শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

রিয়াদের হাতে জিম্মি ছাত্র-ছাত্রী সংসদ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৫ জুন ২০২৪  

 

 

# দীর্ঘদিন ধরে তোলারাম কলেজে নির্বাচন না হওয়াতে নতুন নেতৃত্ব বিকশিত হচ্ছেনা
# একটা ফ্রি সময় খুঁজে কলেজ কর্তৃপক্ষে সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন দেবো : অয়ন ওসমান  

 

সরকারি তোলারাম কলেজ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৭ সালে এই কলেজটি নারায়ণগঞ্জের প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সালের ১মার্চ কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে। কলেজটিতে বর্তমানে প্রায় ২৫শত শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু কলেজের ভেতরে শিক্ষার্থীদের রয়েছে নানা রকমের অভিযোগ। কলেজে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্র-ছাত্রী সংসদ থাকলেও তার কোন কার্যক্রম থাকে না।

 

কর্তৃপক্ষের পরামর্শে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার দেখবার করেন। ছাত্রলীগ ছাড়া এ কলেজে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম নেই বা থাকলেও দৃশ্যমান নয়। গত ২০ বছর ধরে এই কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সংসদে কোন নির্বাচন নেই। জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৪ সালের ১৬ অক্টোবর এককভাবে নির্বাচিত হন রাজীব-শাহ আলম পরিষদ কিন্তু সেই সময় ছাত্রলীগ নির্বাচনে অংশ নেননি। 

 

সেই সময় বিএনপি সরকারের আমলে রাজীব-শাহ আলম পরিষদই কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সংসদের নেতৃত্ব দেন। পরে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেই পরিষদের আর কাউকে কলেজের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় নি। কিন্তু বর্তমানে ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও কলেজে ছাত্র-ছাত্রী সংসদের কোন নির্বাচন নেই। এবিষয়ে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদে গত ২০ বছর ধরে কোন নির্বাচন নেই। 

 

গত ১০ বছর ধরে কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সংসদটি দখল করে রেখেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ। বর্তমানে তিনি সরকারি তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে রয়েছেন। গত ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের পক্ষে মাঠে না থাকায় মহানগর ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কেন্দ্র। তারপর থেকেই রাজনীতির মাঠে হাবিবুর রহমান রিয়াদের কোন পদ-পদবী না থাকলেও তিনি কলেজ শাখার ছাত্র লীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে চলেন। 

 

এ বিষয়ে আরও একজন শিক্ষার্থী জানান, তোলারাম কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী সংসদে নির্বাচন না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক দলগুলোর অনীহা অন্যতম কারন। দীর্ঘ দিন ধরে সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষার্থীরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কলেজটিতে বর্তমানে ছাত্রলীগের একক কর্তৃত্বের কারনে ছাত্র দল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ফ্রন্ট সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের কোন নেতাকর্মী দেখা যায় না। 

 

কলেজের সংসদের পুরোটাই দখল করে রেখেছেন হাবিবুর রহমান রিয়াদ। নির্বাচন ছাড়াই তিনি কলেজ শাখার ছাত্র লীগের সভাপতি। বর্তমান সংসদ সদস্য এ.কে.এম শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের ক্ষমতা ও নাম ব্যবহার করে কলেজের দাপট দেখিয়ে চলেন এই রিয়াদ। বতর্মানে তার হাতে জিম্মি ছাত্র-ছাত্রী সংসদ। বাহিরের কোন জনসভায় মিছিল মিটিং এ কেউ না গেলে রিয়াদ ভয় দেখিয়ে তাদের নিয়ে যায়। আমরা বর্তমানে এই কলেজটিতে কয়েকজনের জিম্ভায় রয়েছি। তাই অতি তারাতারি কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সংসদের নির্বাচন চাই। যাতে ভালো মনের মানুষ নির্বাচিত হয়ে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ায়।

 

এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের পুত্র একেএম অয়ন ওসমান যুগের চিন্তাকে বলেন, সংসদের নির্বাচনে দায়িত্ব হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষের। এখন বিগত ১০ বছরে আমাদের দেশে কি হয়েছে আপনারা একটু বিবেচনা করে দেখবেন। রাজনীতির প্রেক্ষাপট ছিলো না, অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৩ সালে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন সহ আরও অনেক কিছু হয়েছে। 

 

তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদ না শুধু ,আমাদের ছাত্র লীগের যে কমিটিগুলো ছিলো সেটিও দীর্ঘ ৫-৬ বছর পরে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। তাই সেটা ( কলেজ সংসদ নির্বাচন) নিয়েও বিবেচনা করে দেখছেন এবং আমাদেরও প্রশ্ন করেছেন কবে করলে ভালো হয়। বিগত ২-৩ বছরে স্থানীয় অনেকগুলো নির্বাচন গেছে, জাতীয় নির্বাচনও গেছে। তো এখন আমরা একটা ফ্রি সময় খুঁজে কলেজ কর্তৃপক্ষে সঙ্গে আলোচনা করে, আমাদের সাথে যদি একটা সমন্বয় করতে ইচ্ছুক হন তাহলে ঐ সময় আলোচনা সাপেক্ষে আমরা একটা নির্বাচন দেবো।

এই বিভাগের আরো খবর