শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

মাছের আঁশ রপ্তানি করে ২০০ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন

শ্রাবণী আক্তার

প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩  

 

মাছের আঁশ আমাদের কাছে ফেলে দেওয়া অপ্রয়োজনীয় বস্তু হলেও এই আঁশ রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকারও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। শুনতে অবাক লাগলেও অনেকেই এখন এই ব্যবসার সাথে জড়িত। আঁশ প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করা হচ্ছে জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ গুলোতে।  

 

নারায়ণগঞ্জ নগরীর ৩ নং মাছ ঘাটের মাছের আঁশ সংগ্রহকারী আতাউর রহমান জানান, প্রতিদিন ঘাটে যত মাছ কাঁটা হয় তার আঁশ যারা মাছ কাটেন তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। তারপর তা ধুয়ে পরিষ্কার করে সাইনবোর্ড পাঠানো হয়। প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০ কেজি আঁশ হয়ে থাকে তবে বাজার বুঝে কম বেশিও হয়। বিশেষ করে শুক্র আর শনিবারে ৮০-১০০ কেজির বেশি বা কাছাকাছি আঁশ পাওয়া যায়।

 

তিনি বলেন, আগে এই আঁশ ফেলে দিত এখন এই ফেলনা জিনিসই আমার ব্যবসার মূল উৎস। প্রতি কেজি কত টাকায় বিক্রি করেন এই প্রশ্নে তিনি জানান, কাঁচা (ভেজা) আঁশ প্রতি কেজি ৩০ টাকা যদি শুকিয়ে বিক্রি করলে ৪০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এখানে তো শুকানোর জায়গা নেই থাকলে লাভটা একটু বেশি হতো।

 

জানা যায়, বাংলাদেশে এ ব্যবসা প্রথম শুরু করেন ঢাকার শামসুল আলম নামে এক ব্যবসায়ী। যিনি তার জাপানি বন্ধুর কাছ থেকে পরামর্শ পেয়ে মাছের আঁশের ব্যবসা শুরু করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যবসায়ী মোঃ শামসুল আলমের আঁশের কারখানা এবং অফিস সাইনবোর্ডের গিরিধারায়। সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায় কারখানায় কর্মীরা কাজ করছেন।

 

কারখানার দায়িত্বে থাকা রহিমার সাথে কথা বললে তিনি জানান, দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে মাল (আঁশ) আসতে থাকে। শুধু নারায়ণগঞ্জ জেলা না সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া জেলার আঁশও এখানে আসে। আঁশ আসার পর আমরা ওজন দেই। এরপর পাথর, কণা, ময়লা, কাঁটা আলাদা করি। তারপর ২৫ কেজি করে প্যাকেট করি। এরপর এগুলো বিদেশে সাপ্লাই দেওয়া হয়।

 

কারখানায় কতজন কর্মী আছেন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এই কারখানায় ৬জন মহিলাকর্মী এবং ২জন পুরুষকর্মী আছে। ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ডিউটি করেন তারা। তিনি এখানে ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন বলেও জানান। সেখানে ব্যবসায়ী শামসুল আলমের সাথে দেখা না হলেও পরবর্তীতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তার সাথে কথা হয়।

 

আঁশ ব্যবসায়ী মোঃ শামসুল আলম জানান, তিনি সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মাছের বাজার থেকে আঁশ সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে আঁশ কিনেন। এরপর কারখানার শ্রমিকরা তা থেকে ময়লা পরিষ্কার করে। বায়াররা যেভাবে অর্ডার করে সে অনুযায়ী প্যাকেট করানো হয়। প্যাকেটজাত করার পর এগুলো বাহিরের দেশে যেমন জাপান, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকা যায়।

 

এই আঁশ দিয়ে বিদেশে কি কি তৈরি করা হয় প্রশ্নে তিনি জানান, আঁশ থেকে কোলাজেন তৈরি করা হয়। আঁশের উপরে যে আবরণটা থাকে তা মেশিনের সাহায্যে পরিষ্কার করে প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা হয় কোলাজেন। ওষুধ, প্রসাধনী সামগ্রী, ফুড সাপি¬মেন্ট তৈরিতে মাছের আঁশ ব্যবহৃত হয়।

 

জেনে নেই কোলাজেন আসলে কী?

কোলাজেন এক ধরনের প্রোটিন যা মানবদেহের এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে। এটা ত্বক, হাড়, পেশি, 'টেন্ডনস' ও 'লিগামেন্টস' গঠনে সহায়তা করে। যদিও দেহ প্রাকৃতিকভাবে কোলাজেন তৈরি করে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এবং সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে এর উৎপাদন হ্রাস পায়। মাছ থেকে তৈরি করা কোলাজেন দিয়ে ওষুধ, প্রসাধনী সামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্ট ইত্যাদি তৈরি করা হয়।

 

তিনি বলেন, প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার টন আঁশ রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ প্রতিবছর এই ব্যবসার মাধ্যমে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর