রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

লিংক রোড প্রশস্তকরণ কাজে গতি নেই

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ৯ মার্চ ২০২৩  


# প্রতিদিন যানজটের কারণে ভোগান্তিতে শহরবাসী

# প্রশস্তকরণ কাজে সৃষ্ট ধুলবালিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে

# এই বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে : উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী
 

ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে নারায়ণগঞ্জ শহরবাসীর যাতায়াতের জন্য ঢাকা-পাগলা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-ডেমরা সড়ক দুটো ব্যবহার করা হতো। পরে ঢাকার সাথে নারায়ণগঞ্জ শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজতর করার জন্য শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ৮.১৫ কিলোমিটার একটি সংযোগ সড়ক করা হয়; যা লিংক রোড হিসেবে পরিচিত।

 

 

এই লিংক রোড তৈরি হওয়ার নারায়ণগঞ্জ শহর ও এর কাছাকাছি এলাকায় শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালতের সংখ্যা খুব দ্রুত গতিতে বেড়ে যাওয়ায় সেই হারে বেড়ে চলে যানবাহনের সংখ্যা। তবে ৫০ফুট প্রশস্তের সড়কটি দিয়ে ধারণ ক্ষমতার চেয়েও অনেক বেশি যানবাহন চলাচল করায় তা প্রশস্ত করা জরুরী হয়ে পড়লে সড়কটি ছয়লেনে উন্নীতকরণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

 

 

তবে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য ১৭ মাস সময় বেধে দিয়ে ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পরে কাজের ধীর গতির কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। তবে যে গতিতে লিংক রোডের কাজ চলছে তা এই মেয়াদেও শেষ করা সম্ভব হবে না বলে স্থানীয়দের অভিমত। আর বিভিন্ন সময় এর মেয়াদ বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে চলেছে শহরবাসীর ভোগান্তির পরিমান। 

 

 

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৮ জুলাই এই সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ৮ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়।

 

 

পরে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সূত্র মতে, সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

 

 

এতে সড়কটি প্রশস্ত হবে ১২৯ ফুট। এই প্রকল্পের আওতায় সড়কের তিনটি পয়েন্টে হবে আন্ডারপাস ও দুটি পয়েন্টে হবে ফুটওভারব্রিজ। সাইনবোর্ড ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে এবং শিবু মার্কেট, জালকুড়ি ও ভুঁইগড়ে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে।

 

 

এ সড়কের আশপাশের এলাকায় রয়েছে বিভিন্ন সরকারী বে-সরকারী অফিস, আদালত। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ সুপার, জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, জেলা পরিষদ, এলজিইডির কার্যালয়, জেলা কারাগার, জেলা নির্বাচন অফিস, পাসপোর্ট অফিস ও শিল্প পুলিশ-৪’র পুলিশ লাইনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

 

 

তাই এ সড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পরিণত হওয়ায় প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন চলাচল করায় সড়কটি সব সময়ই খুব ব্যস্ত থাকে। বর্তমানে রাস্তার প্রশস্তকরণের কাজের জন্য একদিকে নিত্যদিন তৈরি হচ্ছে যানজট অন্যদিকে যানবাহন চলাচলে সৃষ্ট ধুলাবালিতে নাকানী চুবানি খেতে হচ্ছে শহরবাসীকে। এরই মধ্যে এই ধুলাবালির কারণে বেশ কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

 

 

তবে কাজটি দ্রুত শেষ করার কোন উদ্যোগই দেখা যাচ্ছে না বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে সড়কের কাজে নিয়মিত পানি না দেওয়ার কারণে অতিরিক্ত ধুলাবালির তৈরি হওয়ার কারণে এখানে নিয়োজিত বেশ কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের পক্ষ হতে অভিযোগ করা হয়। 

 

 

স্থানীয় বাসিন্দা অরিফুল হক জানান, এখানকার কাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে তারা কোন প্রকার পরিকল্পনা ছাড়াই উন্নয়নের কাজ চালাচ্ছে। এর ফলে প্রতিদিন এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের জ্যামে বসে থাকতে হয়। এখান থেকে সৃষ্টি হওয়া ধুলোর কারণে বায়ু দূষণের সৃষ্টি হয়ে আমাদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সড়কে নিয়মিত পানি ছিটালে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এরকম ধীর গতিতে কাজ চললে আরও এক বছরেও শেষ করা যাবে না বলে মনে করেন তিনি। 

 

 

লিংক রোডের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং ধুলাবালির বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা যথা সম্ভব দ্রুত গতিতে কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে জুন থেকে কাজের মেয়াদের সময় বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হবে।

 

 

বর্তমানে এই প্রকল্পের ফান্ডে কিছু ক্রাইসেস আছে। তবে নিয়মিত পানি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন যেখানে ধুলা আছে সেখানে নিয়মিত পানি দেওয়া হচ্ছে। তবে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য একটি সড়কে দুই বেলা পানি দেওয়া হয়তো সম্ভব হচ্ছে না। তবে যেখানে যেখানে সমস্যা মনে হচ্ছে সেখানে ঠিকই পানি দেওয়া হচ্ছে।

 

 

আমরা আশা প্রকাশ করছি এই মার্চের মধ্যেই কার্পেটিংয়ের কাজ হয়ে যাবে। কার্পেটিংয়ের কাজ হয়ে গেলে আর এত ধুলাবালি থাকবে না। আমরাও চেষ্টা করতেছি যেন ধুলাবালি না হয়।  এন.হুসেইন/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর