলায় আমিন নামের এক ব্যবসায়ীকে এই আশরাফুল ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে খারাস করে দেন। পুত্র সন্তানের হত্যাকান্ডের সুবিচার না পাওয়ার যন্ত্রনায় তিনি মৃত্যুবরন করলে নিহত জলিলের স্ত্রীর সাথে আপোষ-মিমাংশা করা হয় উক্ত মামলাটি। 

 

যা বর্তমানে আবারো গর্জে উঠার আশা পাওয়া যাচ্ছে।  অপর দিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকায় চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ বাদলের শেল্টারে কাশীপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ কমিটি কুক্ষিগত করে রেখেছেন এই কথিত সহ-সভাপতি আশরাফুল আলম। এমনকি কবরস্থানের জায়গা বিক্রি, জমি কিনাসহ বর্তমানে রেজিস্ট্রেশনের টাকা কোনটিরই হিসাব নেই। আর থাকলে ভুলভাল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এদিকে বছর জুড়ে ঈদগাহ-মসজিদ-কবরস্থানের নামে টাকা তুলে শুধু ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় ভূয়া হিসেবে দেখিয়ে এতোদিন ঠান্ডা রেখেছিলেন কাশীপুরবাসীকে। তা এর আগে ও মসজিদ ৩ তলা পর্যন্ত করাকে কেন্দ্র করে লুটে নিয়েছেন টাকা। বর্তমানে কারো সাথে কোন যোগসাজস না করেই মিনারের কাজ করছে। 

 

সূত্র মতে জানা যায়, ১৫ বছরে ঈদগাহে এর কথা বিক্রি করে প্রায় ১০ কোটি টাকার ও অধিক টাকা বানিজ্যে করেছেন এই আশরাফুল আলম। এর আগে কাশীপুর খিলমার্কেট এলাকায় রাস্তার কাজে টাকার সংখ্যা বেশি দেখাতে কাশীপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ এর মাঠে জায়গা ভাড়া হিসেবে রাস্তার যাবতীয় মালামাল যেমন ইট, বালু, পাথর রেখেছিলেন এমনকি কোন অনুমতি ছাড়াই সেখানে পিচ ডালাই দেওয়ার আলকাতা দিয়ে পিচ-পাথর পুড়েছিলেন সেই হিসেবে রাস্তার কাজের টাকা থেকে টাকা ও কেটে রেখেছিলেন সেটা ও হিসাববিহীন। 

 

তা ছাড়া ও দেওভোগ হাজী উজির আলী স্কুলে এই আশরাফুল স্যার নিয়োগে বানিজ্যে, ভবন তৈরিতে বানিজ্যে, জোরপূর্বক টিউশনির নামে বানিজ্যেসহ বহু অপকর্মের হোতা ছিলেন এই আশরাফুল আলম। এ ছাড়া ও বর্তমানে অবৈধ প্রন্থায় শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই আশরাফুল। এমনকি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে দমাতে কিছু ব্যবসায়ীকদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্রের জোগান ও দিয়েছিলেন এই আশরাফুল আলম। এই জমি খেকো আশরাফুল আলমের সঠিক বিচার দাবী করছেন এলাকাবাসী।

এই বিভাগের আরো খবর