সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

বাড়তি ভাড়ায় ইজিবাইক যাত্রীদের ক্ষোভ

আবু সুফিয়ান

প্রকাশিত: ৯ জানুয়ারি ২০২৩  

 

ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কের পঞ্চবটী হতে মুক্তারপুর পর্যন্ত সকল স্থানের অটো বা ইজিবাইকের বাড়তি ভাড়ায় অটো রিক্সার যাত্রীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অটো রিক্সা মালিকদের হঠাৎ এরকম সিদ্ধান্তে বিপাকে পরেছেন পঞ্চবটী-মুক্তারপুরের অটো রিক্সার সাধারণ যাত্রীসহ বিসিক শিল্পাঞ্চল-এর লক্ষাধিক পোষাক কর্মী।

 

 

আজ শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি সরেজমিনে পঞ্চবটী-মুক্তারপুরের অটো রিক্সা গুলোতে দেখা যায় বাড়তি ভাড়ার তালিকা সম্বলিত তালিকা। ভাড়ার তালিকা এবং অটো চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল (৫ জানুয়ারি) থেকে এ বাড়তি ভাড়ায় চালকরা যাত্রী তুলছেন।

 

 

এই সড়কের অটো রিক্সার চালক রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২ জানুয়ারি ইজি বাইক মালিক, ড্রাইভার এবং গ্যারেজ মহাজন ঐক্য মাইক যোগে বাড়তি ভাড়ার ব্যাপারে যাত্রীদের জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাড়তি ভাড়ার ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ভোলাইলে গিয়ে গ্যারেজে কথা বলতে বলেন।

 

 

অটো চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অটো রিক্সা মালিক এবং গ্যারেজ মালিকরা এই রুটের ভাড়া বাড়িয়েছেন। ইজি বাইক মালিক, ড্রাইভার এবং গ্যারেজ মহাজন ঐক্যের বাড়তি ভাড়ার তালিকার স্টিকারে দেখা যায়, পঞ্চবটী-মুক্তারপুর ব্রিজের ওপারের বর্তমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ টাকা।

 

 

আগের ভাড়া ছিল ৪০ টাকা। পঞ্চবটী- মুক্তারপুর ব্রিজের এপারের ভাড়া ৩৫ টাকা, আগের ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। পঞ্চবটী-ভোলাইল বর্তমান ভাড়া ১৫ টাকা, যার আগের ভাড়া ছিল ১০ টাকা। পঞ্চবটী-হাটখোলার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা, আগের ভাড়া ১৫ টাকা ছিল। পঞ্চবটী থেকে ফকির বাড়ির আগের ভাড়া ছিল ২০ টাকা, বর্তমান ভাড়া ২৫ টাকা। পঞ্চবটী-কাঠপট্টি বর্তমান ভাড়া ৩০ টাকা, যার আগের ভাড়া ছিল ২৫ টাকা।

 

 

এদিকে পঞ্চবটী-বিসিকের আগের ভাড়া ছিল ৫ টাকা, এই ভাড়া এখন দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১০ টাকা করা হয়েছে। ভোলাইল-বিসিকের বর্তমান ভাড়া ১০ টাকা। এদিকে বিসিক টু হাটখোলা ১৫ টাকা, ভোলাইল টু কাশিপুর কাউন্সিল ১০ টাকা। আবার ভোলাইল মিষ্টির দোকান থেকে নরসিংপুর স্কুল ১৫ টাকা এবং একই পয়েন্ট থেকে বক্তাবলী ঘাট ১৫ টাকা।

 

 

লাইসেন্স বিহীন ইজি বাইক মালিক, ড্রাইভার এবং গ্যারেজ মহাজন ঐক্যের বর্তমান বাড়তি ভাড়ার তালিকা থেকে দেখা যায়, পঞ্চবটী থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত প্রতিটি পয়েন্টে যাত্রীদের কাছ থেকে ৫ টাকা করে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অটো রিক্সার চালক বলেন,“ আমরা ভাড়ায় অটো চালাই। গ্যারেজ মালিক যেভাবে আমাদের বলে আমরা সেটাই করকে বাধ্য। গ্যারেজ মালিকদের কথার বাইরে চললে আমরা তাদের অটো চালেতে পারবো না। তাই আমরা বাধ্য হয়েই গ্যারেজ মালিকদের সিদ্ধান্ত মেনে নেই।

 

 

আরেক অটো রিক্সার চালক বলেন, বর্তমান সবকিছুরই দাম বেড়ে গেছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ বিলে বেড়ে গেছে। তাই অটো রিক্সার ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু অটো চালকদের এরকম যুক্তি মানতে নারাজ এই রুটের অটো রিক্সার যাত্রীরা। যাত্রীরা বলছেন, পঞ্চবটী থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত প্রতিটি পয়েন্টের আগের ভাড়াই ছিল অতিরিক্ত। যাত্রীরা এই অতিরিক্ত ভাড়া দিতে দিতে অভ্যস্ত হয়েছে বিধায় বাড়তি ভাড়াই কায়েম হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বেশির ভাগ যাত্রী।

 

 

শিল্প অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় বাড়তি ভাড়ায় সব থেকে বেশি সমস্যায় পরছেন বিসিকের পোষাক কর্মীরা। বাড়তি ভাড়ার ব্যাপারে কথা হয় বিসিকের পোষাক কর্মী দেলোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, “বিসিক এলাকায় ঘর ভাড়া বেশি বিধায় পঞ্চবটীতে কম টাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকি। প্রতিদিন কারখানায় কাজ শেষে বিসিক থেকে ৫ টাকা ভাড়া দিয়ে পঞ্চবটী যাই। গত দুই দিন ধরে ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকায় দ্বিগুণ হলে পায়ে হেটেই যেতে হচ্ছে। এতে প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে।

 

 

আরেক পোষাক কর্মী সোহেল বলেন, “৫ টাকার ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। এতে আমরা আর্থিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছি। আমরা চাই প্রশাসন যেন যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের বাড়তি ভাড়ার সমস্যাটি দূর করে দেন।” পঞ্চবটী থেকে মুক্তারপুর যাবেন শিমুল নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, “দুই দিন আগেও ৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে মুক্তারপুর গিয়েছিলাম। আজ হঠাৎ বাড়তি ভাড়ায় চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে।

 

 

আমার কাছে শুধু ৪০ টাকাই আছে। এখন মুক্তারপুর গিয়ে কারো কাছ থেকে ধার করে বাকি ৫ টাকা ভাড়া দিতে হবে।” পরিশেষে লাইসেন্স বিহীন এসব নাম মাত্র মালিক-চালক ঐক্যের বেপরোয়া ভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে গলা কাটা ভাড়া আদায়ের কারনে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন রকমের পদক্ষেপ না থাকায় আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। এমনই অভিযোগ বিসিক শিল্পাঞ্চল-এর লক্ষাধিক পোষাক কর্মীসহ সাধারণ যাত্রীদের। এমন সমস্যা থেকে বিসিক শিল্পাঞ্চল-এর পোষাক কর্মীসহ সাধারণ যাত্রীরা উত্তরণ চায়।
 

এই বিভাগের আরো খবর