রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

লিংকরোডের কাজে ধীরগতি 

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০২৩  

 

# দফায় দফায় বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ
# সাথে বাড়ছে ব্যয় ও দুর্ভোগের মেয়াদও
# ওভারপাস নির্মাণেই ব্যয় করা হয় এক বছরের বেশি

 

 

শিল্প ও বাণিজ্যে সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম যোগাযোগ মাধ্যম হলো ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড। রাজধানী ঢাকাসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাথে নারায়ণগঞ্জের যে তিনটি সংযোগ সড়ক আছে তার মধ্যে এই সড়কটি সবচেয়ে নতুন হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। ৮ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এই সড়কের পাশে গড়ে ওঠেছে জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ও বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

 

যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (ডিসি অফিস), জেলা ও দায়রা জজ আদালত, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ, এলজিইডি’র কার্যালয়, জেলা নির্বাচন অফিস, পাসপোর্ট অফিস ও শিল্প পুলিশ-৪’র পুলিশ লাইনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।

 

এই সড়কটি ব্যবহার করার মতো উল্লেখ যোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে সাইনবোর্ড, মাহমুদপুর, কাজিবাড়ি, ভুঁইগড়, রূপায়ন টাউন, জালকুঁড়ি, ওসমান আলী স্টেডিয়াম, শিবু মার্কেট, চাঁনমারি ও চাষাঢ়া অন্যতম। অথচ আট কিলোমিটার এই সড়কটির প্রশস্তকরণ কাজে অতিবাহিত হতে চললো দীর্ঘ প্রায় তিন বছর। তারপরও শেষ হয়নি কাজ। কাজটি সম্পূর্ণ সম্পন্ন করতে আরও কতদিন সময় লাগবে তা-ও জানে না নারায়ণগঞ্জবাসী। দফায় বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদের, বাড়ছে নির্মার্ণ ব্যয়, তার সাথে বাড়ছে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা জনগণের দুর্ভোগ।

 

শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জেলা হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ জেলা। এক সময় এই জেলায় অবস্থিত নদী বন্দরটি দেশের প্রধান নদী বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল (বর্তমানে দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী বন্দর)। সে সময় নদী ও রেল পথই ছিল এই জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থা। তবে শিল্প ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এই জেলায় খুবই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন কল-কারখানার সংখ্যা। যা দেশের অর্থনীতিতে বড় আকারের ভূমিকা রাখছে। কেউ বলছে কাজ ধীর গতিতে চলছে, কেউ বলছে শামুক গতিতে চলছে, আবার কেউ বলছে কচ্ছপ গতিতে চলছে।

 

স্থানীয়দের মতে, দেশের অর্থনীতির কথা বিবেচনায় রেখে এই সড়কের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করায় গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিল। অথচ এই সড়কের যানবাহনগুলো ওভার পাস করার জন্য সড়কের ভুঁইগড়, জালকুঁড়ি ও শিবুমার্কেট পয়েন্টে যে ওভার পাস ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে সেই ব্রিজ তিনটি নির্মাণ কাজের মেয়াদই প্রায় দেড় বছর হতে চললো।

 

যার মধ্যে মাত্র একটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের কাজকে গুরুত্ব না দিয়ে অবহেলার অভিযোগ এনে তা খুবই হতাশাজনক বলে মনে করছেন তারা। যদিও জায়গা সমস্যা, বিদ্যুৎ খুটির সমস্যাসহ আরও একাধিক সমস্যার কারণে নির্মাণ কাজ দেরি হচ্ছে বলে (সওজ) থেকে জানানো হয়েছিল। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে চাষাঢ়া এলাকার বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে দেখা গেছে।

 

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সাথে ঢাকা ও অন্যান্য জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার জন্য ২০১৯ সালের ৮ জুলাই এই সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়। ২০১৯ সালের ৮ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়। পরে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

 

নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সূত্র মতে, ৪৪৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ১২৯টি ফুট প্রশস্তের মাধ্যমে সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৭ মাসের সময় বেধে দেওয়া হয়। যার ফলে ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। বিভিন্ন জটিলতার কারণে এই সময়ে মধ্যে কাজ সম্পন্ন শেষ হওয়ায় মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত কাজের মাত্র ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

 

এর মধ্যে ফুট ওভারব্রিজ, ডিভাইডারসহ ঢালাই কাজের অনেকটাই বাকি আছে বলে জানান তারা। তাই বাকি কাজ শেষ করতে আর কতদিন সময় ব্যয় করবে সেই বিষয় নিয়ে চিন্তিত নারায়ণগঞ্জবাসী। অথচ বারেবার মেয়াদ বৃদ্ধির সাথে সাথে একদিকে যেমন বেড়ে যাচ্ছে খরচ তারই সাথে মানুষের ভোগান্তিকেও টেনে বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

 

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি তারা।উল্লেখ্য এর আগে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট ই-জিপিতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেই দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেশের কয়েকটি পত্রিকা ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

 

সেই দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সার্বিক বিষয় যাচাই-বাছাই করে যৌথভাবে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে (৩৬৪ কোটি ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা) যৌথভাবে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিইএল), তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড (টিবিএল) ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড (এইচটিবিএল)কে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজে নিয়োগের সুপারিশ করে। ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এস.এ/জেসি


 

এই বিভাগের আরো খবর