সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন

সায়মুন ইসলাম

প্রকাশিত: ৬ জুলাই ২০২২  

 

# সমস্যার মূল কারণ গ্যাস সংকট : নির্বাহী প্রকৌশলী ডিপিডিসি

 

লোডশেডিং সমস্যা  বাংলাদশেরে সাম্প্রতকি সংকটরে নতুন এক সংযোজন। সারাদশেরে মতো নারায়ণগঞ্জবাসীও এ সমস্যায় জর্জরিত এবং অতিষ্ঠ। ২০১২ সালের আগে লোডশেডেংি শব্দটি খুবই পরচিতি থাকলওে ২০১৮ সালরে মধ্যে প্রায় লোডশেডিং শব্দটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিশষে করে নারায়ণগঞ্জরে মতো শিল্পাঞ্চল খ্যাত এলাকা থেকে তবে ২০২২ এ এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ খ্যাত দেশে এবং বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশে এইভাবে লোডশেডিং হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শহরবাসী। জুলাই মাসের শুরু থেকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ব্যাপকতা বেড়েছে। বিপিডিপি এর তথ্য অনুযায়ী , দেশের ৫২ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। জ্বালানী বিভাগ বলছে দেশের ৭০ ভাগ গ্যাস, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ গ্যাস সংকটের কারণেই যে এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট তা এসব তথ্য অনুযায়ী স্পষ্ট।


৩ জুলাই ২০২২ তারিখে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) থেকে এক বিজ্ঞপ্তি তে লোডশেডিং এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়,গ্যাসের স¦ল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় চাহিদার তুলনায় ডিপিডিসি কে কম বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ফলে ডিপিডিসির এলাকায় অনিচ্ছাকৃত লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন খুব শীঘ্রই এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এ ব্যাপারে ডিপিডিসি(পূর্ব) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম মোরশেদ যুগের চিন্তাকে জানান, লোডশেডিং সমস্যাটি শুধু নারায়নগঞ্জের সমস্যা না এটা সমগ্র বাংলাদেশের সমস্যা।  এই সমস্যার মূল কারণ গ্যাস সংকট।

 

তিনি বলেন, ডিপিডিসি তে বর্তমানে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে। তবে চাহিদা  অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় মূলত লোড শেডিং হচ্ছে। আর এই ঘাটতি নির্দিষ্ট নয়। চাহিদা সকালে একরকম তো বিকেলে অন্যরকম। কখনো ডিপিডিসি কে বলা হয় ৪০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দেয়ার জন্য। কখনো বলা হয় ৩০০ আবার কখনো বা ২৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে ডিপিডিসি যদি ১৬০০ মেগাওয়াট বরাদ্দ পায় তবে আর লোডশেডিং হবে না।  নারায়ণগঞ্জ জাতীয় অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেক্ষেত্রে এখানে লোডশেডিং হলে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে অর্থনীতিতে বিরূপ  প্রভাব পড়বে । সেক্ষেত্রে এখানে নিরবিছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন বিশেষ কোনো ব্যবস্থা এখানে রাখা হয়নি। আমাদের কাছে সব জায়গার গুরুত্ব সমান। এ পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভািবক হবে তা অনিশ্চিত।

 

লোডশেডিং নিয়ে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রথমে করোনা, পরে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। এর ফলে বিশ্ববাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণগুলোর দাম অত্যধিক হারে বেড়ে গিয়েছে। ডিজেলের দাম, তেলের দাম, এলএনজির দাম বেড়েছে। কয়লা প্রায় পাওয়াই যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণগুলো পরিবহনও ঠিকমতো হচ্ছে না। আগের মতো জাহাজ চলাচল করছে না। শুধু আমাদের দেশে না । প্রায় প্রতিটি দেশেই সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে সকলকে মিতব্যায়ী হওয়ার পরামর্শ দেন।


 
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফতুল্লা, খানপুর, চাঁনমারী, উকিলপাড়া, পাইকপাড়াসহ আশেপাশের এলাকায় লোডশেডিং এর কারণে অতিষ্ঠ সবাই। একে তো লোডশেডিং তার উপর তীব্র গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। নিয়ম করে দিন রাত মিলিয়ে ৫-৬ বার  লোড শেডিং হচ্ছে।


 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গার্মেন্ট এর পরিচালক বলেন, লোড শেডিং এর কারণে তাদের উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। অতিরিক্ত গরমে শ্রমিকরা কাজ ঠিকমতো করতে পারছে না। তাদের বসে থাকতে হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই ছুটি দিতে বাধ্য হচ্ছে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ। ফলে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। অনেকে বাধ্য হয়ে জেনারেটর দিয়ে কাজ চালু রাখছে। তবে ডিজেলের উচ্চ দামের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গার্মেন্ট শিল্প।

 

রিপন নামের এক শপিংমল ব্যাবসায়ী জানান, লোডশেডিং এর কারণে আমরা অতিষ্ঠ। আমাদের বিক্রি কমে গিয়েছে। গরমের কারণে দোকানেও বসে থাকা যাচ্ছে না।

 

খাঁনপুর হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, কয়েকদিনের বিদ্যুৎ বিভ্রাটে আমরা চিকিৎসকরা এক অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে আছি। মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে রোগী দেখতে গিয়ে বিদ্যুৎ চলে গেলো অথবা  অপারেশন এর টেবিলে বিদ্যুত চলে গেলো, তখন রোগী , ডাক্তার উভয়কেই সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আবার বিভিন্ন পরীক্ষা করানোর সময় বিদ্যুৎ গেলে তখন সময়ক্ষেপন হয়।

 

এই হাসপাতালের এক রোগীর স্বজন জানান, আমি আমার  মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেছি ৪ দিন হলো। এই ৪ দিনের লোডশেডিং এর কারণে আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার মেয়ের অবস্থা তো আরোও আশংকাজনক।

 

আমলাপাড়া এলাকার এক বাসিন্দা জানান, সামনে আমার মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা। কিন্তু গত কয়েকদিনের বিদ্যুত সমস্যার কারণে সে ঠিক মতো পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না। কয়েক দফা  বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে ঠিক মতো ঘুমও হচ্ছে না। আমার মেয়ের সন্তান হয়েছে কয়েকদিন হলো। সে সন্তান বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তিনি এটার সমাধান প্রত্যাশা করছেন অতি শীঘ্রই। নারায়ণগঞ্জবাসী সহ গোটা দেশ তাকিয়ে আছে সরকার কি পদক্ষেপ নিবে, কি সিদ্ধান্ত নিবে এর উপর।এমই/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর