শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ১৩ ১৪৩১

রূপগঞ্জে গাজী টায়ার্সে আগুন : তদন্ত প্রতিবেদনে নিখোঁজের বিষয়

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২৪  

রূপগঞ্জে গাজী টায়ার্সে অগ্নিসংযোগের তদন্ত প্রতিবেদনে ১৮২ জন নিখোঁজের বিষয়টি উঠে এসেছে। রোববার (২০ অক্টোবর) বিকেলে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়টি প্রকাশ পায়। এর আগে ১২ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে জেলা প্রশাসন। আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রীর গাজী টায়ারস কারখানায় হামলা, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগে ১৮২ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জানা গেছে। ২৫ অগাস্ট রাতে অগ্নিসংযোগের পর সকাল থেকেই আশপাশের এলাকার নিখোঁজদের স্বজনরা কারখানার ফটকে জড়ো হয়েছিলেন। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে প্রশাসন স্বজনদের কাছ থেকে নিখোঁজদের ছবি ও তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র রেখে নাম নিবন্ধন শুরু করে।

 

জেলা প্রশাসনের দাখিল করা প্রতিবেদনে ‘দুর্ঘটনায় আহত, ক্ষতিগ্রস্ত ও নিহতদের বিবরণ’ শিরোনামে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গেলে কারখানার বাইরে শ্রমিকরা নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধান করতে থাকেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকার জন্য কমিটি ১ সেপ্টেম্বর গণশুনানির আয়োজন করে। ওই দিন ৮০ জন নিখোঁজ ব্যক্তির তথ্য দেন স্বজনরা।

 

এছাড়া উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন তালিকা তৈরি করে। তালিকাগুলো একত্রিত করে ১৮২ ব্যক্তির নিখোঁজ থাকার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায়। তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন।

 

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক আগুনের সূত্রপাত ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে ২৭ আগস্ট তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমানকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ১২ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে ৩২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি দাখিল করেন কমিটির প্রধান। ওই ঘটনাকে প্রতিবেদনে নিছক দুর্ঘটনা নয়, ‘অগ্নিসংযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করা হলেও কারা ওই কাজ করেছে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের চিহ্নিত করা হয়নি।

 

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় পর্যায়ে গাজীর গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই দিন লোকজন আনন্দ মিছিল বের করে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খাদুন এলাকার খাঁ পাড়া জামে মসজিদ থেকে মাইকে কয়েকজন ব্যক্তি কারখানার ভেতরে যাদের জমি জোর করে দখল করা হয়েছে তাদের বিকেল ৩টার দিকে রূপসী বাসস্টেশনে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দেন।

 

বেলা ১২টার দিকে লুটপাট করার উদ্দেশ্যে ‘দুষ্কৃতকারীরা’ কারখানায় প্রবেশ করে। তারা কারখানার ভেতরে থাকা শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বের করে লুটতরাজ শুরু করে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আরেকদল ‘দুষ্কৃতকারী’ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কারখানায় প্রবেশ করে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে লুটপাটকারীদের একাধিক দলের মধ্যে কারখানার বাইরে ও ভেতরে বাকবিতণ্ডা ও সংঘর্ষ হয়।

 

পরে খাঁ পাড়া মসজিদ থেকে পুনরায় ‘গাজীর কারখানায় ডাকাত ঢুকেছে’ ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে তাদের প্রতিহত করার আহ্বান জানানো হয়। তাতে লুটপাট আরো বেড়ে যায়। লুটপাটকারীরা তখন কারখানা ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন তলায় ছড়িয়ে পড়ে এবং লুটপাট চালিয়ে যেতে থাকে।

 

আগুন দেয়ার ঘটনার পর কারখানার এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘দুপুর থেকে রাতে আগুন দেয়ার আগ পর্যন্ত টানা লুটপাট চলে। এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য সেখানে যাননি।’

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে লুটপাটকারীদের একটি দল ভবনের নিচতলায় আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে গেটের শাটারে তালা ঝুলিয়ে চলে যান। ওই সময় অনেকে ভবনটির উপরের অংশে লুটপাটে ব্যস্ত ছিলেন। ভবনটিতে দাহ্য পদার্থ থাকায় দ্রুত প্রতিটি তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

 

ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের টানা ২২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন পুরোপুরি নেভে পাঁচ দিন পর। দীর্ঘ সময় ধরে জ্বলতে থাকা আগুনে ভবনটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হওয়ায় সেখানে উদ্ধার অভিযান চালানো যায়নি।

 

প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। প্রথম সুপারিশে বলা হয়েছে ‘আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবনটি অপসারণের মাধ্যমে উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করা যায়। ভবনটি মালিকপক্ষকেই অপসারণ করতে হবে।’

 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেটি বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। ভবনটি ভাঙা হলে ভেতরে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। তবে ভবনটি ভাঙার কাজ করবে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে আমাদের কোনো সহযোগিতা লাগলে করব। কিন্তু ভবনটি তারা কবে ভাঙবেন এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কোনো সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি।’

 

তিনি বলেন, ‘ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে পুরোপুরিভাবে উদ্ধার অভিযান চালানো যায়নি। তবে যে ১৮২টি পরিবার তাদের স্বজনদের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে দাবি করছেন, তাদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জেলা পুলিশকে চিঠি দেয়া হবে।’

এই বিভাগের আরো খবর