মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

লাশের দাম দুই হাজার !

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২১  

#  লাশ দিতে চায় না ডোম- পুলিশ


# ই.এ খায় তাই টাকা নেয়-আরএমও


 

ইজিবাইক চালক রাজা। স্ত্রী মারা যাওয়ায় দিনে দুই সন্তানের দেখবাল করতেন আর রাতে চালতেন তার বাহনটি। হঠাৎ একটি ভোররাতে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন তিনি। তাকে ছুরিকাঘাত করে ও গলা কেটে হত্যার পর নিয়ে যাওয়া হয় ইজিবাইকটি।

 

পুলিশ রাজার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। কিন্তু সেখানে যে লাশের জন্য টাকা দিতে হয় তা জানতো না বাবা-মা হারা সন্তানেরা। অবশেষে ময়না তদন্তের পর ডোমকে টাকা দিয়ে বাবার লাশ নিতে হয় রাজার সন্তানদের। শুধু রাজা নয় এমন ঘটনা প্রায় প্রতিটি লাশের সাথে ঘটছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এক প্রকার হয়রানি করে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয় ডোম। একই অভিযোগ পুলিশেও। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সারা দেশের মর্গে থাকা ডোমদের একই অবস্থা।

 


চলতি বছরের ১৯ জুন নগরীর পৌর ওসমানী স্টেডিয়ামের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীরা রাজার ইজিবাইকটি ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করানোর যোগান ইজিবাইটি ছিনতাই কারীদের কাছ থেকে রক্ষা করতে গেলে রাজাকে ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে হত্যা করে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে ইজিবাইটি নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। সেখানে বাবার লাশ নিতে ছুটে যান দুই সন্তান সহ তাদের স্বজনরা। রাজার মতো এমন অনেকের স্বজন তাদের প্রিয় মানুষটি মারা যাওয়ার পর তাদের মরদেহ আনতে যান মর্গে। তবে সেখানে তাদের লাশ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয় ডোমকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে।  

 


নিহতের স্বজনরা জানান, প্রিয় মানুষটির মরদেহের খোঁজ পাওয়ার পর তারা ছুটে যান হাসপাতালের মর্গে। সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করানো হয় তাদের। এরপর ময়না তদন্ত শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার চলে গেলে লাশ কাটা ঘর থেকে ডোম অথবা তার সহযোগি বের হয়ে আসেন বাইরে। খোঁজ করেন কে নিতে এসেছে লাশ। তাকে বলা হয়, লাশ সেলাই করতে টাকা লাগবে। নয় তো তারা কাজ করবে না। শুরু হয় দরকষাকষি। এক পর্যায়ে তাদের চাহিদা মতো টাকার মিল হলে লাশের সেলাই করা হয়। এরপর টাকা নিয়ে মরদেহটি বুঝিয়ে দেয়ার সময় লাশ বহন করার নামে আরেক ধাপে টাকা আদায় করেন ডোমের সহযোগীরা।  

 


নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, যে কোন ঘটনায়ই পুলিশ লাশ মর্গে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে ডোম তাদের হয়রানি করে। ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয় একটি লাশের জন্য। তারপর মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হয়। একই অভিযোগ হাসপাতালে লাশ নিয়ে যাওয়া থানা পুলিশের সদস্যদেরও। তারা জানান, অজ্ঞাতনামা (বেওয়ারিশ) লাশ নিয়ে মর্গে গেলে সেখানে ময়নাতদন্তের পর তাদের কাছ থেকেও টাকা চায় ডোম। টাকা না দেয়া পর্যন্ত তারা লাশ দিতে চায় না। অনেকে হাসপাতালের চিকিৎসকের দ্বারস্ত হয়ে নিয়ে যান মরদেহ।

 


এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) আসাদুজ্জামান যুগের চিন্তাকে জানান, এ ধরনের ঘটনা সারা দেশের মর্গে। এ হাসপাতালের মর্গে একজন ডোম দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ই.এ (মদ) খেতে টাকা নেয় শুনেছি। তবে তার সাথে যারা সহযোগী রয়েছে তাদের বাইরে থেকে নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ডোমের সহযোগী সরকারিভাবে যাতে নেয়া হয় সেজন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে নিহতের স্বজনদের কাছে লাশ দেয়ার সময় ডোমের টাকা নেয়া বন্ধ হবে কিনা সে বিষয়ে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি তার কাছে।

 

এদিকে নাগরিক সমাজের কয়েকজন নেতা জানান, একজন মানুষ মারা যাওয়ার পর যদি তার লাশ নিয়ে হয়রানি করা হয় তাহলে এ ধরণের সংস্কৃতি সমাজের জন্য অতান্ত ভংকর। কারণ লাশের সেলাই করতে যদি দুই হাজার নেয়া হয়, তার মানে দাড়ায় ডোম একটি লাশের দাম নিচ্ছে দুই হাজার টাকা !। নাগরিক সমাজের নেতাদের দাবি, স্বাস্থ্য বিভাগের উচিত এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া।

এই বিভাগের আরো খবর