মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৭ ১৪৩১

মান্নানের শেল্টারে বেপরোয়া ভূমিদস্যু গোলজার

এম মাহমুদ:

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২৪  

সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম গোলজার হোসেন ভূইয়া। এছাড়াও গোলজার নামের সাথে ভূমিদস্যু ট্যাগও ইতিমধ্যে প্রতিস্থাপন হয়ে গিয়েছে। কেননা জামপুরে হিন্দু সম্প্রাদয়ের ভূমি দখল এবং জামপুর জুড়েই রয়েছে ভূমি দখলের জন্য তার বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী। এছাড়া হামলা,লুটপাট,ভাঙচুর,ডাকাতির উদ্দেশ্যে রয়েছে বিশেষ এক ডাকাত দল। তবে জামপুরে গোলজারের অপরাধের স্বার্গরাজ্য থাকায় আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলের জন্যই তার দরজা সর্বদা খোলা থাকত। কেননা আওয়ামীলীগের শাসন আমলেই বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকেও আওয়ামীলীগের সাথে আঁতাত করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৫আগস্টের পর বা এর পূর্ববর্তী সময়েও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান জামপুরে গোলজার হোসেন ভূইয়াকে শেল্টার দিয়ে জামপুর ইউনিয়নে এক মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠতে সহযোগীতা করছেন।

 

সূত্র বলছে, জামপুর ইউনিয়নের বস্তল এলাকায় মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে ভূমিদস্যুতার টাকার প্রভাবে গোলজার হোসেন আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নেতাদের নিজের পকেটে রেখে চলেছে। যার কারণে জামপুরের পাশ্ববর্তী এলাকা আড়াইহাজারের সাবেক সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুর সাথেও ছিল আঁতাত। এছাড়া সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম ভূইয়া ও জামপুর ইউপি চেয়ারম্যানের সাথেও ছিল গভীর সম্পর্ক গোলজারকে ছাড়া উন্নায়নমূলক কাজের উদ্বোধনেও করতেন তারা। তাছাড়া সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা বাবুল ওমর বাবুর সাথে ছিল বিশেষ সখ্যতা। আর এই বাবুর নির্বাচনে উপজেলা বিএনপির সমর্থন থাকবে এমন শর্ত সাপেক্ষ গোলজার হোসেন ভূইয়া মধ্যস্থতা করে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মান্নানকে ম্যানেজ করে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর টাকায় উপজেলা বিএনপির ইফতার মাহফিল করেন।

 

এছাড়া জামপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রেও গোলজার হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জামপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া। কখনো বিএনপি কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির উপর ভর ভূমি দখল কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকলেও গত ৫আগস্টের পর সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের শেল্টার পেয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনী ও ডাকাত বাহিনী দ্বারা ব্যাপক লুটপাট কায়েম করে জামপুর জুড়ে। লুটপাটের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, জামপুরের বস্তল বাজারের ডাক্তার বসু নামে এই হিন্দু লোকের ঔষধের দোকানে গোলজারের নির্দেশে তার ডাকাত বাহিনী মামুন,মনির,আলমগীর লুটপাট করে। এছাড়াও জামপুরের কলতাপাড়ার কাইলাটেক গ্রামের হাবিবুল্লাহ মিয়ার দুটি গরু ছিনিয়ে নিয়ে মাংস বিক্রি করে ফেলেন তার ডাকাত বাহিনীর সদস্য শাহপরান ও কামরুল। 

 

এছাড়াও দিনের আলোতে জামপুরের হোন্ডা বাহিনী দিয়ে ভীতি প্রদর্শন করে হামলা, লুটপাট,ভাঙচুরে লেলিয়ে দেন। অপরদিকে রাতের অন্ধকারের জামপুরের এশিয়ান হাইওয়ে ডাকাত বাহিনী দ্বারা ডাকাতি ও ছিনতাইয়েও মদদ দিয়ে থাকেন। এরমধ্যে গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গা ডাকা দিলে জামপুরের আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের শেল্টার দিয়ে এই গোলজারের নেতৃত্বে বিএনপির ব্যানারে নিয়ে এসছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর জামপুর ইউনিয়নের মালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন আয়োজিত মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে একটি সমাবেশ হয়। কিন্তু সেখানে গোলজারের নেতৃত্বে সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন বস্তল এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা গদা কালাম, যুবলীগ নেতা মফিজুল, আলী আকবর, লালন, খায়ের, শওকত তিলাবো এলাকার যুবলীগ নেতা দিপু, ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল, আলামিন, জাহিদ, লিখন, সফু, কলতপাড়া এলাকার যুবলীগ নেতা মনির ভূঁইয়া, শাহপরান, মনির হোসেন, বাসাবো এলাকার যুবলীগ নেতা নুরুজ্জামান, কালারটেকের যুবলীগ নেতা নজরুল, হাতুড়াপাড়া এলাকার যুবলীগ নেতা সেলিম, মহজমপুর কাজীপাড়া এলাকার আনোয়ার কাজী। 

 

কিন্তু আওয়ামীলীগের পতন হলেও বিএনপির রাজনীতির ট্যাগ ব্যবহার করে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন জামপুর ইউনিয়নের মূর্তিমান আতঙ্কর ভূমিদস্যু গোলজার হোসেন ভূইয়া। আর এই গোলজার আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে আরও বেপরোয়া করে তুলছেন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। তবে বিএনপি অধিকাংশের নেতাদের দাবি, মান্নানের আশকারায় দলীয় পদ পদবী না থাকলেও বিএনপির ট্যাগ ব্যবহার করে ভূমিদুস্য গোলজার জামপুরে বিএনপিকে বিতর্কিত করে তুলছেন। যার কারণে শীঘ্রই জামপুরের মূর্তিমান আতঙ্ক বহু অপকর্মের হোতা এই গোলজারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি তার সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। 

 

এই বিভাগের আরো খবর